মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সর্বক্ষণ ভারতের বিরুদ্ধে সংঘাত (India Pakistan Conflict) তৈরির অপচেষ্টা পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের (Asim Munir)। কট্টর ইসলামপন্থী আসিম মুনির ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (Imran Khan) বোন আলিমা খান। কয়েক সপ্তাহ ধরে টালবাহানার পর অবশেষে মঙ্গলবার ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর বোন ডাক্তার উজমা খানুমকে দেখা করতে দেওয়া হয়। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে ঢুকতে দেওয়া হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের সর্বময় নেতা ইমরানের বোনকে। প্রাক্তন ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী পাক ক্যাপ্টেন গত দুবছর ধরে আদিয়ালা জেলে বন্দি।
আসিম মুনির কট্টরপন্থী
ইমরান খানের বোন আলিমা খানের অভিযোগ, জেনারেল আসিম মুনিরের ইসলামী কঠোর অবস্থান পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যা গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের পক্ষে কখনওই ভালো নয়। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর বোন আলিমা দাবি করেন, ইমরান খান একজন খাঁটি উদারপন্থী। তিনি চান ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে। স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলিমা খান বলেন, ‘‘আসিম মুনির কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী। সেই কারণেই তিনি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। তাঁর কট্টর ইসলামিক চিন্তাধারা ও সংরক্ষণ মনোভাবই তাঁকে জোর করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, যারা ইসলামে বিশ্বাস করে না।’’
ইমরান খান স্বাধীন চিন্তাধারার
অন্যদিকে ইমরান খান স্বাধীন চিন্তাধারার। যখন ইমরান খান ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তিনি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান তাঁর বোন। তিনি বলেন, ‘‘ইমরান খান যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলেন। এমনকী বিজেপির সঙ্গেও। যখনই আসিম মুনিরের মতো মৌলবাদী ক্ষমতায় থাকবেন, তখন ভারতের সঙ্গে তো যুদ্ধ করতে চাইবেনই। এমনকী ভারতের বন্ধু দেশগুলিও ভুগবে।’’ পাশাপাশি ইমরান খানকে পাকিস্তানের ‘সম্পদ’ বলে অভিহিত করেন আলিমা। তিনি বলেন, “ইমরান খান এই দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। দেশের এমন একজন প্রতিনিধিকে কীভাবে কারাগারে রাখা যায়?” তিনি আরও বলেন করেন, “আসলে তারা পাকিস্তানের জনগণকে দমন করতে চায়। তারা জনগণের কণ্ঠস্বর শুনতে দিতে চায় না, আর জনগণ ইমরান খানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভেবেছিল, যদি তাকে আলাদা করে রাখা যায়, তাহলে মানুষ তাকে ভুলে যাবে।”
দেশের জন্য বিপজ্জনক
পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ‘দেশের জন্য বিপজ্জনক’ বললেন পাকিস্তানের জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ক্রিকেটের মাঠ থেকে রাজনীতির ময়দানে নামা ইমরান বলেন, মুনির ইচ্ছাকৃত ভাবে আফগানিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর বাড়াচ্ছেন। ৭৩ বছর বয়সি ইমরান এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘আসিম মুনিরের নীতি পাকিস্তানের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। ওঁর নীতির জন্য সন্ত্রাস এ ভাবে বাড়ছে। দেখে কষ্ট লাগে। পাকিস্তানের জন্য ভালো কিছু করায় ওঁর কোনও আগ্রহ নেই। উনি পশ্চিমের শক্তিদের তুষ্ট করতে চান। আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়াচ্ছেন, যাতে গোটা বিশ্বকে দেখাতে পারেন উনি ‘মুজাহিদ’ (ইসলামিক যোদ্ধা)।’’ মুনিরকে ‘মানসিক অসুস্থ’ও বলেছেন ইমরান। তাঁর কথায়, ‘‘মুনিরের নৈতিক শূন্যতা পাকিস্তানের সাংবিধানিক আইনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’’
ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ ইমরান
ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিককের মুখোমুখি হয়ে তাঁর অপর বোন উজমা খানুম বলেন, ‘‘ঈশ্বরের কৃপায় ও সুস্থ আছে…কিন্তু ওঁর উপরে চলা মানসিক অত্যাচার নিয়ে ক্ষুব্ধ। সারাদিন সেলে বন্দি করে রাখা হয় ওঁকে…খুব অল্প সময়ের জন্যই সেল থেকে বেরতে পারে, কারোর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয় না।’’ জেলবন্দি ইমরান খান পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকেই দুষেছেন দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য। ইমরানের দাবি আসিম মুনির পাক সেনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন। এমনকী, সংবিধানে পরিবর্তন করে নিজেকে এবং সমস্ত সেনা প্রধান ও প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে আজীবন সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন।
ইমরানের উপর মানসিক অত্যাচার
২০২৩ সাল থেকে জেলে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বিগত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ-জল্পনা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, প্রায় এক মাস ধরে ইমরানের সঙ্গে পরিবারের কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। অবশেষে মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি থাকা ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় তাঁর বোন উজমাকে। তিনি বলেন যে ইমরান বেঁচে থাকলেও, তাঁর উপরে মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে। উজমা বলেন, ‘‘ইমরান খান বলেছেন যে তাঁর কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই, এমনকী তিনি কারও সঙ্গে দেখাও করেননি। তিনি বলেছেন যে তারা তাঁকে মানসিকভাবে নির্যাতন করছে। তিনি ক্রুদ্ধ এবং বলেছেন যে যা কিছু ঘটছে তার জন্য আসিম মুনির দায়ী।’’

Leave a Reply