মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আগামী ৬ ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদের (Babri Masjid) ভিত্তি স্থাপনা ঘোষণা করে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীর। একদিকে বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বহরমপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা, অপর দিকে সভার ময়দানে হাজির হয়ে জানতে পারলেন তিনি তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। ঘটনার দিন ঠিক সভার আগেই কলকাতার তৃণমূল ভবনে যিনি সাংবাদিক সম্মলেন করে এই কথা ঘোষণা করেছেন তিনি আর কেউ নন কলকাতা মেয়র ববি হাকিম। এই ইস্যুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “তৃণমূলের নির্দেশেই উগ্র রাজনীত করছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ূন কবীর।” তবে হুমায়ূনের নিশানা ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। তিনি তোপ দেগে বলেন, “আগামীতে এই আরএসএস মার্কা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে সরাসরি বিজেপির কেউ মুখ্যমন্ত্রী হোক আমি স্বাগত জানাব।”
আলাদা দল হলে তৃণমূলের ভোট কাটবে (Murshidabad)
ভরতপুরের (Murshidabad) সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীর প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “তৃণমূল সুপ্রিমো হুমায়ুন কবীরকে বাবরি মসজিদ (Babri Masjid) নির্মাণের জন্য উস্কানি দিচ্ছেন কিনা কিংবা তাঁর পিছনে রয়েছেন কিনা, সেটাও তো জানতে হবে। আমরা কারোর ভরসায় বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আনতে চাই না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে জাতীয়তাবাদী, বিকাশবাদী, সুশাসন, সুরক্ষা, পেটে ভাত, হাতে কাজ, মাথায় ছাদ, নারীর সম্মান, নারীর সুরক্ষা। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য একুশটি রাজ্যে বিজেপির সরকার রয়েছে এবং বিহারেও দল বিপুল জয় পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির ক্ষমতায় আসা দরকার।” অপর দিকে মমতা নিজের সভায় নাম না করে হুমায়ূনকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ভোটের আগে কেউ কেউ টাকা খেয়ে বিজেপির তাবেদারি করছে।” তবে শুভেন্দু সরাসরি না বললেও ইঙ্গিত দেন, হুমায়ূন যদি আলাদা দল গড়েন তাহলে তৃণমূলের ভোট কাটলে বিজেপির কিছুটা সুবিধা হলেও হতে পারে।
আইএসআই কী সাহায্য করছে?
উল্লেখ্য ২০২৪ সালের যখন রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়, সেই সময় মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন হুমায়ূন। তিনি সাফ বলেছিলেন, “আমি হুমায়ূন, বাবরের ছেলে তাই আমাকে এই কাজ করতেই হবে। ৬ ডিসেম্বর, রেজিনগর (Murshidabad) থেকে বেলডাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করব। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপথ অবরুদ্ধ করবে। মসজিদ গড়বই।” সম্প্রতি ওয়াকফের নামে সামশেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ানে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। চলেছে খুন-ধর্ষণ। ঘরা ছাড়া হয়েছেন শয়ে শয়ে পরিবার। ঠিক তার পরে পরেই হুমায়ূন ইউনূসের বাংলাদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে বাংলাদেশের হিন্দুরা খুব ভালো আছেন বলে মন্তব্যও করেছিলেন। বাংলাদেশ এখন আইএসআই-এর খপ্পড়ে, একথা সবাই জানেন। আর তারপরেই বাবরি মসজিদ নিয়ে তোড়জোড়। রাজনৈতিক একাংশের মত হুমায়ূনকে পাকিস্তান মদত করছে।
হিন্দুদেরকে কেটে ভাগীরথীতে ভাসিয়ায়ে দেবেন
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীর বলেছিলেন, “মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু হিন্দুদেরকে কেটে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেবেন।” তখন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ব্যবস্থা নেননি। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম প্রকাশ্যে ‘দাওয়াত-ইসলাম’-এর প্রচার করে বলেছিলেন “যাদের জন্ম মুসলমান ঘরে হয়নি তারা দুর্ভাগা”। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা এক মুসলিম ধর্মের সমাবেশে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “হিন্দু ধর্ম গান্ধা ধর্ম।” কোনও মন্তব্যের জন্য কেউ ক্ষমা চাননি, সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে কোনও রকম আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ হয়নি।
বহিষ্কার আইওয়াশ?
তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের অঙ্কে মুসলিম ভোট একটি বড় বিষয়। তাই মুসলমানকে খুশি করতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তোষণের রাজনীতি করেন। এমনটাই বিজেপি বার বার অভিযোগ করে সরব হয়েছে রাজ্যে। উল্লেখ্য রাজ্যে ৬ ডিসেম্বর রামমন্দিরের ৫০০ বছরের জন-গণ আন্দোলনকে ছোট করতে সংহতি দিবস পালন করে ভোটের অঙ্ককে ঠিক রাখবেন বলে দাবি করেছে বিজেপি। ২০২৪ সালে অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা এবং উদ্বোধন নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলেন না মমতা। নিমন্ত্রণ পর্যন্ত স্বীকারও করেননি। একই ভাবে হিন্দুধর্মের মহাকুম্ভকে ‘মৃত্যু কুম্ভ’ বলে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। ফলে যে মুখ্যমন্ত্রী ধুলিয়ানে (Murshidabad) মৌলবাদীরা ওয়াকফের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে কোনও অ্যাকশেন নেননি, তিনি হুমায়ূনকে বাবরি ইস্যুতে (Babri Masjid) বহিস্কার করে কি আইওয়াশ করলেন? রাজনীতির একাংশের মানুষ অবশ্য এমনটাই মনে করছেন।

Leave a Reply