মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহালয়ার অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের (Durga Puja 2025) সূচনা হয়। পরের দিন, অর্থাৎ শুক্ল প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হয় নবরাত্রি (Navaratri 2025)। যা চলে দুর্গা নবমী পর্যন্ত। এই নবরাত্রিতে দেবী দুর্গা নয়টি ভিন্ন রূপে পূজিতা হন। নবদুর্গার (Nabadurga) এই নয়টি রূপ হল— দেবী শৈলপুত্রী, দেবী ব্রহ্মচারিণী, দেবী চন্দ্রঘণ্টা, দেবী কুষ্মাণ্ডা, দেবী স্কন্দমাতা (Devi Skandamata), দেবী কাত্যায়নী, দেবী কালরাত্রি, দেবী মহাগৌরী এবং দেবী সিদ্ধিদাত্রী।
পুরাণ অনুযায়ী, দেবাদিদেব মহাদেবের পুত্র হলেন দেব সেনাপতি কার্তিক। তাঁর অপর নাম স্কন্দ। স্কন্দমাতা (Devi Skandamata) মানে হল কার্তিকের মাতা। দেবী পার্বতীর এই রূপেরই পুজো করা হয় নবরাত্রির পঞ্চমীর দিন। কার্তিকের জন্মবৃত্তান্ত এবং মাতা পার্বতীর স্কন্দমাতা হয়ে ওঠার কাহিনি জানতে হলে অপর একটি পৌরাণিক কাহিনি শুনতে হবে (Durga Puja 2025)।
অসুর-দেবতা যুদ্ধ
পুরাকালে বজ্রাঙ্গ নামে এক অসুর রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন দিতির পুত্র। দেবতাদের রাজা ইন্দ্রকে বজ্রাঙ্গ সিংহাসনচ্যুত করে বন্দি করেন। দেবতাদের প্রতি বজ্রাঙ্গের এই রোষ আসলে ছিল তাঁর প্রতিশোধ। কারণ ইতিপূর্বে দিতির অসংখ্য পুত্রকে মানে বজ্রাঙ্গের নিজ ভাইদের দেবতারা হত্যা করেছিলেন। বজ্রাঙ্গের হাতে বন্দি ইন্দ্রকে মুক্ত করতে আসেন ব্রহ্মা এবং কাশ্যপ মুনি। কাশ্যপ মুনি ছিলেন বজ্রাঙ্গের পিতা, অর্থাৎ দিতির স্বামী। ব্রহ্মা এবং কাশ্যপ মুনির অনুরোধে বজ্রাঙ্গ তখনকার মতো ইন্দ্রকে (Durga Puja 2025) মুক্ত করেন।
দৈত্য হয়েও এমন দয়ার ভাব বজ্রাঙ্গের মধ্যে দেখতে পেয়ে ব্রহ্মা তাঁকে বরদান করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। বজ্রাঙ্গ তখন তপস্বী হওয়ার বর প্রার্থনা করলেন এবং বাকি জীবন যেন তিনি ধর্মপথে চলতে পারেন, সেই আশীর্বাদ ব্রহ্মার কাছে চাইলেন। ব্রহ্মা তাঁর মানসকন্যা বরাঙ্গীর সঙ্গে বজ্রাঙ্গের বিবাহ দিলেন। বজ্রাঙ্গ এবং বরাঙ্গী বনের মধ্যে কুটির বানিয়ে ধর্মকর্ম করতে লাগলেন। বজ্রাঙ্গ তপস্যায় রত থাকতেন এবং বরাঙ্গী গৃহস্থের কর্ম সম্পাদন করতেন।
বরাঙ্গীর গর্ভে জন্ম হল তারকাসুরের
