৪৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১২ই এপ্রিল
সত্যকথা কলির তপস্যা — ঈশ্বরকোটি ও জীবকোটি
একজন ভক্ত—মহাশয়, নব-হুল্লোল বলে এক মত বেরিয়েছে। শ্রীযুক্ত ললিত চাটুজ্যে তার ভিতর আছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—নানা মত আছে। মত পথ। কিন্তু সব্বাই মনে করে, আমার মতই ঠিক — আমার ঘড়ি ঠিক চলছে।
গিরিশ (মাস্টারের প্রতি)—পোপ কি বলেন? It is with our judgements ইত্যাদি১।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—এর মানে কি গা?
মাস্টার—সব্বাই মনে করে, আমার ঘড়ি ঠিক যাচ্ছে, কিন্তু ঘড়িগুলো পরস্পর মেলে না।
শ্রীরামকৃষ্ণ—তবে অন্য ঘড়ি যত ভুল হউক না, সূর্য কিন্তু ঠিক যাচ্ছে। সেই সূর্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হয়।
একজন ভক্ত—অমুকবাবু বড় মিথ্যা কথা কয় (Kathamrita)।
শ্রীরামকৃষ্ণ—সত্যকথা কলির তপস্যা। কলিতে অন্য তপস্যা কঠিন। সত্যে থাকলে ভগবানকে পাওয়া যায়। তুলসীদাস বলেছে, ‘সত্যকথা, অধীনতা, পরস্ত্রী মাতৃসমান—এইসে হরি না মিলে তুলসী ঝুট জবান্।’
“কেশব সেন বাপের ধার মেনেছিল, অন্য লোক হলে কখনও মানতো না, একে লেখাপড়া নাই। জোড়াসাঁকোর দেবেন্দ্রের সমাজে গিয়ে দেখলাম, কেশব সেন বেদীতে বসে ধ্যান করছে। তখন ছোকরা বয়েস। আমি সেজোবাবুকে বললাম, যতগুলি ধ্যান করছে এই ছোকরার ফতা (ফাত্না) ডুবেছে,—বড়শির কাছে মাছ এসে ঘুরছে।
“একজন—তার নাম করবো না—সে দশহাজার টাকার জন্য আদালতে মিথ্যা কথা কয়েছিল। জিতবে বলে আমাকে দিয়ে মা-কালীকে অর্ঘ্য দেওয়ালে। আমি বালকবুদ্ধিতে অর্ঘ্য দিলুম! বলে, বাবা এই অর্ঘটি মাকে দাও তো!”
ভক্ত—আচ্ছা লোক!
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কিন্তু এমনি বিশ্বাস আমি দিলেই মা শুনবেন!
ললিতবাবুর কথায় ঠাকুর বলিতেছেন —
“অহংকার কি যায় গা! দুই-এক জনের দেখতে পাওয়া যায় না। বলরামের অহংকার নাই। আর এঁর নাই!—অন্য লোক হলে কত টেরী, তমো হত—বিদ্যার অহংকার হতো। মোটা বামুনের এখনও একটু একটু আছে! (মাস্টারের প্রতি) মহিম চক্রবর্তী অনেক পড়েছে, না?”
মাস্টার—আজ্ঞা হাঁ, অনেক বই পড়েছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—তার সঙ্গে গিরিশ ঘোষের একবার আলাপ হয়। তাহলে একটু বিচার হয়।
গিরিশ (সহাস্যে)—তিনি বুঝি বলেন (Kathamrita) সাধনা করলে শ্রীকৃষ্ণের মতো সব্বাই হতে পারে?
শ্রীরামকৃষ্ণ—ঠিক তা নয়,—তবে আভাসটা ওইরকম।
ভক্ত—আজ্ঞা, শ্রীকৃষ্ণের মতো সব্বাই কি হতে পারে?
Leave a Reply