Guru Nanak Jayanti 2025: “চারটি বেদই সত্য, সেগুলিকে সঠিকভাবে বোঝা ও অনুশীলন করাই প্রকৃত জ্ঞান” , বলেছিলেন গুরু নানক

guru nanak Jayanti 2025 know the importance of the day he reformed bharatiya society through truth

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম ধর্মগুরু গুরু নানক দেব ১৪৬৯ সালে কার্তিক পূর্ণিমার দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাই প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমায় গুরু নানক জয়ন্তী (Guru Nanak Jayanti 2025) পালিত হয়। চলতি বছর ৫ নভেম্বর নানক জয়ন্তী পালিত হবে। শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই তিথিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রকাশ উৎসব ও গুরু পর্ব বলা হয়ে থাকে। শিখ ধর্মাবলম্বীরা পূর্ণিমার দুদিন আগে থেকে উৎসবে মেতে ওঠেন। গুরু নানক দেব জি ভারতীয় সমাজে এক নতুন আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন—সত্য, করুণা ও প্রজ্ঞার মিশ্রণে গড়ে ওঠা মানবতার পথ। তাঁর উপদেশ ও জীবনদর্শন আজও সমাজ সংস্কারের প্রেরণাস্বরূপ। গুরু নানক জয়ন্তী উপলক্ষে সমগ্র দেশজুড়ে তাঁর শিক্ষার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

প্রকাশ উৎসবের মাহাত্ম্য

সারা বছরের পবিত্র পূর্ণিমার মধ্যে অন্যতম হল কার্তিক পূর্ণিমা। এদিন যা দান-পুণ্য করা হয় তা বিশেষ ফলদায়ী। এ দিন দীপদানেরও বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। কার্তিক পূর্ণিমার দুদিন আগে থেকে প্রকাশ উৎসবের অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম দিন অখণ্ড পাঠ করা হয়। এ সময় গুরুদ্বারা ফুল ও আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। প্রধান দিন অমৃত বেলায় এই উৎসব শুরু হবে। সকালে ভজন করার পর কাহিনি পাঠ এবং কীর্তন করা হয়ে থাকে। প্রার্থনার পর লঙ্গর বা ভান্ডারা করা হয়। লঙ্গরের পর কথা ও কীর্তনের পাঠ জারী রাখা হয়। রাতে গুরবাণী গায়নের পর উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। গুরু নানক জয়ন্তীর শুভ দিনে শিখ সম্প্রদায়ভুক্তরা নানান স্থানে লঙ্গরের আয়োজন করেন। এখানে শুদ্ধ ও নিরামিষ খাবার যেমন কড়ি, চাল, লুচি, আলু, ডাল রুটি এবং পায়েস খাওয়ানো হয়।

গুরু নানকের পথ

গুরু নানক দেব জি (Guru Nanak Jayanti 2025) সেই সময়ের ভারতীয় সমাজে ছড়িয়ে পড়া কুসংস্কার, ধর্মীয় ভণ্ডামি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তবে তিনি কখনওই প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান বা বেদ-বেদান্তের বিরোধিতা করেননি। বরং, তিনি বলেন—“চারে বেদ হো এ সচি আর, পড়হ গুনা তনহ চার বি চার।” অর্থাৎ, চারটি বেদই সত্য, কিন্তু সেগুলিকে সঠিকভাবে বোঝা ও অনুশীলন করাই প্রকৃত জ্ঞান। মাত্র নয় বছর বয়সে, তাঁর ‘জানেও’ (পবিত্র সুতো) অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অস্বীকার করেন তিনি। সমাজে তখন অনেকেই এই ধর্মীয় রীতি পালন করলেও মননে ও আচরণে বৈষম্য ও অন্যায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গুরু নানক জি বলেন— “দইয়া কাপাহ সন্তোখু সূত্রু, জতু গণ্ডী সত্যু ভাটু।” অর্থাৎ, করুণা হবে সুতোর তুলো, সন্তোষ হবে সুতো, আর সত্য হবে তার পাক। এই উপমার মাধ্যমে তিনি প্রকৃত ধার্মিকতার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

মানবতার পতাকা তুলে ধরেন

গুরু নানকের সময়ে সমাজ ছিল অস্থির—দেশে বিদেশি আক্রমণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গুরুকুলগুলির ধ্বংস, এবং সমাজের পথপ্রদর্শকদের বিভ্রান্তি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। এই কঠিন সময়েই গুরু নানক দেব জি মানবতার পতাকা উঁচিয়ে ধরেন। ভ্রান্তাচারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা জ্ঞানী বা সন্ন্যাসীর বেশে সমাজবিমুখ হয়েছে, তারা আসলে কোনো উপকার করছে না। বিখ্যাত ভক্ত ভাই গুরদাস জি গুরু নানক দেব জির আবির্ভাব নিয়ে লিখেছিলেন— “সতগুরু নানক প্রগটিয়া, মিটি ধুন্ধ জগ চানন হোয়া।” অর্থাৎ, অন্ধকারে মোড়া সমাজে সত্যগুরু নানকের আবির্ভাবে আলো ছড়িয়ে পড়েছিল।

নানকের উপদেশ প্রচার

গুরু নানক (Guru Nanak Jayanti 2025) তাঁর নিজের উপদেশ প্রচারের জন্য তিনি কার্তারপুরে একটি নতুন নগর স্থাপন করেন এবং সেখানে ‘লঙ্গর’ প্রথার সূচনা করেন—যেখানে সব ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষ একসঙ্গে বসে আহার করেন। এটি ছিল সমতার এক অনন্য প্রতীক। আচল বাতালায় যোগীদের সঙ্গে বিতর্কে তিনি গার্হস্থ্য জীবনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গার্হস্থ্য জীবন ত্যাগ নয়, বরং সেবার ও ন্যায়ের মাধ্যমে ঈশ্বরসাধনা সম্ভব। ‘জপজি সাহিব’-এ গুরু নানক দেব জি কর্মফল তত্ত্বের সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন—
“চঙ্গাইয়াইয়া বুরাইয়াইয়া ভিতর ধরম হদুর, করমি আপো আপণী কে নেডে কে দূর।” অর্থাৎ, মানুষ নিজের কর্মফলের দ্বারাই ঈশ্বরের নিকট বা দূরে হয়।

সৎজনের সেবা ও ঈশ্বর স্মরণ

গুরু নানক জি (Guru Nanak Jayanti 2025) চার পুরুষার্থ—ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ—সম্পর্কেও বলেছেন যে, সৎজনের সেবা ও ঈশ্বরস্মরণই এদের অর্জনের পথ। গুরু নানক দেব জি সত্যিই ভারতীয় জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার সহজ ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন, এমনকি আরব দেশ পর্যন্ত তাঁর বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁর শিক্ষায় আজও সমাজে সত্য, করুণা ও মানবতার আলো জ্বলছে। উন্নত সমাজ গঠনে, গুরু নানক দেবের মূল্যবোধ ও আদর্শ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। গুরু নানক জি’র, সত্য,ন্যায় বিচার এবং সহানুভূতির বার্তা সমাজকে সাফল্যের শিক্ষা দেয়। একই সঙ্গে গুরু নানক জি সততার সঙ্গে জীবন যাপন ও সম্পদের সমবন্টন নীতির প্রচারক ছিলেন। শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে তাঁর পথ গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

 

 

 

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share