একদিন দেবরাজ ইন্দ্র ওই কুটিরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বরাঙ্গীকে দেখতে পেয়ে পুরনো অপমানের বদলা নিতে চাইলেন। কখনও বানর সেজে, কখনও ভেড়া বা কখনও সাপ হয়ে কুটির লন্ডভন্ড করতে লাগলেন। ক্রন্দনরত অবস্থায় বরাঙ্গী তাঁর স্বামী বজ্রাঙ্গকে এসব বিষয়ে বললে, বজ্রাঙ্গ ব্রহ্মাকে স্মরণ করলেন। ব্রহ্মা প্রকট হয়ে বর দিতে চাইলে বজ্রাঙ্গ বললেন, “আমাকে এমন পুত্র দিন, যে দেবতাদের উপর অত্যাচার করতে সমর্থ হবে।” ব্রহ্মা বজ্রাঙ্গের মনমতো বরদান করলেন। বরাঙ্গীর গর্ভে জন্ম হল তারক নামের অসুরের।
পরবর্তীতে তারকাসুরের উপর ব্রহ্মার বরদান ছিল যে, “একমাত্র শিবের বালকপুত্র ছাড়া, কারও হাতে তিনি হত হবেন না।” ব্রহ্মার বরদানে অজেয়, অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তারকাসুর। কারণ তিনি জানতেন শিব কখনও বিবাহ করবেন না এবং ত্রিভুবনে ব্রহ্মার বরদানে তাঁকে হত্যা করতে পারে, এমন ক্ষমতা কোনও দেবতা, মানুষ বা জীবজন্তুর নেই। তারকাসুর দেবলোক নিজের দখলে আনেন। দেবরাজ ইন্দ্র সিংহাসনচ্যুত হলেন। বিতাড়িত দেবতারা বুঝতে পারলেন শিবের বিয়ে দিতে পারলে তবে তাঁর পুত্রই তারকাসুরকে বধ করতে পারবেন।
শিব-পার্বতীর বিবাহ ও স্কন্দের জন্ম
আয়োজন শুরু হল শিব-পার্বতীর বিবাহের। সেখানেও তারকাসুরের আক্রমণ হল। পার্বতী দেবী (Durga Puja 2025), মাতা চন্দ্রঘণ্টার রূপধারণ করে অসুরদের বিতাড়িত করলেন। এরপর সুসম্পন্ন হল শিব-পার্বতীর বিবাহ। জন্ম হল কার্তিকের। মাতা পার্বতী তখন হলেন স্কন্দমাতা (Devi Skandamata) অর্থাৎ কার্তিক জননী। দৈববাণী পেয়ে দেবরাজ ইন্দ্র কার্তিককে সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এক প্রবল যুদ্ধে কার্তিকের হাতে তারকাসুর হত হলেন। দেবতারা তাঁদের হৃত স্বর্গরাজ্য পুনরায় নিজেদের দখলে আনলেন। এমনটাই লেখা রয়েছে “স্কন্দ পুরাণে”।
স্কন্দমাতার বিবরণ
স্কন্দমাতার অপর নাম কার্তিকেয়। ত্রিনয়নী মাতার (Durga Puja 2025) কোলে তাঁর শিশুপুত্রকে দেখতে পাই আমরা। এই শিশুপুত্রই হলেন স্কন্দ বা কার্তিক। স্কন্দমাতা স্নেহ, মায়া, সন্তান বাৎসল্য-এর প্রতীক। মাতার ভক্তরা মনে করেন দেবীর পুজো করলে সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়, জীবনের সকল বাধাবিঘ্ন দূর হয়, অশুভ শক্তি বিনষ্ট হয়, সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে জীবন। দেবী পদ্মাসনা। তাঁর বাহন সিংহ। তাঁর দুই হাতে দুটি পদ্ম। একহাতে কার্তিককে ধরে থাকেন। অপর হাত বর-মুদ্রার ভঙ্গিতে থাকে। যার দ্বারা ভক্তদের উদ্দেশে সর্বদাই আশীর্বাদ বর্ষিত হয়। স্কন্দমাতার পুজো করলে শত্রু বিনাশ হয়, শক্তি বৃদ্ধি হয়, এমনটাই মনে করেন ভক্তরা। স্কন্দমাতার পুজোতে সাদা রঙের পোশাক পরলে মাতা প্রসন্ন হন, এমনটাই প্রচলিত ধারণা রয়েছে। দেবীর আশীর্বাদ পেতে ভক্তরা নৈবেদ্যতে কলা বা কদলী ভোগ দেন।
Leave a Reply