Ramakrishna 509: “তিনি নানারূপে দর্শন দেন, কখন নররূপে, কখন চিন্ময় ঈশ্বরীয় রূপে, রূপ মানতে হয়, কি বল?”

ramakrishna-kathamrita-by-mahendranath-gupta-500th-copy

৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

প্রথম পরিচ্ছেদ

১৮৮৫, ১৩ই জুলাই

পূর্ণ, ছোট নরেন, গোপালের মা

“দৈবস্বভাব—দেবতার প্রকৃতি। এতে লোকভয় কম থাকে। যদি গলায় মালা, গায়ে চন্দন, ধূপধুনার গন্ধ দেওয়া যায়; তাহলে সমাধি হয়ে যায়!—ঠিক বোধ হয়ে যায় যে, অন্তরে নারায়ণ আছেন—নারায়ণ দেহধারণ (Ramakrishna) করে এসেছেন। আমি টের পেয়েছি।”

পূর্বকথা—সুলক্ষণা ব্রাহ্মণির সমাধি—রণজিতের ভগবতী কন্যা

“দক্ষিণেশ্বরে যখন আমার প্রথম এইরুপ অবস্থা হল, কিছুদিন পরে একটি ভদ্রঘরে বামুনের মেয়ে এসেছিল। বড় সুলক্ষণা। যাই গলায় মালা আর ধূপধুনা দেওয়া হল অমনি সমাধিস্থ। কিছুক্ষণ পরে আনন্দ,—আর ধারা পড়তে লাগল। আমি তখন প্রণাম করে বললুম, ‘মা, আমার হবে?’ তা বললে, ‘হাঁ!’ তবে পূর্ণকে আর একবার দেখা। তা দেখবার সুবিধা কই?

“কলা বলে বোধ হয়। কি আশ্চর্য অংশ শুধু নয়, কলা!

“কি চতুর!—পড়াতে নাকি খুব।—তবে তো ঠিক ঠাওরেছি!

“তপস্যার জোরে নারায়ণ সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ও-দেশে যাবার রাস্তায় রণজিত রায়ের দীঘি আছে। রণজিত রায়ের ঘরে ভগবতী কন্যা হয়ে জন্মেছিলেন। এখনও চৈত্রমাসে মেলা হয়। আমার বড় যাবার ইচ্ছা হয়!—আর এখন হয় না।

“রণজিত রায় ওখানকার জমিদার ছিল। তপস্যার জোরে তাঁকে কন্যারূপে পেয়েছিল। মেয়েটিকে বড়ই স্নেহ করে। সেই স্নেহের গুণে তিনি আটকে ছিলেন, বাপের কাছ ছাড়া প্রায় হতেন না। একদিন সে জমিদারির কাজ করছে, ভারী ব্যস্ত; মেয়েটি ছেলের স্বভাবে কেবল বলছে, ‘বাবা, এটা কি; ওটা কি।’ বাপ অনেক মিষ্টি করে বললে — ‘মা, এখন যাও, বড় কাজ পড়েছে।’ মেয়ে কোনমতে যায় না। শেষে বাপ অন্যমনস্ক হয়ে বললে, ‘তুই এখান থেকে দূর হ’। মা তখন এই ছুতো করে বাড়ি থেকে চলে গেলেন। সেই সময় একজন শাঁখারী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তাকে ডেকে শাঁখা পরা হল। দাম দেবার কথায় বললেন, ঘরের অমুক কুলুঙ্গিতে টাকা আছে, লবে। এই বলে সেখান থেকে চলে গেলেন, আর দেখা গেল না। এদিকে শাঁখারী টাকার জন্য ডাকাডাকি করছে। তখন মেয়ে বাড়িতে নাই দেখে সকলে ছুটে এল। রণজিত রায় নানাস্থানে লোক পাঠালে সন্ধান করবার জন্য। শাঁখারীর টাকা সেই কুলুঙ্গিতে পাওয়া গেল। রণজিত রায় কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্ছেন, এমন সময় লোকজন এসে বললে, যে, দীঘিতে কি দেখা যাচ্ছে। সকলে দীঘির ধারে গিয়ে দেখে যে শাঁখাপরা হাতটি জলের উপর তুলেছেন। তারপর আর দেখা গেল না। এখনও ভগবতীর পূজা ওই মেলার সময় হয়—বারুণীর দিনে (Kathamrita)।

(মাস্টারকে)—“এ সব সত্য।”

মাস্টার—আজ্ঞা, হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—নরেন্দ্র এখন এ-সব বিশ্বাস করে।

“পূর্ণর বিষ্ণুর অংশে জন্ম। মানসে বিল্বপত্র দিয়ে পূজা করলুম, তা হল না;—তুলসী-চন্দন দিলাম, তখন হল!

“তিনি নানারূপে দর্শন দেন। কখন নররূপে, কখন চিন্ময় ঈশ্বরীয় রূপে। রূপ মানতে হয়। কি বল?”

মাস্টার—আজ্ঞা, হাঁ!

গোপালের মার প্রকৃতিভাব ও রূপদর্শন

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কামারহাটির বামনী (গোপালের মা) কত কি দেখে! একলাটি গঙ্গার ধারে একটি বাগানে নির্জন ঘরে থাকে, আর জপ করে। গোপাল কাছে শোয়! (বলিতে বলিতে ঠাকুর চমকিত হইলেন)। কল্পনায় নয়, সাক্ষাৎ! দেখলে গোপালের হাত রাঙা! সঙ্গে সঙ্গে বেড়ায়!—মাই খায়!—কথা কয়! নরেন্দ্র শুনে কাঁদলে!

“আমি আগে অনেক দেখতুম। এখন আর ভাবে তত দর্শন হয় না। এখন প্রকৃতিভাব কম পড়ছে। বেটাছেলের ভাব আসছে। তাই ভাব অন্তরে, বাহিরে তত প্রকাশ নাই।

“ছোট নরেনের পুরুষভাব,—তাই মন লীন হয়ে যায়। ভাবাদি নাই। নিত্যগোপালের প্রকৃতিভাব। তাই খ্যাঁচা ম্যাঁচা;—ভাবে তার শরীর লাল হয়ে যায়।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share