Durga Puja 2025: শুরু হয়ে গিয়েছে নবরাত্রি, এই ৯ দিন কী কী নিয়ম পালন করলে সন্তুষ্ট হন দেবী?

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আশ্বিনের শুক্লপক্ষে মহালয়া অমাবস্যার পর দেবীপক্ষের (Durga Puja 2025) সূচনা হয়। মা উমা কৈলাস থেকে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী এবং কার্তিককে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন। বাঙালির কাছে পাঁচদিন ধরে পূজিত হন দেবী উমা। দশমীর দিন আবার স্বামীর গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। এই সময়েই দেবীপক্ষ সূচনার প্রথমা থেকে দশমী পর্যন্ত টানা নয় দিন সারা ভারতের হিন্দু সমাজের মধ্যে পালিত হয় নবরাত্রি উৎসব (Navaratri 2025)। নয় দিনে মা আদ্যাশাক্তি মহামায়াকে নয়টি রূপে পুজো করা হয়ে থাকে। ভক্তরা এই সময় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করে থাকেন। শক্তির উপাসকরা এই নয় দিন কী কী আহার গ্রহণ করেন এবং সেই সঙ্গে কোন কোন নিয়ম পালন করেন আসুন এক নজরে জেনে নিই।

নবরাত্রির অঙ্গ প্রার্থনা, ভজন, কীর্তন এবং সাত্ত্বিক খাবার (Navaratri 2025)

বঙ্গে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) মূলত ষষ্ঠীর বোধন থেকে বিজয়দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত মায়ের আরধনা হয়। এই সময়ে আবার উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম, সমগ্র ভারত জুড়ে পালিত দেবী মায়ের ৯টি অবতারের বিশেষ পুজো। মা দুর্গার নয়টি অবতারকে প্রার্থনা, ভজন, কীর্তন এবং সাত্ত্বিক খাবার পরিবেশন করা হয়। সেই সঙ্গে ভক্তরাও নিজের নিজের জীবন চর্চায় সাত্ত্বিক খাবার খেয়ে থাকেন। ২০২৫ সালের শারদীয়া দুর্গাপুজোর সঙ্গে নবরাত্রি পালিত (Navaratri 2025) হবে ২২ সেপ্টম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত।

স্বল্পাহার এবং উপবাস পালন

নবরাত্রি (Durga Puja 2025) বছরে দুবার পালন করা হয়। একবার আশ্বিন মাসে দেবী দুর্গার অকালবোধনের সময়, আরেকবার বসন্তকালের বসন্ত শুক্লপক্ষে। নবরাত্রীতেই দুর্গা পুজোর দেবীপক্ষের সূচনা হয়। ভক্তরা এই সময় মাকে সন্তুষ্ট করতে সাত্ত্বিক আহারের পাশাপাশি উপবাসও পালন করে থাকেন। অনেকেই যেমন ৯ দিন ধরে স্বল্পাহার এবং উপবাস পালন করেন, আবার কেউ কেউ যুগল রূপে স্বামী-স্ত্রীও উপবাস পালন করে থাকেন। পরিবারের মঙ্গল, বিশ্বসংসার, জগতের কল্যাণ এবং মনের অভীষ্ট ভাবনাকে পূরণ করতেই নবরাত্রিতে (Navaratri 2025) কঠিন ব্রতো পালন করে থাকেন ভক্তরা।

দুরারোগ্য থেকে রক্ষা

মায়ের আরাধনায় নবরাত্রিতে ভক্তরা দিন শুরু করেন ঘর এবং মন্দির পরিষ্কার করে। এরপর স্নান করে মা দুর্গার জন্য ভোগের প্রস্তুতি করেন। ভোগ নিবেদন করে মন্ত্রজপ করে মায়ের ভজন কীর্তন করেন। এরপর ভোগ প্রসাদ হলে সকলে সেই প্রসাদ গ্রহণ করেন। তবে ঐতিহাসিক এবং জ্যোতিষিরা বলেন, এই সময় বর্ষা শেষ এবং শীতের শুরু হয়। তাই এই সন্ধিক্ষণে বর্ষা-গরমের প্রভাব থেকে ক্রমেই ঋতু শীতের দিকে প্রবেশ করলে শারীরকে সবরকম ভাবে প্রস্তুত করতে হয়। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় স্বাস্থ্যকর এবং হালকা খাবারকে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করলে যে কোনও রকম দুরারোগ্য থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কোন কোন খাবারে না, আর কোনটায় হ্যাঁ

