Al Falah University: ‘জঙ্গি তৈরির কারখানা’ আল ফালাহ্! গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা

al falah university chairman jawad ahmed siddiqui and his brothers arrested after raids in delhi red fort blast

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘হোয়াইট কলার’ জঙ্গি মডিউলের (White-Collar Terrorism Module) সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার করা হল আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Al Falah University) প্রতিষ্ঠাতা জওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকিকে। মঙ্গলবারই ইডির দীর্ঘ তল্লাশির পরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর। ‘জঙ্গি’ ডাক্তারদের ‘আস্তানা’ আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তথা আল-ফালাহ্ গ্রুপের চেয়ারম্যান জওয়াদ সিদ্দিকিকে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (PMLA)- বা আর্থিক তছরুপ আইনের অপরাধমূলক ধারায় গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে পাওয়া অর্থ বিভিন্ন পথে ঘুরিয়ে ব্যক্তিগত বা পরিবার-ঘনিষ্ঠ সংস্থার অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।

জঙ্গি তৈরির কারখানা

দিল্লি বিস্ফোরণ (Delhi Red Fort Blast) এবং ডাক্তারদের জঙ্গি যোগের অভিযোগ উঠে আসার পরে আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন ‘জঙ্গি তৈরির কারখানা’ হিসেবেও চিহ্নিত করে থাকেন অনেকে। ১০ নভেম্বর দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনার পরে প্রথম তদন্তকারীদের নজরে আসে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় ধৃতদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও না কোনও যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছিল। এমনকী, দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনায় ‘সুইসাইড বম্বার’ উমর-উন-নবিও আল ফালাহ্-র সঙ্গে যুক্ত ছিল। এর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডিং বা অর্থের জোগান কোথা থেকে আসছে, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে ইডি।

আল-ফালাহ্ ট্রাস্ট এবং অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা

ইডির এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আর্থিক তছরূপ, ভুঁইফোড় সংস্থা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুরো ঘটনায় আল-ফালাহ্ ট্রাস্ট এবং অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের মতে, গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত কমপক্ষে নয়টি ভুয়ো কোম্পানি, যাদের সবগুলিই একই ঠিকানায় নিবন্ধিত, ইডির তদন্তের আওতায় রয়েছে। মঙ্গলবার সারাদিন এই সূত্র ধরে কমপক্ষে ২৫টি জায়গায় অভিযান চালায় ইডি। দিল্লির ওখলাতেও চালানো হয় অভিযান। নিরাপত্তার জন্য ঘিরে রাখে পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনী। উদ্ধার করা হয় নগদ ৪৮ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টের নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে ক্যাটারিং- অনেক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি দেওয়া হয়েছিল জওয়াদের স্ত্রী-সন্তানের মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে। এদিন তল্লাশি চালিয়ে একাধিক ডিজিটাল ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে তদন্তকারীরা। এছাড়া কয়েকটি শেল কোম্পানিরও সন্ধান পেয়েছে সংস্থা, যেগুলিকে অর্থ পাচারের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে সন্দেহ।

আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তার

আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয় হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলার ধৌজ এলাকায় অবস্থিত এবং এখানে একটি মেডিকেল কলেজ এবং একটি হাসপাতাল রয়েছে। ফরিদাবাদে স্থানীয় গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, ১৯৯০ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল, চ্যান্সেলর নির্বিচারে অনেক গ্রামীণ রাস্তা দখল করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি ৩০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছিল, তবে পরে আশেপাশের জমি কিনে ভবনগুলি প্রসারিত করা হয়েছিল। ৭৬ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১০৯-১৩ নম্বরে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং, ১৪ নম্বরে একটি ওয়ার্কশপ, ৯ নম্বরে একটি মর্গ এবং ২৫ নম্বরে একটি হাসপাতাল ভবন রয়েছে। গার্লস হস্টেলটি ২৫ এবং ৫ নম্বরে একত্রিত করে নির্মিত হয়েছে, ছেলেদের হস্টেল এবং ডাইনিং হল ২৪-২ নম্বরে অবস্থিত। এছাড়াও, ১২৩-১১ এবং ১২ নম্বরে ডাক্তারদের জন্য একটি বহুতল আবাসিক কমপ্লেক্স, ১৯-১৯ নম্বরে অ্যানাটমি বিল্ডিং এবং ১৮-২ নম্বরে মেডিক্যাল বিল্ডিং রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সব নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে। ডঃ উমর ও অন্যান্য অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তদন্ত আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অনেক জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল। তবে ডাক্তার মডিউল নিয়ে তদন্তকারী এজেন্সিগুলো পদক্ষেপ শুরু করার পরে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেয় এবং শ্রমিকরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়।

জালিয়াতির মামলায় ধৃত আর এক ভাই

ফরিদাবাদের আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের ভাইকে প্রায় ২৫ বছরের পুরনো একটি জালিয়াতির মামলায় হায়দরাবাদ থেকে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকির ছোট ভাই, অভিযুক্ত হামুদ আহমেদ সিদ্দিকি (৫০)-কে গ্রেফতারের জন্য ১০,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইয়াংচেন দোলকার ভুটিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মধ্যপ্রদেশের মাহু শহরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা তিনটি মামলায় রবিবার হামুদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুয়ো বেসরকারি ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করে শত শত বাসিন্দাকে আমানত দ্বিগুণের টোপ দিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে হামুদের বিরুদ্ধে। কেলেঙ্কারি ফাঁস হতেই ২০০০ সালে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। পুলিশ কয়েক দশক ধরে তাঁকে খুঁজছিল। অবশেষ তাঁকেও গ্রেফতার করা হল।

সিদ্দিকি ভাইদের উত্থান

জানা গিয়েছে, সিদ্দিকি ভাইদের পূর্বপুরুষের বসবাস ছিল মধ্যপ্রদেশের মাউ-র (বর্তমান নাম অম্বেডকর নগর) কায়স্থ মহল্লাতে। জাভেদ এবং হামুদের বাবা মহম্মদ হাম্মাদ সিদ্দিকি সেখানে কাজি ছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, নয়ের দশকের প্রথমের দিকে সিদ্দিকি পরিবার একটি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি বা বিনিয়োগকারী সংস্থা খুলেছিল। স্থানীয় সেনা কর্মী, সেনার ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ীদের সেই সংস্থায় বিনিয়োগ করার জন্য আশ্বাস দিয়েছিলেন তাঁরা। কাজি মহম্মদ হাম্মাদ সিদ্দিকি এলাকায় সজ্জন ও সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। আর তাঁর সম্মানের কথা চিন্তা করেই অনেকে সেখানে বিনিয়োগও করেন। কিন্তু সংস্থা ডুবে যাওয়ার পরে জাওয়াদ এবং হামুদ একে অন্যকে দোষারোপ করে মধ্যপ্রদেশ ছেড়ে চলে যায়। দিল্লি বিস্ফোরণের পর ফের তাদের হদিশ মেলে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share