মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত বন্দে মাতরম (Vande Mataram) গানের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সংসদে চলছে বিশেষ আলোচনা পর্ব। সোমবার সূচনা ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন রাজ্যসভায় ভাষণ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। তিনি বলেন, “বঙ্কিমের গানের ভিত্তিভূমি ছিল ভারতের আধ্যাত্মিক ও সংস্কৃতি রাষ্ট্রভক্তি। দেশকে মা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ব্রিটিশরা যখন বিদেশী সংস্কৃতিকে আমদানি করেছিল সেই সময় বঙ্কিমচন্দ্র ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ মন্ত্রের জাগরণ ঘটান। গানে যদুনাথ ভট্টাটার্যের সুর দেওয়ারও ১৫০ বছর হয়েছে।” একই ভাবে লোকসভায় তিনি সোজাসুজি কংগ্রেসকে তোপ দেগে বলেন, “যে গান গাইলে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের বন্দি করত, ১৯৭৫ সালে সেই বন্দে মাতরম গান গেয়েই প্রচুর লোককে জেলে ঢুকিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাই যাঁরা গানের গুরুত্ব বুঝবেন তাঁদের আত্ম সমালোচনা করা উচিত।”
দেশব্যাপী বিরাট আলোড়ন (Vande Mataram)
রাজ্যসভায় বন্দে মাতরম (Vande Mataram) গানের সর্বভারতীয় জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গে অমিত শাহ (Amit Shah) বলেন, “একথা সত্য বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন ভারতের বঙ্গভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আনন্দমঠের উৎপত্তিও বঙ্গভূমিতেই। গান প্রকাশিত হওয়ার বছর ত্রিশের মাথায় সারা দেশব্যাপী বিরাট আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। এমনকি, দেশের বাইরেও এই গান ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও বন্দে মাতরম গান সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। আমাদের সেনা বাহিনী যেকোনও অভিযানে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে থাকেন। এমনকি কোনও সেনা নিহত হলেও বন্দেমাতরম গানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।”
আধ্যাত্মিক রাষ্ট্রবাদের পাঠ
বন্দে মাতরম (Vande Mataram) গানের আলোচনার প্রাসঙ্গিতাকে তুলে ধরে তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের পক্ষে থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে লোকসভায়। অভিযোগ, সামনেই পশ্চিমবঙ্গে ভোট তাই ইতিহাসকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা হচ্ছে। কিন্তু রাজ্যসভায় বিরোধীদের অভিযোগকে তুলোধনা করে অমিত শাহ (Amit Shah) বলেন, “বন্দে মাতরম স্বাধীনতার সময়ে যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল বর্তমান সময়েও একই ভাবে প্রাসঙ্গিক। কেউ কেউ বাংলার ভোটের সঙ্গে যুক্ত করে গানের গুরুত্বকে ছোট করছেন। ভারতের এই সংসদ বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী বহন করে চলেছে। এবার বন্দে মাতরম গানকে চিরস্মরণীয় করতে এই আলোচনা। আগামী প্রজন্মকে আধ্যাত্মিক রাষ্ট্রবাদের পাঠ দিতে এই গানের বিরাট ভূমিকা পালন করবে।”
স্বাধীনতার মন্ত্র
অমিত শাহ ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম খারাপ দিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে তোপ দেগে বলেন, “ব্রিটিশ শাসনে শুধু রাজনৈতিক আগ্রাসন ছিল না, এক নতুন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তৈরি করতে চেয়েছিল। আর সেই সময় ভারতীয় সংস্কৃতির ঢাল হয়ে বঙ্কিম রচনা করেন বন্দে মাতরম। তবে তখনকার সময়ে কোনও সামাজিক মাধ্যম ছিল না। শাসকরাও ব্যাপক বাধা দিয়েছিল। এই গান মন্ত্ররূপে সমস্ত জনমানসের মনকে স্পর্শ করে শিহরিত করে তুলেছিল। তাই কীভাবে ভারত মায়ের মুক্তির স্লোগান হয়ে উঠেছিল তাও আগামী প্রজন্মের মানুষকে জানতে হবে। স্বাধীনতার মন্ত্র ছিল এই গান (Vande Mataram)।”
তবে এই বঙ্কিমচন্দ্রের গানকে চরম আঘাত হেনেছিল কংগ্রেস নেতৃত্ব। বন্দে মাতরম গানের যখন সুবর্ণজয়ন্তী সেই সময় পণ্ডিত নেহরু গানকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। গানের শব্দ বুঝতে অভিধানের ব্যবহার করতে হয়েছিল। নেহরু সাফ জানান গানে হিন্দু দেবদেবীর উল্লেখ রয়েছে তাই মুসলিম সমাজের জন্য পরিপন্থী। অমিত শাহ বলেন, “গানকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন জওহরলাল নেহরু। গানের মহিমাকে ক্ষুণ্ণ করেছে কংগ্রেস। সেখান থেকেই শুরু তোষণ, আর তার পরবর্তীতে হয় দেশভাগ।”
দেবী সরস্বতী, লক্ষ্মী, দুর্গা তিন রূপই ভারত
১৯৭৫ সালে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। গানের যখন শতবর্ষ পূর্ণ হয় সেই সময় দেশে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তিনি। বন্দে মাতরম (Vande Mataram) স্লোগান দেওয়া, গান গাওয়া ভারতীয়দের জেলে ভরে ছিলেন। এই গানের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও কালেই আত্মিকতা ছিল না। তাই অমিত শাহ (Amit Shah) বলেন, “আমাদের দেশ অনন্য অসাধারণ। ভারত একমাত্র এমন দেশ যে দেশের সীমান্ত সংস্কৃতি দিয়ে ঘেরা। আমাদের দেশের প্রত্যেক মানুষ এক সুতোতে গাঁথা রয়েছে। আর তাই একতার প্রতীক বন্দে মাতরম। বঙ্কিমবাবু একবার চিঠি লিখে বলেছিলেন আমার সব সাহিত্যকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিলেও কোনও অসুবিধা নেই। কেবলমাত্র বন্দে মাতরম গান অনন্তকাল ধরে চলবে। এই গানকে ঋষি অরবিন্দ বলেছিলেন নতুন ধর্মমত। ভারত আবার পুনঃনির্মিত হবে। বঙ্কিমের স্বপ্ন স্বার্থক হয়েছিল। ভারত শুধু কয়েক হাত জমি নয়, ভারত ভূমি হল মায়ের স্বরূপা। দেবী সরস্বতী, লক্ষ্মী, দুর্গার তিন রূপই ভারত মাতা। আমাদের সমৃদ্ধি, সুরক্ষা, জ্ঞান সবটাই ভারত মায়ের কৃপা। বিরাট সংকল্প ছিল ভারতের এই গানে।”

Leave a Reply