Books Written by Mamata: বইয়ের রয়্যালটিতেই তাঁর চলে! তাই কি সরকারের টাকায় মমতার বই কিনছে সরকারি স্কুলগুলি?

19 books written by mamata banerjee sent to school libraries why asked critics

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মমতা (Books Written by Mamata) গর্ব করে দাবি করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি নাকি এক টাকাও বেতন নেন না। তাঁর যা আয়, সবটাই নাকি ছবি এঁকে, গল্প-কবিতার বই লিখে। সেগুলি বেচে যে রয়্যালটি হয়, তাতেই তাঁর চলে যায়। চিটফান্ড বিতর্কের পর এখন অবশ্য আঁকার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। এবার থেকে রাজ্যের স্কুলগুলির লাইব্রেরিতে থাকবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই। স্কুলে-স্কুলে পৌঁছল সেই তালিকাও। মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ১৯টি বই এবার রাখতেই হবে রাজ্য সরকার পরিচালিত স্কুলের গ্রন্থাগারে। শিক্ষা দফতরের এমনই নির্দেশ। বইয়ের তালিকাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, কোন প্রকাশনার বই, তাও উল্লেখ করা রয়েছে নির্দেশিকায়। (মমতার ১৯টি সহ) সবমিলিয়ে স্কুলের লাইব্রেবিতে মোট ৫১৫টি বই রাখতে হবে। এর জন্য স্কুলগুলিকে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে বই কেনার জন্য। রাজ্য পরিচালিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের সংখ্যা প্রায় ২০২৬। যদি ধরা যায় সকলে এক লক্ষ করে পাবে, তাহলে সরকারি কোষাগারে খরচ ২০ কোটি। এখন প্রশ্ন সরকারি টাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার লেখা বই কিনবে রাজ্য সরকারি ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি। সেই টাকা পাবে প্রকাশনা সংস্থাগুলি। সেই প্রকাশনা থেকে রয়্যালটি বাবদ টাকা পাবেন বইয়ের লেখিকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে, কোথাকার টাকা কোথায় গেল? আর মমতা যদিই বা সেই টাকা আবার পার্টি ফান্ডে দান করেন, তাহলে কী দাঁড়াল, বুঝতেই পারছে সকলে। তাই ইতিমধ্যেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক।

কী রয়েছে নির্দেশিকায়

জানা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর (Books Written by Mamata) লেখা ‘মা’ থেকে ‘কথাঞ্জলী’, সব বই রাখতে হবে সরকারি স্কুলের গ্রন্থাগারে। এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ৫১৫টি বই স্কুলকে কিনে রাখতে হবে গ্রন্থাগারে। এই ৫১৫টি বইয়ের মধ্যে ১৯টি বই মুখ্যমন্ত্রীর। ইতিমধ্যেই গ্রন্থাগারের জন্য স্কুলে-স্কুলে গিয়েছে ১ লক্ষ টাকা। তারপর পৌঁছে গেল বইয়ের তালিকাও। বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, প্রথমে মমতার লেখা বই পৌঁছবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। বইয়ের প্রথম সেট পৌঁছবে আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, মালদহ, শিলিগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরে। এরপর দ্বিতীয় সেট পৌঁছবে, বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার স্কুলগুলিতে। তৃতীয় সেট পৌঁছবে, হুগলি, দক্ষিণ দিনাজপুর, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে। এরপর চতুর্থ সেট পৌঁছবে, ব্যারাকপুর, হাওড়া, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সব শেষে বই পৌঁছবে, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুরে। রাজ্যের ২,০২৬টি স্কুলের পাঠাগারে বই কিনতে ২০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। সেই হিসেবে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ১ লক্ষ টাকা। স্কুলগুলিতে বইয়ের তালিকাও পাঠানো হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর লেখা কোন কোন বই তালিকায় আছে?

১) কন্যার চোখে কন্যাশ্রী।
২) বিকেলটা হারিয়ে গিয়েছে।
৩) আমার পাহাড়।
৪) আমার জঙ্গল।
৫) চোখের তারা।
৬) জীবন সংগ্রাম।
৭) কুৎসাপক্ষ।
৮) এক পলকে, এক ঝলকে।
৯) সোজাসাপটা।
১০) কথায় কথায়।
১১) পরিবর্তন।
১২) নন্দীমা।
১৩) অনশন কেন?
১৪) জাগো বাংলা।
১৫) একান্তে।
১৬) আন্দোলনের কথা।
১৭) অশুভ সংকেত।
১৮) অনুভূতি।
১৯) সেরা মমতা একত্র।

কোন প্রকাশনা থেকে কিনবেন

শুধু বইয়ের নাম নয়, রাজ্যের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বইগুলি কোন কোন প্রকাশনা সংস্থা থেকে কিনতে হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকাশকদের মধ্যে রয়েছে কিছু নামকরা সংস্থা, যারা মুখ্যমন্ত্রীর বই প্রকাশ করে। এই নিয়মের ফলে ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বলে সরকারের দাবি। তবে, কিছু শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, নির্দিষ্ট প্রকাশকদের থেকে বই কেনার বাধ্যবাধকতা স্কুলের স্বাধীনতাকে কিছুটা সীমাবদ্ধ করছে। শিক্ষাবিদ ও সমালোচকরা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আরও বলেছেন লাইব্রেরিতে বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও বৈচিত্র্য থাকা উচিত ছিল। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির লেখা বইয়ের উপর এতটা জোর দেওয়া শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত করতে পারে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্বসাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস বা অন্যান্য বিষয়ের বইয়ের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীর বইয়ের উপর এতটা গুরুত্ব দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত।

শিক্ষক মহলের তীব্র বিরোধিতা

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেছেন, “আমরা নজিরবিহীন এই নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই শর্ত তুলে নিতে হবে। পরাধীন ভারতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর থাকাকালীন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার স্বাধিকার হরণের শর্ত দিয়েছিল ইংরেজ শাসক। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (অথচ) আজ আমরা স্বাধীন দেশে শাসকের একইরকম পদধ্বনি শুনছি। এ অত্যন্ত লজ্জার। লাইব্রেরির মতো পবিত্র জায়গায় সরকারি অনুদানের সঙ্গে কোনও শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে আমরা। পাশাপাশি এই শর্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।” বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সরকারি পয়সায় আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই বিভিন্ন বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পাঠানো হচ্ছে শুনে অবাক হলাম। এটা বিস্ময়কর ঘটনা। এটা মনে করতে পারছি না আমাদের রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী এর আগে কিংবা অন্য রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল থাকাকালীন এই ধরনের ঘটনা পূর্বে ঘটিয়েছেন কি না। আমরা এটা ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মনে করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন ছাড়াই যদি শিক্ষা দফতর এই সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে মুখ্য়মন্ত্রীর উচিত শিক্ষা-দফতরকে নির্দেশ দেওয়া যাতে তাঁর লেখা বই গ্রন্থাগারে না যায়।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share