Nepal: বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার পর নেপাল! গণবিক্ষোভে পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী ওলির, ছাড়ছেন দেশ? জল্পনা

Nepal in Turmoil PM KP Sharma Oli Resigns Amid Explosive Gen Z Protests

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার পর নেপাল। প্রবল গণবিক্ষোভের জেরে পদত্যাগ করলেন নেপালের (Nepal) প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। মঙ্গলবারই তিনি ইস্তফা দেন। সূত্রের খবর, সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল মঙ্গলবার ওলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগের অনুরোধ জানান। এর পর সেনাবাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান তিনি। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ওলি (KP Sharma Oli)। সেখানে তিনি লিখেছেন, “সমস্যার সহজ ও রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার স্বার্থে আমি পদত্যাগ করছি।”

মনে করাল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার গণ-অভ্যুত্থান

অনেকটা বাংলাদেশ বা তার আগে শ্রীলঙ্কা মডেলেই নেপালে ওলি সরকারের পতন হল। দুর্নীতি, বেকারত্ব নিয়ে, সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনটা ধিকিধিকি জ্বলছিলই। কর্মহীনতার অন্ধকার গ্রাস করছিল দেশটাকে, সেই সঙ্গে ক্রমাগত নিম্নগামী হচ্ছিল সাধারণ মানুষের অবস্থা। তার মধ্যেই, সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তই ঘি ঢালে। তারপরই এই গণবিদ্রোহ বড় আকার ধারণ করে। সম্প্রতি নেপালের শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র বিক্রম দেশে ফেরার পর থেকে তাঁকে ঘিরে উৎসাহ তৈরি হয়। ফের একবার নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি উঠতে শুরু করে। ফের নেপালকে হিনদু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন গড় উঠতে শুরু করে। কয়েক মাস আগেই রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কাঠমান্ডুতে। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয়েছিল সেনা। সেই বিক্ষোভের আগুনই জ্বলছিল ধিকিধিকি করে, যা ফের জ্বলে উঠল।

ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকেই পালাতে পারেন ওলি

এদিকে, সূত্রের দাবি, দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনাও করছেন ওলি। তাঁর সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই, যদিও তা এখনও নিশ্চিত নয়।দেশ ছাড়তে ওলি ত্রিভুবন বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারেন বলে খবর। ইতিমধ্যেই বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সব উড়ান বাতিল হয়েছে। ওলি ও অন্যান্য মন্ত্রীদের সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৩০০-র বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বিমানবন্দরে (Nepal)।

মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলা, রাস্তায় তাড়া করে পেটানো হল উপপ্রধানমন্ত্রীকে

প্রধানমন্ত্রী ওলি, প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পোড়েলের বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ললিতপুর জেলার খুমালতারে নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ‘প্রচণ্ড’-র বাসভবনে চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর করা হয় তাঁর বাড়ি। দেশের যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুংয়ের সুনাকোঠী বাড়িও ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়ে। ওলি মন্ত্রিসভার সদস্যরাও বিক্ষোভের আঘাতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। একাধিক মন্ত্রীর বাড়ি এবং ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌডেলকে রাস্তায় তাড়া করে পেটালেন সেদেশের বিক্ষুব্ধ জনতা। তাঁর বাড়িও আক্রান্ত। মঙ্গলবার দুপুরে সেই ঘটনার অসংখ্য ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির দফতরেও চলে হামলা। ললিতপুরে যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুংয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তিনিই সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগের পর মঙ্গলবার সকালে তাঁর বাড়িতেও আগুন ধরায় বিক্ষোভকারীরা।

নেপালের সংসদ ভবনে আগুন, হামলা কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে

বিক্ষোভকারীদের (Nepal) লাগানো আগুনে জ্বলে ওঠে নেপালের সংসদ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ঘন কালো ধোঁয়া। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি ক্রমে আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামলাতে ওলি প্রথমে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন (KP Sharma Oli)। মঙ্গলবার সকালে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে সন্ধ্যায় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানের পথ খুঁজবেন। কিন্তু তীব্র বিক্ষোভের চাপে বৈঠক হওয়ার আগেই তাঁকে ইস্তফা দিতে হল। বিক্ষুব্ধ জনতা নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় দফতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালিয়েছে। ভবন থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে দলের পতাকাও।

নেপালের (Nepal) সুপ্রিম কোর্টে হামলা! কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন

কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পরও শান্ত হয়নি পরিস্থিতি। খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুরে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা নেপালের সংসদে আগুন ধরিয়ে দেয়। সুপ্রিম কোর্টে ভাঙচুর চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ও। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দর বন্ধ করে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। মন্ত্রীদের নিরাপদে সরাতে বাসভবনে হেলিকপ্টার পাঠানো হচ্ছে বলে খবর (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত)। কাঠমান্ডুতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফের ছড়ায় অস্থিরতা। উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরানোর পাশাপাশি সনেপায় অবস্থিত নেপালি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ ঘটায়।

ভারত-নেপাল সীমান্তে কড়া নজরদারি, বিবৃতি দিল দিল্লি

নেপালের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে ভারতের পাঁচ সীমান্তবর্তী রাজ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিহারের সাতটি জেলা—পশ্চিম ও পূর্ব চম্পারণ, সীতামারি, মধুবনী, আরারিয়া, সুপৌল ও কিষাণগঞ্জে এসএসবি ও পুলিশ টহল বাড়িয়েছে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই তল্লাশি চলছে। সীমান্তে যাতে অশান্তির প্রভাব না পড়ে, সে জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলিয়ে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। নেপালের পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে ভারত। দিল্লির বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, নেপালে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের সাবধান থাকতে হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলতে হবে।

বিদ্রোহের সূত্রপাত

এই সংকটের সূত্রপাত হয় নেপাল সরকারের সামাজিক মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। বহুদিনের জমে থাকা অসন্তোষে ঘৃতাহুতি দেয় সেই পদক্ষেপ। প্রতিবাদে রাস্তায় নামে ছাত্র-যুব সমাজ। সোমবারই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজধানী কাঠমান্ডু। পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারান অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারী। এর পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। চাপে পড়ে রাতেই সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওলির পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share