৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
১৮৮৫, ১৩ই জুলাই
কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ ও পূর্ণাদি
বিনোদ, দ্বিজ, তারক, মোহিত, তেজচন্দ্র, নারাণ, বলরাম, অতুল
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মাস্টারের প্রতি— আচ্ছা, লোকের তিল তিল করে ত্যাগ হয়, এদের কি অবস্থা।
“বিনোদ বললে, ‘স্ত্রীর সঙ্গে শুতে হয়, বড়ই মন খারাপ হয় (Kathamrita)।’
“দেখো, সঙ্গ হউক আর নাই হউক, একসঙ্গে শোয়াও খারাপ। গায়ের ঘর্ষণ, গায়ের গরম!
“দ্বিজর কি অবস্থা! কেবল গা দোলায় আর আমার পানে তাকিয়ে থাকে, একি কম? সব মন কুড়িয়ে আমাতে এল, তাহলে তো সবই হল।”
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কি অবতার?
“আমি আর কি?—তিনি। আমি যন্ত্র, তিনি যন্ত্রী। এর (আমার) ভিতর ঈশ্বরের সত্তা রয়েছে! তাই এত লোকের আকর্ষণ বাড়ছে। ছুঁয়ে দিলেই হয়! সে টান সে আকর্ষণ ঈশ্বরেরই আকষর্ণ।
“তারক (বেলঘরের) ওখান থেকে (দক্ষিণেশ্বর থেকে) বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। দেখলাম, এর ভিতর থেকে শিখার ন্যায় জ্বল্ জ্বল্ করতে করতে কি বেরিয়ে গেল,—পেছু পেছু!
“কয়েকদিন পরে তারক আবার এল (দক্ষিণেশ্বরে)। তখন সমাধিস্থ হয়ে তার বুকে পা দিলে (Kathamrita)— এর ভিতর যিনি আছেন।
“আচ্ছা, এমন ছোকরাদের মতন আর কি ছোকরা আছে!”
মাস্টার — মোহিতটি বেশ। আপনার কাছে দু-একবার গিয়েছিল। দুটো পাশের পড়া আছে, আর ঈশ্বরে খুব অনুরাগ।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)— তা হতে পারে, তবে অত উঁচু ঘর নয়। শরীরের লক্ষণ তত ভাল নয়। মুখ থ্যাবড়ানো।
“এদের উঁচুঘর। তবে শরীরধারণ করলেই বড় গোল। আবার শাপ হল তো সাতজন্ম আসতে হবে। বড় সাবধানে থাকতে হয়! বাসনা থাকলেই শরীরধারণ।”
একজন ভক্ত — যাঁরা অবতার দেহধারণ করে এসেছেন(Kathamrita), তাঁদের কি বাসনা — ?
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — দেখেছি, আমার সব বাসনা যায় নাই। এক সাধুর আলোয়ান দেখে বাসনা হয়েছিল, ওইরকম পরি। এখনও আছে। জানি কিনা আর-একবার আসতে হবে।
বলরাম (সহাস্যে) — আপনার জন্ম কি আলোয়ানের জন্য? (সকলের হাস্য)
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)— একটা সৎ কামনা রাখতে হয়। ওই চিন্তা করতে করতে দেহত্যগ হবে বলে। সাধুরা চারধামের একধাম বাকী রাখে। অনেকে জগন্নাথক্ষেত্র বাকী রাখে। তাহলে জগন্নাথ চিন্তা করতে করতে শরীর যাবে।
গেরুয়া পরা একব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করিয়া অভিবাদন করিলেন। তিনি ভিতরে ভিতরে ঠাকুরের নিন্দা করেন, তাই বলরাম হাসিতেছেন। ঠাকুর অন্তর্যামী, বলরামকে বলিতেছেন — “তা হোক, বলুকগে ভণ্ড।”

Leave a Reply