Nuclear Testing in India: চিন-পাকিস্তানকে ঠেকাতে ‘হাইড্রোজেন বোমা’ পরীক্ষা করা দরকার ভারতের, কিন্তু বাধা কোথায়?

nuclear testing in india

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ৩৩ বছর পর আবার, পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার ঘোষণা করেছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া ও চিনের দ্রুত অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধির মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার পর ট্রাম্প আরও বলেন, উপযুক্ত সময়ে এই পরীক্ষা শুরু করা হবে। তাঁর দাবি, আমেরিকা এখনও বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া এবং অনেক দূরে চিন। ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তে নয়াদিল্লির কৌশলগত মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ভারতের এক প্রাক্তন সরকারি উপদেষ্টা বলেন, “এখন হয়তো ভারতেরও সময় এসেছে থার্মোনিউক্লিয়ার বা হাইড্রোজেন বোমার পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করার।” তার মতে, ১৯৯৮ সালে ভারতের যে থার্মোনিউক্লিয়ার পরীক্ষা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ সফল হয়নি, তাই চিনের ক্রমবর্ধমান পরীক্ষা নিরীক্ষার জবাবে নয়াদিল্লি নতুন পরীক্ষার পথে যেতে পারে।

কেন এই পথে আমেরিকা

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক রুশ দীর্ঘপাল্লার পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও চিনের দ্রুত বিস্তৃত অস্ত্রভাণ্ডারের জবাব হিসেবেই আমেরিকা আণবিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেজিং সম্প্রতি একটি অ-পরমাণু থার্মোনিউক্লিয়ার (তাপ-পরমাণু) যন্ত্র পরীক্ষা করেছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিবেশে নতুন ভারসাম্য তৈরি করছে। ১৯৯২ সালে নেভাডায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল—যেটি ছিল তাদের ১,০৫৪তম পরীক্ষা। এভাবে দীর্ঘ তিন দশক পর দেশটি নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টার ধারাকে উল্টে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্পের ভাষায়, “কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে” এই পদক্ষেপ জরুরি। ট্রাম্প বলেন, চিনের পারমাণবিক কর্মসূচি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমেরিকার সমকক্ষ হয়ে উঠবে। আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের নীতি অনুসরণ করে আসছে, কিন্তু ট্রাম্প এখন তা পরিবর্তন করেছেন। চিন শেষবার ১৯৯৬ সালে এবং রাশিয়া ১৯৯০ সালে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা করেছিল।

কী করবে ভারত

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯০-এর দশকে আন্তর্জাতিক স্তরে চেষ্টা করেও ভারত ও পাকিস্তানকে থামানো যায়নি—দুই দেশই ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। তাই, যদি আমেরিকা নিজেই পরীক্ষা পুনরায় শুরু করে, তবে ভারতীয় নিরাপত্তা ভাবনায় পরিবর্তন আসা অবশ্যম্ভাবী। ভারতের অভ্যন্তরে বিশেষজ্ঞ ও কৌশলবিদরা বলছেন, নতুন এক বৈশ্বিক পারমাণবিক প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ সতর্ক করেছেন, ভারতের নতুন পরীক্ষা পাকিস্তানকে পাল্টা পদক্ষেপে উসকে দিতে পারে। আবার অনেকে মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা সময়ের দাবি। চিন তার পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার ১,০০০-এ উন্নীত করার জন্য কাজ করছে। দেশটি একটি অ-পারমাণবিক হাইড্রোজেন বোমাও পরীক্ষা করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চিনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভারতের এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা করা উচিত।

চিনকে আটকাতে পরমাণু পরীক্ষায় ভারত!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ট্রাম্প উত্তেজনাপূর্ণ বিশ্ব পরিস্থিতি এবং চিনের পারমাণবিক অস্ত্রের কথা উল্লেখ করছেন, তাই ভারতও “পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি”-র কথা বলে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। মার্কিন বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে টেলিস তিন বছর আগে ভারতকে চিনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ অর্জনের জন্য হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অ্যাশলি জে. টেলিস ২০২২ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ভবিষ্যতে এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা বাড়বে। টেলিসের মতে, ১৯৯৮ সালে ভারত হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, চিনের সঙ্গে ভারতের শত্রুতা বাড়লে, ভারতকে একদিন হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করতে বাধ্য হতে হবে। উল্লেখ্য, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ চিন পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে সাহায্য করেছিল। লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত যুদ্ধের জন্য চিন প্রস্তুতি নিচ্ছে। চিন যে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করছে, তা আমেরিকার পাশাপাশি ভারতের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হতে পারে। তাই বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের হাইড্রোজেন বোমা উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

পারমাণবিক অস্ত্রের সমীকরণ

বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে নয়টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্রধারী। তাদের হাতে মোট প্রায় ১৩,০০০ পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে—যা ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার ৬০,০০০-এর তুলনায় অনেক কম। এর মধ্যে আমেরিকা ও রাশিয়া অধিকাংশ ওয়ারহেডের মালিক, আর চিন দ্রুত তাদের মজুত বাড়াচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের হাতে আনুমানিক কয়েকশ’ অস্ত্র রয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন অধ্যায় খুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বড় শক্তিগুলোর এমন পদক্ষেপ প্রায়শই আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমীকরণ পাল্টে দেয়—আর এবার ভারতের সামনে প্রশ্ন, “এই প্রতিযোগিতায় সে কি পিছিয়ে থাকবে, নাকি হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখবে?”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share