মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ না করলে পাকিস্তানকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট জানালেন, অপারেশন সিঁদুরে শেষপর্যন্ত নয়াদিল্লি অব্যাহতি দিলেও পরবর্তী সময়ে আর তেমন কিছু হবে না। আর সংযম দেখাবে না ভারত। সবকিছুরই শেষ থাকে, ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে চলেছে ভারত, তাই আর নয়। ভারতীয় সেনাকে তৈরি থাকার বার্তাও দিয়েছেন সেনাপ্রধান। অপারেশন সিঁদুরের পরও সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ করেনি পাকিস্তান। সীমান্তে এখনও সমানতালে চলছে অনুপ্রবেশের চেষ্টা। সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর দাবি, অপারেশন সিঁদুর ১০ মে শেষ হয়নি। ১০ মে-র পরও সবার অলক্ষে লড়াই চলছে।
জঙ্গিদের মদত নয়
শুক্রবার রাজস্থানের অনুপগড়ে সেনার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন আর্মি চিফ। সেখানেই ফের ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করার হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। জেনারেল উপেন্দ্র বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের সময়ে আমরা সংযম দেখিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার আর দেখাব না। কোনও রেয়াত করা হবে না।’ এর পরেই হুঁশিয়ারির সুরে আর্মি চিফ বলেন, ‘পাকিস্তান যদি ভূগোলে নিজেদের জায়গা ধরে থাকতে চায়, তাহলে জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ করতেই হবে।’ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিলেন, ‘জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ করুন। নাহলে মানচিত্রে আপনাদের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।’ রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে ভারতের সেনাপ্রধান জানান, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করতে হবে পাকিস্তানকে।
সেনাকে প্রস্তুত থাকার বার্তা
সেনাকে প্রস্তুত থাকার বার্তাও দেন সেনাপ্রধান। জেনারেল উপেন্দ্র বলেন, ‘ভারত এবার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ঈশ্বর চাইলে আপনারা শীঘ্রই সুযোগ পাবেন। শুভকামনা রইল।’ গুজরাটের ভুজে একটি সামরিক ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দশেরা পালনের সময়ে পাকিস্তানকে একই ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। তিনি বলেছিলেন, ‘স্যর ক্রিক এলাকায় পাকিস্তানের যে কোনও আগ্রাসনের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে, যা ইতিহাস এবং ভূগোল উভয়ই বদলে দিতে পারে।’ তার পরেই আর্মি চিফের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সম্প্রতি সার ক্রিক অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এই নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাজনাথ বলেন, ‘পাকিস্তানের মনে রাখা উচিত যে করাচি যাওয়ার একটি পথ এই খালের (স্যর ক্রিক) মধ্য দিয়ে গিয়েছে।’
‘অপারেশন সিঁদুর ২’-এর অপেক্ষা
অন্য দিকে, ৯৩ তম এয়ার ফোর্স ডে সেলিব্রেশনে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা বলতে গিয়ে পাকিস্তানের ১০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের প্রসঙ্গ টানেন বায়ুসেনা প্রধান অমরপ্রীত সিং। তিনি জানান, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতীয় সেনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অভিযান। সীমান্ত থেকে পাকিস্তানের ৩০০ কিমি অভ্যন্তরে ঢুকে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তিনি বলেন, ‘পহেলগাঁওকাণ্ডে পাকিস্তানকে দাম দিতে হয়েছে। ইতিহাসে অপারেশন সিঁদুরকে মনে রাখা হবে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখেই ৩-৪ দিনে যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’ এয়ার চিফ মার্শালের দাবি, ‘পাকিস্তানের ৪-৫টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে। সমসংখ্যক জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানও ধ্বংস হয়েছে। একটি সি-১৩০ বিমান ও মিসাইল সিস্টেমও ধ্বংস হয়েছে।’ সেনাপ্রধান, বায়ুসেনা প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সবার গলাতেই এক সুর। তাহলে কি এবার ‘অপারেশন সিঁদুর ২’!
ঘরে-বাইরে বিধ্বস্ত পাকিস্তান
এদিকে, সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল পাক অধিকৃত কাশ্মীর। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব পাক সরকারের। ঘরের মধ্যেই লাগাতার আন্দোলনে নাস্তানাবুদ পাক প্রধানমন্ত্রী। অশান্তির জন্য বহিরাগত শক্তিকে দায়ী করেছে পাক প্রশাসন। সূত্রের খবর, উত্তপ্ত অঞ্চলে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। প্রতিনিধি দলকে মুজফফরাবাদে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। এই আবহে ভারতীয় সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে আরও বিপাকে ফেলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কথাই স্মরণ করালেন সেনাপ্রধান!
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ যায় ২৬ জনের। সেই হামলার ঘটনায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের যোগসাজশের প্রমাণ মেলে। ৭ মে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সিঁদুর অভিযান চালায় ভারত। পাকিস্তানে ন’টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে প্রায় ১০০ জঙ্গি নিহত হয়। পাকিস্তান ভারতে হামলার চেষ্টা চালালে তা ব্যর্থ করে এ দেশের সেনাবাহিনী। ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ভারত এবং পাকিস্তান। তার কয়েক দিন পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও জানিয়েছিলেন যে, সিঁদুর অভিযান শেষ হয়নি। ভবিষ্যতে প্ররোচনা দিলে আরও কড়া জবাব দেবে ভারত। এ বার কি সে কথাই আরও এক বার মনে করিয়ে দিলেন ভারতের স্থলসেনাপ্রধান?
Leave a Reply