মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এনসিইআরটি (NCERT) এবার সপ্তম শ্রেণির গণিতের পাঠ্যপুস্তকে বীজগণিত এবং জ্যামিতিতে ভারতের প্রাচীন গণিতের পরম্পরা এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্যকেই তুলে ধরতে চলেছে। এই সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ‘গণিত প্রকাশ পর্ব ২’-এ প্রাচীন ভারতীয় গণিত শাস্ত্রের চর্চাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরায় বীজগণিত-জ্যামিতি (Mathematical traditions) কীভাবে বিকশিত হয়েছিল তাকে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, ঠিক একই ভাবে শিক্ষা কীভাবে সৃজনশীল এবং ব্যবহারিক অর্থবহ পণ্ডিত গণিতজ্ঞদের সম্পর্কেও তুলেও ধরা হয়েছে।
বীজগণিত অনেক মূল ধারণা ভারতীয়দের তৈরি (NCERT)
জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ এনসিইআরটি (NCERT) কর্তৃক প্রকাশিত নতুন সপ্তম শ্রেণির গণিত পাঠ্যপুস্তকে গুরুত্বপূর্ণ গণিত শিক্ষা এবং বিকাশের প্রাথমিক পাঠ্যকেই বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে। দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে এনসিইআরটি বলেছে, বীজগণিত সহ অনেক মূল ধারণা প্রথম ভারতীয় গণিতজ্ঞরাই আবিষ্কার করেছিলেন। তাই প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতদের জ্ঞান চর্চাকেই প্রাথমিক ভাবে পাঠদানের কাজের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
এনসিআরটি (NCERT) জানিয়েছে, একটি অধ্যায়ে পূর্ণসংখ্যা-ধনাত্মক-ঋণাত্মক-সংখ্যার ব্যাখ্যাকে ধরে ধরে করা আলোচনা করা হয়েছে। সপ্তম শতাব্দীর ভারতীয় গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত এবং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্তের উল্লেখ করা হয়েছে। এই বইতে বলা হয়েছে, কীভাবে ধনাত্মক-ঋণাত্মক সংখ্যার গুণ-ভাগ করতে হয়। এটি গণিতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। পাটিগণিত এবং বীজগণিত গঠনে সহায়তা হিসবে এই ভাবনা অনন্য। ব্রহ্মগুপ্তের নিয়ম এবং তাঁর পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে অনুশীলনগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বীজগণিতের উপর ভারতের কাজ বিশ্বের প্রাচীনতম কাজগুলির মধ্যে একটি অন্যতম ছিল। বীজগণিতীয় সমীকরণের একটি অংশে ‘বিজগনিতা’ শব্দটি উল্লেখ এখন বীজগণিতের সাথে যুক্ত হয়েছে। প্রাচীন ভারতে গাণিতিক অধ্যয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল প্রতীক ব্যবহার করে রাশি গঠন করা। আর এই ধরনের রাশি দিয়ে যে কোনও সমীকরণকে সমাধান করা হয়। বইতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ব্রহ্মগুপ্ত অজানা সংখ্যা বোঝাতে অক্ষর ব্যবহার করতেন আর তাই হল বীজগণিতীয় চিন্তাভাবনার প্রাচীনতম উদাহরণ।
ভারতীয় গাণিতিক (Mathematical traditions) জ্ঞান কীভাবে বিশ্বের অন্যান্য অংশে পৌঁছেছিল। জানা গিয়েছে, ৮ম শতাব্দীতে ভারতীয় গাণিতিক ধারণাগুলি আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। বর্তমান ইরাকের গণিতবিদ আল-খোয়ারিজমিকে প্রভাবিত করেছিল। ৮২৫ খ্রিস্টাব্দ তিনি হিসাব আল-জাবর ওয়াল-মুকাবালা লিখেছিলেন, যার অর্থ “পুনরুদ্ধার এবং ভারসাম্য বজায় রেখে গণনা করা। ব্রহ্মগুপ্তের সময়ে ভারতীয় গণিতবিদদের ব্যবহৃত প্রতীকগুলির তালিকাও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্বাদশ শতাব্দীতে ভাস্করাচার্যের লেখা বীজগণিতের একটি গণিত সমস্যাও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরার জন্য বড় পদক্ষেপ
স্কুলপাঠ্যে জ্যামিতির একটি অধ্যায় “Constructions and Tilings”-এ প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ “Sulba-Sutras” সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে দড়ি দিয়ে লম্ব রেখা এবং দ্বিখণ্ডক কীভাবে তৈরি করতে হয় তাও ব্যাখ্যা (Mathematical traditions) করা হয়েছে। পূর্বে সপ্তম শ্রেণির গণিতের পাঠ্যপুস্তকে প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতদের উল্লেখ ছিল না। এনসিইআরটি এখন জাতীয় শিক্ষা নীতি (NEP) 2020 এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামোর অধীনে পাঠ্যপুস্তক গুলিকে সংস্করণ করছে। এই কাজ স্কুল শিক্ষায় ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরা অন্তর্ভুক্ত করার বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply