SIR: রাজ্যের ৪৪টি জায়গায় ভোটার তালিকা ‘মায়া’ময়! এসআইআর ফর্মের কিউআর কোড স্ক্যানে পর্দা ফাঁস

sir woman named mayarani resident of paschim bardhhaman enlisted as a voter 44 different areas in west bengal

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্থান ভেদে পদবি আলাদা, রাজ্যের ৪৪টি জায়গায় ভোটার তালিকা ‘মায়া’ময়। হাওড়ায় তিনি মায়ারানি রায়, বাঁকুড়ায় মায়ারানি মুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে মায়ারানি প্রামাণিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে মায়ারানি নাইয়া! আবার উত্তর ২৪ পরগনায় তিনিই মায়ারানি মণ্ডল, বর্ধমানে মায়ারানি কোঙার। এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়ায় একটিমাত্র এনুমারেশন ফর্মের কিউআর কোড স্ক্যান করতেই দেখা যায়, একই মহিলার নাম একসঙ্গে ৪৪টি ভিন্ন বিধানসভায় ভোটার তালিকায় যুক্ত রয়েছে। রয়েছে তাঁর স্বামীর নামও। কিন্তু সবক’টির পদবি আলাদা। পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার ৪৭ নম্বর বুথে সামনে এসেছে এমনই ভোটার কার্ডে জালিয়াতির ঘটনা। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পোন্নাম্লম এসের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

কোনও ভয় নেই মায়ারানির

পেশায় রাঁধুনি মধ্যবয়স্কা মায়ারানিকে নিয়ে শোরগোল পশ্চিম বর্ধমানে। বিজেপির অভিযোগ, এই ভাবে রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢুকিয়েছে তৃণমূল। তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। বিধবা মায়ারানি গোস্বামীর বাড়ি পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার ডিভিসি পাড়ায়। ৪৭ নম্বর বুথের ভোটার তিনি। তাঁর এনুমারেশন ফর্মে কোড স্ক্যান করতে গিয়ে রাজ্যের ৪৪ জায়গায় ভোটার হিসেবে তাঁর নাম পেয়েছেন বিএলও। এমন অভাবনীয় ঘটনায় মায়ারানি অবশ্য বিস্মিত নন। বস্তুত, তিনি এর গুরুত্ব কী তা-ই জানেন না। বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করে কোনও ক্রমে দিন চলে ওই মহিলার। থাকেন সরকারি প্রকল্পে পাওয়া বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘বাবারা, আমি তো কিছুই জানি না। শুরু থেকে আমি বৈদ্যনাথপুর স্কুলে ভোট দিই। র আগের সরকারের সময়কালে বৈদ্যনাথপুরে নাম তুলেছিলাম৷ সেই সময় আগের ভোটার লিস্ট থেকে আমার নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধুমাত্র এটুকুই জানি। লোকের বাড়িতে রান্না করে আমি পেট চালাই। আমি কী করব বুঝতে পারছি না৷ এসআইআরের (SIR) ফর্ম পাড়ার সবাই পূরণ করেছে। আমিও করেছি। তার পর জনে জনে আমাকে এসে প্রশ্ন করছেন। তবে অনেকেই বলেছেন, আমার কোনও ভয় নেই।’’

সুপরিকল্পিত জালিয়াতি চক্রের কাজ

বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, এসআইআর-এর (SIR) জন্য সত্য সামনে এল৷ এসআইআর চেক না হলে এমন ঘটনা ধরা পড়তই না। কত অসহায় মানুষের নাম ব্যবহার হয়েছে তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়, তাই বড়সড় তদন্ত হওয়া জরুরি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধবা মায়ারানি গোস্বামী খুব অসহায়৷ লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ করে দিন গুজরান করেন৷ অভিযোগ, তাঁর এসআইআর ফর্মের কিউআর কোড স্ক্যান করতেই দেখা যায়, উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় তাঁর নাম তোলা হয়েছে ভোটার হিসেবে। তবে প্রতিটি তালিকায় নাম ‘মায়ারানি’ রাখা হলেও বারবার বদলে দেওয়া হয়েছে পদবি। কোথাও তিনি মণ্ডল, কোথাও রায়, আবার কোথাও ঘোষ বা নাইয়া। এইভাবে তাঁর পরিচয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ভোটার হিসাবে তাঁর বয়সও বিভিন্ন জায়গায় কমিয়ে দেখানো হয়েছে। ঘটনার খবর মিলতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, একটি ফর্ম স্ক্যান করতেই ৪৪টি ভুয়ো পরিচয় উঠে আসা কোনও সাধারণ ভুল হতে পারে না। এটি যে একটি সুপরিকল্পিত জালিয়াতি চক্রের কাজ, তা স্পষ্ট।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share