মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্বাধীনতা দিবসের আগে ভারতের ক্রীড়া মহলে খুশির হাওয়া। ক্রীড়াক্ষেত্রে অমৃতকালের পথে এগিয়ে চলেছে ভারত। মিলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০ বছর পর আবার ভারতে বসতে চলেছে কমনওয়েলথ গেমসের আসর। ভারতীয় অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি মেলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রস্তাব দিল ভারত। আমেদাবাদ শহরে কমনওয়েলথ গেমস (Commonwealth Games 2030) আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা করতে হবে ৩১ অগাস্টের মধ্যে। কমনওয়েলথ গেমসের খরচ বহন করবে কেন্দ্রের মোদি সরকার।
ভারতের সম্ভাবনা উজ্জ্বল
২০৩৬ সালে ভারতে অলিম্পিক্স আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আগেই। তার আগে ২০৩০ সালে কমনওয়েলথ গেমসের (Commonwealth Games 2030) আসর ভারতে বসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ২০৩০ সালের গেমস আয়োজনের দায়িত্বে ছিল কানাডার। কিন্তু তারা সরে দাঁড়ানোয় ভারতের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। যেহেতু ২০১০ সালে ভারত কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করেছিল, তাই অভিজ্ঞতার বিচারে ভারত সুযোগ পেতে পারে। ভারতের লড়াই নাইজেরিয়ার সঙ্গে। এ ছাড়া আয়োজনের প্রস্তাব দিতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তবে, সম্প্রতি কমনওয়েলথ স্পোর্টসের ডিরেক্টর অফ গেমস ড্যারেন হল আমেদাবাদে গিয়ে ভেন্যুগুলো ঘুরে দেখেন। এর পর গুজরাট সরকারের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায় তাঁদের। চলতি মাসের শেষের দিকে আরও বড় দল আমেদাবাদে যেতে পারেন বলে খবর।
দ্রুত প্রস্তুতি শুরু
২০৩০ সালের কমনওয়েলথ গেমস (Commonwealth Games 2030) আয়োজন করতে আগেই আগ্রহ দেখিয়েছিল ভারত। বুধবার ভারতীয় অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভায় সেই প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। এবার গেমস আয়োজনের পুরোদস্তুর প্রস্তুতি দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের অলিম্পিক্স কমিটির (আইওএ) যুগ্ম সচিব কল্যাণ চৌবে। ভারতে ২০৩০ সালে কমনওয়েলথ গেমসের আসর বসবে কি না, তা জানা যাবে নভেম্বর মাসে। কমনওয়েলথ স্পোর্টের জেনারেল অ্যাসেম্বলি গ্লাসগো থেকে ঘোষণা করবেন সে কথা। ভারতে কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজন হলে সমস্ত খরচ বহন করতে হবে সরকারকে। সূত্রের খবর, দেশের মাটিতেই যাতে কমনওয়েলথের আসর বসে, সেই কারণে এখন থেকেই পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে গুজরাট সরকার।
কমনওয়েলথ দেশে হলে বেশি পদকের সম্ভাবনা
অলিম্পিক্স কর্মসমিতির সদস্য রোহিত রাজপাল বলেছেন, “২০৩০-এর কমনওয়েলথ গেমস হবে পূর্ণাঙ্গ মাপের। আমরা যে খেলাধুলোয় ভাল সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে যাতে পদকের সংখ্যা অনেকটাই বাড়ে।” উল্লেখ্য, ২০২৬-এর গ্লাসগো গেমসে হকি, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি এবং শুটিংয়ের মতো ইভেন্ট নেই, যেগুলো থেকে ভারত নিয়মিত পদক জিতেছে। রাজপাল আরও বলেছেন, “গেমসে তিন ধরনের খেলা থাকে। প্রথমত, কমনওয়েলথ গেমসের মূল খেলা যা প্রতি বারই হয়। দ্বিতীয় ভাগে থাকে আয়োজক দেশের পছন্দের খেলা এবং তৃতীয় ভাগে অতিরিক্ত খেলা। ২০৩০-এর কমনওয়েলথ গেমসে (Commonwealth Games 2030) ঐতিহ্যশালী এবং স্বদেশি খেলাধুলো রাখব আমরা। শুটিং, তিরন্দাজি, কুস্তি, কবাডি, খো খো-র মতো খেলা থাকবে।”
দুর্নীতি-মুক্ত স্বচ্ছ্ব গেমস
এখনও পর্যন্ত ভারত এক বারই কমনওয়েলথ গেমস (Commonwealth Games 2030) আয়োজন করেছে। সেটা ২০১০ সালে। সে বার খেলাধুলো ছাপিয়ে শিরোনামে এসেছিল অব্যবস্থা এবং আর্থিক দুর্নীতি। অ্যাথলিটস্ ভিলেজ, স্টেডিয়াম–সহ একাধিক পরিকাঠামো তৈরিতে অনেক দেরি হয়, বাজেট বেড়ে যায়, নেহরু স্টেডিয়ামে ফুটব্রিজ ভাঙায় অনেক শ্রমিক আহত হন। এ সব দেখে অনেক খেলোয়াড় নাম তুলে নিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি বিপুল আর্থিক দুর্নীতি হয়েছিল সে বার। আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সুরেশ কালমাডিকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছিল। স্কটল্যান্ড, কানাডার মতো দেশ অব্যবস্থা দেখে দেরিতে ক্রীড়াবিদদের পাঠিয়েছিল। গেমস আয়োজনের জন্য যেই সরঞ্জাম আনা হয়েছিল সেগুলো বাজারের থেকে অনেক বেশি টাকার বিনিময়ে বেনামি সংস্থার মাধ্যমে কেনা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, একদম সাধারণ জিনিস যেমন টয়লেট পেপার কিনতেও দুর্নীতি করা হয়েছিল। আলোচনায় এসেছিল পরিকাঠামোও। গেমস ভিলেজ থেকে হোটেল ছিল অনেক দূরে। পাশাপাশি গেমস ভিলেজে ন্যূনতম পরিকাঠামো ছিল না। অ্যাথলিটদের ভিলেজেও ছিল পরিকাঠামোর অভাব। দিল্লিতে যেখানে অ্যাথলিট ও তাঁদের কোচদের রাখা হয়েছিল সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব ছিল। সব মিলিয়ে দুর্নীতি থেকে বিতর্ক সবকিছুতেই ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসে নাক কেটেছিল ভারতের। এ বার ভালো করে আয়োজন করে সেই ছবি বদলানোই লক্ষ্য। আর তাই খুব সাবধানে ২০৩০ সালের জন্য পা ফেলতে চাইছে ভারত।
অলিম্পিকের পথে
২০৩৬ সালের অলিম্পিক্সও আয়োজন করতে চায় ভারত। সেটাও গুজরাটের আমেদাবাদে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটির সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার প্রতিনিধিরা। সরকারি ভাবে আবেদন করা হয়েছে। ২০২৮ সালে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস এবং ২০৩২ সালের অলিম্পিক্স হবে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে। তার পরের অলিম্পিক্স নিজেদের দেশে করতে চায় ভারত। সেই চেষ্টাই চলছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, কমনওয়েলথ-এর দায়িত্ব পেলে অলিম্পিক্স আয়োজন করার ক্ষেত্রে ভারতের দাবি আরও জোরাল হবে।
Leave a Reply