Chhangur Baba Conversion Racket: ধর্মান্তরণে অভিযুক্ত ছাঙ্গুর বাবার ডেরায় ইডি, বিদেশি ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকার লেনদেন

chhangur baba conversion racket 2 crore hawala transactions ed raids across country specially maharashtra uttar pradesh

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বেআইনিভাবে ধর্মান্তকরণে অভিযুক্ত জালালউদ্দিন ওরফে ছাঙ্গুর বাবার একাধিক সম্পত্তিতে বড়সড় অভিযান চালাল ইডি। বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তরপ্রদেশে সাতটি দল বলরামপুর জেলার উত্তরোলা এবং মুম্বইয়ের দুটি স্থানে অভিযান চালিয়েছিল। দলগুলি ছাঙ্গুর বাবার অধীনে কাজ করা বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর আগে গত ৫ জুলাই এটিএস ছাঙ্গুর বাবা এবং তার সহযোগী নীতু ওরফে নাসরিনকে গ্রেফতার করেছিল। সেই সময় জানা যায়, এক বছরে ১০০ কোটি টাকার লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত এই ছাঙ্গুর বাবা। তিন দিন পর দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে ইডি।

আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্মান্তরণ

ইডি সূত্রে খবর, বলরামপুর পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি এটিএসের কাছ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহের পর এদিন অভিযান চালানো হয়। উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মোট ১৪টি স্থানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে ইডি। বলরামপুর জেলার অন্তত ১২টি স্পর্শকাতর এলাকায় অভিযান চালানো হয়, যেখানে চঙ্গুর বাবা বহুদিন ধরেই ধর্মীয় চিকিৎসা, অর্থনৈতিক সহায়তা ও মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গরিব ও অনগ্রসর মানুষদের ধর্মান্তরিত করে চলেছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁর নামে থাকা আশ্রমগুলি আদতে একটি বড় মাপের হাওলা ও মানসিক চাপে ধর্মান্তরণ করার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

২ কোটি টাকার হাওলা লেনদেন

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ কোটি টাকার একটি সন্দেহজনক লেনদেন নজরে এসেছে। এটি ছাঙ্গুর বাবার ঘনিষ্ঠ নাভীন রোহরা ওরফে জামালউদ্দিনের অ্যাকাউন্ট থেকে মুম্বইয়ের শেহজাদ শেখের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল। এই টাকা আসলে সম্পত্তি কেনার উদ্দেশ্যে পাঠানো হলেও পরে তা একাধিক অ্যাকাউন্ট ঘুরিয়ে মূল উৎস গোপন করার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। ইডির মতে, এই লেনদেন একটি বৃহৎ হাওলা নেটওয়ার্কের আংশিক দৃষ্টান্ত মাত্র। বলরামপুরের উত্রৌলা, মধুপুর ও রেহরামাফি গ্রামে চালানো অভিযানে ইডি বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ, বিদেশি রেমিট্যান্সের রেকর্ড, এবং সম্পত্তির নথিপত্র উদ্ধার করেছে। ডিজিটাল ফরেনসিক টিম এনক্রিপ্টেড বার্তা ও আর্থিক তথ্য খতিয়ে দেখছে।

বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন

ইডির হাতে এসেছে ছাঙ্গুর বাবার কমপক্ষে পাঁচটি বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য। অ্যাকাউন্টগুলি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শারজা, দুবাই সহ নানা জায়গায় অবস্থিত। যে ব্যাঙ্কগুলিতে অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেগুলি হল অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক (শারজা ও দুবাই), এইচডিএফসি (UAE), এমিরেটস এনবিডি ব্যাঙ্ক, ফেডারেল ব্যাঙ্ক (ভসট্রো অ্যাকাউন্ট)। এই অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রবাহিত টাকার উৎস ও ব্যবহার এখন তদন্তাধীন। ধারণা করা হচ্ছে, এই অর্থ বিদেশি দাতব্য সংস্থার নামে এলেও, মূলত ভারতীয় মাটিতে ধর্মান্তরণ, সম্পত্তি কেনা ও এনজিওর আড়ালে অস্থিরতা ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।

ভুয়ো আশ্রমের আড়ালে ধর্মান্তরণ চক্র

তদন্তকারীদের মতে, ছাঙ্গুর বাবা শুধুমাত্র একজন স্বঘোষিত ধর্মগুরু নন, বরং একটি সুপরিকল্পিত ধর্মান্তরণ চক্রের মাথা। যে চক্রের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও জনসংখ্যাগত ভারসাম্যে প্রভাব ফেলা। বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর চক্র বিস্তৃত, বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ এলাকায় ধর্মান্তরণ, সম্পত্তি কেনা এবং প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত ছিলেন। ছাঙ্গুর বাবার সংশ্লিষ্ট একাধিক এনজিও এবং আশ্রম ইতিমধ্যেই তদন্তের আওতায় এসেছে, যেগুলি এফসিআরএ (FCRA) এবং পিএমএলএ (PMLA) আইন অনুযায়ী বিদেশি অনুদানের অপব্যবহারের জন্য চিহ্নিত হয়েছে। সূত্র বলছে, এই সংগঠনগুলির একটি বড় অংশ শিক্ষা ও সমাজসেবার নামে বিদেশি অর্থ এনে ধর্মীয় রূপান্তরণে ব্যবহার করেছে।

কীভাবে কোটিপতি ছাঙ্গুর বাবা

উত্তরপ্রদেশে ধর্মান্তরণ চক্র চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে জালালউদ্দিন ওরফে ছাঙ্গুর বাবা। বলরামপুর জেলার বাসিন্দা ছাঙ্গুর বাবা এক সময়ে সাইকেলে করে আংটি এবং তাবিজ বিক্রি করত। বর্তমানে তার ৪০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০৬ কোটি টাকা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, গত ৫ জুলাই লখনউয়ে এক হোটেল থেকে ছাঙ্গুর বাবা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নীতু ওরফে নাসরিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপরেই জালালউদ্দিনের বিপুল সম্পত্তির হদিশ মেলে। মূলত পশ্চিম এশিয়া থেকে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকত বলে দাবি করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাস দমন স্কোয়াড (এটিএস) তদন্ত করে দেখছে যে, ছাঙ্গুর বাবার সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র আছে কিনা। ইউপি স্পেশাল টাস্ক ফোর্সও এই মামলার তদন্ত করছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলরামপুরের স্থানীয় পুলিশ।

আয়-ব্যয়ের হিসেবে বহু গরমিল

এছাড়া এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও ছাঙ্গুর বাবার আয়-ব্যয়ের হিসেব বের করার জন্য একটি মামলা দায়ের করে। পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ধর্মান্তরণের জন্য দরিদ্র, অসহায় শ্রমিক, দুর্বল শ্রেণির এবং বিধবা মহিলাদের প্রলোভন, আর্থিক সাহায্য, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করা হত। অনেক সময় ভয় দেখিয়ে ও ধর্মান্তরণে বাধ্য করা হত। এই আবহে কে কে ছাঙ্গুর বাবাকে টাকা পাঠিয়েছিল, কত টাকা পাঠিয়েছিল এবং কী কারণে পাঠিয়েছিল, সমস্ত দিক তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। চলছে তার ঘনিষ্ঠদের খুঁজে বের করার কাজ। তদন্ত জোরালো হওয়ায় উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের একাধিক শহরে এই চক্রের অস্তিত্ব রয়েছে, বলে অনুমান। এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় সাম্যতায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share