নবরাত্রিতে (Navaratri 2025) যে যে খাবার ভক্তরা গ্রহণ করে থাকেন, তার মধ্যে প্রধান একটি গুণ থাকে খাবারে কোনও রকম আমিষ এবং পেঁয়াজ রসুন যুক্ত করা যাবে না। শরীরের জন্য উত্তেজক এমন খাবার বর্জনীয়। এই সময় খাওয়া যাবে না এমন কিছু খাবার হল- গম, চাল, মসুর ডাল, শিমের মতো শস্য এবং ডাল। মাদক বা অ্যালকোহল এবং তামাক সেবন করা যাবে না। মাংস, ডিম, অথবা যেকোনও ধরণের সামুদ্রিক খাবার খাওয়া যাবে না। তবে যে যে খাবার খাওয়া যাবে যেমন- আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়ো, লাউ, কাঁচা কলা ইত্যাদির মতো ফল। একই ভাবে সবজির মতো সাত্ত্বিক খাবারও খাওয়া যাবে। জল, ফলের রস, দুধ, বাটারমিল্ক, লস্যি, পান করা যাবে। তবে সাদা লবণ, চাট মশলা এবং বিট লবণ এড়িয়ে চলা ভালো। কাঁচা লঙ্কা খাওয়া যাবে।

করণীয় কাজ

যাঁরা ৯ দিন ধরে টানা উপবাস করবেন, তাঁদের জন্য বেশ কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলি হল-

১. উপবাসের সময়, নিজেকে সম্পূর্ণ অভুক্ত রাখবেন না। প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর বাদাম এবং ফল খেতে থাকুন।

২. ৯ দিনের (Navaratri 2025) উপবাসের সময়, নবরাত্রির ডায়েট মেনে চলুন। বাদাম, ফল, দুধ এবং মাখনের মতো দুগ্ধজাত পণ্য খেতে পারবেন।

৩. শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সারাদিন জল, দুধ, বাটারমিল্ক এবং তাজা রস পান করুন।

৪. নবরাত্রির (Durga Puja 2025) সময় রান্নার রেসিপিতে বিটলবণ ব্যবহার করুন। এছাড়াও, মশলা ব্যবহার করার সময় জিরা, দারুচিনি, সবুজ এলাচ, লবঙ্গ, কালো মরিচ গুঁড়ো, লাল মরিচ গুঁড়ো এবং কালো মরিচের গুঁড়ো ব্যবহার করুন।

৫. উপবাসের সময় মাথা ঘোরা এবং দুর্বলতা এড়াতে কিছু খাওয়া বা পান করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। এছাড়াও, শরীরে চিনি এবং লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভুলবেন না।

কী কী করবেন না

১. বিশেষজ্ঞদের মতে, নবরাত্রির সময় খাবার তৈরির সময় পেঁয়াজ, রসুন এবং মশলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। উত্তেজক উৎপন্ন করে এমন খাবার এবং সরিষার তেল না খাওয়াই ভালো।

২. নবরাত্রির সময় মাংস, ডিম, মদ এবং তামাক খাওয়াও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

৩. যদি তুমি উপবাস করো তাহলে সন্ধ্যা আরতি বা সূর্যাস্তের আগে ঠিকমতো পেট ভরে খাবার না খেলেই ভালো।

৪. প্যাকেটজাত জুস পান করা এড়িয়ে চলুন কারণ এতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য লবণ এবং প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে।

আর কী কী পুষ্টিকর খাবার খাবেন?

সাবুদানা খিচড়ি

সাবুদানা, জিরা, কাঁচা মরিচ, কারি পাতা মিশিয়ে রান্না করে এবং জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, ভাজা বাদাম, কাচা লঙ্কা, ধনে পাতা, লেবুর রস দিয়ে উপরে মাখিয়ে এই খাবার তৈরি করা হয়। স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ভালো।

নারকেল লাড্ডু

এই সহজ মিষ্টিটি তৈরি করা হয় কুঁচি করা নারকেল, দুধের গুঁড়ো, কনডেন্সড মিল্ক, দুধ, চিনি, এলাচ গুঁড়ো দিয়ে। তারপর লাড্ডুর আকারে তৈরি করে বাদাম দিয়ে উপরে মাখানো হয়।

শসার রায়তা

এই খাবারটি তৈরি করা হয় কুঁচি করে ভাজা শসা দিয়ে। ফেটানো দইয়ের সাথে মিশিয়ে এবং উপরে চিনি, ঘি, কাঁচা মরিচ এবং জিরা দিয়ে মিশিয়ে। শরীরের জন্য খুব ভালো খাবার। ফল হিসেবে এই সময় অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার হল- কলা, আপেল, পেঁপে এবং নাশপাতি। ফলগুলিকে টুকরো করে কেটে উপরে সৈন্ধব লবণ, কাঁচা লঙ্কা এবং ফেটানো দই দিয়ে মেশানো হয়।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share