মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২২ নভেম্বর কেরল (Kerala) মুখ্যমন্ত্রীর বিশিষ্ট সেবা পদকপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমান্ডিং অফিসার পি. রমনকুট্টিকে (P. Ramankutt) ওয়াইনাডে অত্যন্ত রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর মৃতদেহ একটি অগভীর কূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁর গলায় ২৫ কেজি ওজনের একটি পাথর বাঁধা ছিল। এই ঘটনা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে হতবাক করে দিয়েছে। মৃতদেহ দেখে নিশ্চিত বোঝাই যাচ্ছিল এটি কোনওভাবেই আত্মহত্যা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অনেকেই মনে করছেন এই হত্যাকাণ্ড কোনও জেহাদি সংগঠন করেছে। তবে হিন্দু সংগঠনগুলির দাবি, এটি সম্পূর্ণভাবে তালিবানি হত্যাকাণ্ড। কেরলের বাম সরকার অবশ্য হত্যা নয় আত্মহত্যার বলার চেষ্টা করেই তদন্ত করছে। কিন্তু কট্টর ইসলামি সংগঠনের দৌরাত্ম্য যে ক্রমেই জনজীবনের শান্তি-শৃঙ্খলার ভারসাম্যকে নষ্ট করতে তা বলাই বাহুল্য।
৬০ জনের একটি দল বাড়িতে হামলা করেছে (Kerala)
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২১ নভেম্বর রাতে ভাদুভাঞ্চলে প্রায় ৬০ জনের একটি দল অফিসার পি রমনকুট্টির বাড়িতে হামলা করেছিল। তবে হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই এসডিপিআই-সমর্থকও ছিল। বাড়িতে (Kerala) আক্রমণ করার একদিন পরেই মৃতদেহ (P. Ramankutt) উদ্ধার হয়। পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আক্রমণকারীরা বাড়িটিকে প্রথমে ঘিরে ফেলে, এরপর হুমকি দেয়, বাইরে থেকে আত্মীয়স্বজনরা ঢুকতে চাইলে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চিৎকার করে ঘোষণা করা হয়, রমনকুট্টিকে পালাতে দেওয়া হবে না।” এলাকায় এই ধরনের হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
কেরল মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি
কেরল (Kerala) মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নের কাছে লেখা এক বিস্তারিত চিঠিতে রমনকুট্টির মেয়ের জামাই রঞ্জিত বর্ণনা করে বলেন, “আমি এবং আমার স্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি বাড়িতে অস্ত্র নিয়ে লোকজন ঘেরাও করে ফেলেছে। এসডিপিআইয়ের সমর্থক এক কট্টর ইসলামপন্থী ফয়জল পুলিশের পোশাক পরে উপস্থিত ছিল ঘটনাস্থলে। ওই ব্যক্তি গোটা ঘটনার নেতৃত্ব দেয়। আক্রমণকারীরা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে রমনকুট্টিরকে হত্যা করতেই এই হামলার ছক ছিল তাদের। দুষ্কৃতীরা তাঁকে (P. Ramankutt) ঘরের ভেতরে খুঁজে না পেয়ে রাতভর আশপাশে তল্লাশি চালায়। পরের দিন ভোরে, বাড়ির পিছনের কুয়োর কাছে রমনকুট্টির মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়। কুয়োটির জল ওপরে উঠে এলে পরিবারের বাকি সদস্যরা বুঝতে পারেন একটি বিশাল পাথরের ভারে রমনকুট্টির মৃতদেহ নীচে চাপা পড়ে আছে। তবে কোনওভাবেই আত্মহত্যা নয়। কারণ পুকুরটির গভীরতা খুবই কম। সম্পূর্ণভাবে এটি খুনের পরিকল্পনা।”
তালিবান-ধাঁচের আক্রমণ
তবে হিন্দু সংগঠনগুলি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে আক্রমণ এবং মৃত্যুর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বাস ভ্রমণ সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে রমনকুট্টির সঙ্গে এসডিপিআই (SDPI) ক্যাডারদের ব্যক্তিগতভাবে মতের অমিল হয়েছিল। তবে ক্ষোভ মেটানো এবং একজন সম্মানিত হিন্দু অফিসারকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে আক্রমণের ঘটনা কার্যত জেহাদি হামলার সমতুল। হিন্দু সংগঠনের একাধিক নেতা এই হত্যাকাণ্ডকে “তালিবানী -ধাঁচের আক্রমণ” হিসাবে বর্ণনা করার পক্ষপাতী। তাঁদের সাফ দাবি, রমনকুট্টিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
অভিযুক্তদের এখনও জিজ্ঞাসা করা হয়নি
রঞ্জিতের দাবিগুলি আরও জোরাল হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, ফয়জল নিজে ঘটনার রাতে অফিসিয়াল দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং হামলার জন্য এসডিপিআই সদস্যদের জড়ো করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপকেও ব্যবহার করেছিলেন। যদিও এই হত্যামামলায় পুলিশ ফয়জল এবং শামনাদ সহ প্রধান সন্দেহভাজনদের এখনও পর্যন্ত কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। বরং, অফিসাররা ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে বেশি আগ্রহী। পুলিশের ভূমিকায় পরিবার এবং একাধিক হিন্দু সংগঠন ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত ব্যক্তিদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা করছে কেরলের বাম সরকার।
ওয়াইনাড জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
হিন্দু ঐক্যবেদী সংগঠন হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাদের দাবি, বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। পূর্ণাঙ্গ হত্যার তদন্ত, অভিযুক্ত এসডিপিআই কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সেই রাতে বারবার সাহায্য চেয়েও সহযোগিতা করতে না আসা পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্তের দাবি উঠেছে প্রবলভাবে। শোকাহত পরিবার এখন দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি চেয়েছে। দেশ সেবায় নিয়োজিত একজন ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা (P. Ramankutt) করার প্রতিবাদে ন্যায় বিচার চান এলাকাবাসীরাও।
কতটা শক্তিশালী আইন শৃঙ্খলা
যিনি জীবনের মূল্যবান সময় দিয়ে সমাজের জন্য কাজ করে গেলেন তাঁকে এমন নির্মম হত্যার শিকার কেন হতে হল? তাঁদের প্রশ্ন ওয়াইনাড (Kerala) জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, কীভাবে একজন সম্মানিত হিন্দু অফিসারের ওপর আক্রমণ করা যেতে পারে, অপহরণ করে কীভাবে হত্যা করা যায়? গলায় পাথর বেঁধে জলে ডুবিয়ে মারা হয় যেখানে, সেখানে পুলিশ বলছে আত্মহত্যা! এটা কীভাবে সম্ভব! গোটা ঘটনার সঠিক তদন্ত চান সাধারণ মানুষ।
তবে যদি প্রশাসন মামলার গুরুত্ব উপেক্ষা করে তাহলে হিন্দু সংগঠনগুলি তীব্র আন্দোলনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, রমনকুট্টির জন্য ন্যায়বিচার কেবল একটি পরিবারের দাবি নয়, বরং কেরলের আইন-শৃঙ্খলা কতটা বেঁচে আছে তাও পরীক্ষার সময়। কট্টর জেহাদি সংগঠনকে পরোক্ষভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টির ছাড়পত্র দিয়েছে।

Leave a Reply