মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উত্তরবঙ্গ যখন বানের জলে ভাসছে, তখন কলকাতায় পুজোর কার্নিভালে গানের তালে কোমর দোলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী! এই উত্তরবঙ্গেরই নাগরাকাটার (Nagrakata) বামনডাঙা এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে আক্রান্ত বিজেপির (BJP) দুই নেতা। এঁদের মধ্যে একজন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, অন্যজন সাংসদ খগেন মুর্মু। স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যাওয়ার পরপরই বিজেপির এই দুই নেতাকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটবৃষ্টি হয়। ইটের ঘায়ে জখম হন শিলিগুড়ির বিধায়ক। তাঁর গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। ইটের ঘায়ে গুরুতর জখম হন মালদা উত্তরের সাংসদ বিজেপির খগেন মুর্মুও। তাঁর মাথা ফেটে গিয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে সাংসদের শরীর। তছনছ করা হয়েছে শংকরের গাড়িও। তাঁকে জুতোও মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁদের। বিজেপির দাবি, বিধায়ক এবং সাংসদের ওপর এই হামলার ঘটনায় রয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত।
‘দিদি দিদি’ করে চিৎকার (BJP)
শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতকও। দুপুরের দিকে ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, “শিলিগুড়ির দিকে রওনা দিয়েছি আমরা। খগেনদা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। আমাদের আগের গাড়ির একটাও কাচ নেই। আমার সারা শরীর কাচে ভর্তি। খগেনদার অবস্থা দেখুন। ত্রাণ দেওয়ার জন্য খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম আমরা। আমি, খগেনদা লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। সেই সময় কিছু লোক ‘দিদি দিদি’ করে আমার কাছে আসেন। কেন আমরা এসেছি, কী করব এখানে – এ সব জিজ্ঞেস করে তারা হঠাৎই গালাগালি দিতে শুরু করে। তার পরেই পিছন থেকে শুরু করে মারধর। রিলিফ দিতে এসে দেখুন আমাদের সাংসদের কী অবস্থা করেছে।”
‘‘রাজ্যে দুষ্কৃতীদের শাসন চলছে’’: শমীক
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বঙ্গ পদ্ম শিবির। বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আজ নাগরাকাটায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত সাংসদ খগেন মুর্মু। এ রাজ্যে আইনের শাসন নয়, দুষ্কৃতীদের শাসন চলছে। গতকাল উত্তরবঙ্গের এতবড় ক্ষয়ক্ষতির পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আর আজ তাঁদের দলের দুষ্কৃতীরা এভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে।”
“মমতাকে আতঙ্ক গ্রাস করেছে’’, প্রতিক্রিয়া শুভেন্দুর
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুন্ডারা পরিকল্পিতভাবে বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের ওপর হামলা চালিয়েছে।” এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখন আতঙ্ক গ্রাস করেছে। উত্তরবঙ্গ যখন ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধ্বসের কবলে, যখন বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ও হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন, সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন, সেই সময়ে তিনি সেলিব্রিটিদের সঙ্গে কার্নিভালে নাচানাচি করছিলেন। তাঁর এই অমানবিক আচরণে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে ক্ষুব্ধ ও বীতশ্রদ্ধ এই বাস্তবটা দেরিতে হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশেষে উপলব্ধি করেছেন। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে ও ক্রমবর্ধমান জনরোষে হতচকিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার অস্ত্রটিকে বেছে নিয়েছেন – তাঁর তথাকথিত বিশেষ সম্প্রদায়ের গুন্ডাদের বিজেপি (Nagrakata) নেতাদের ওপর হামলা করতে উসকানি দিয়েছেন, যাতে তাঁরা ত্রাণ কাজে বা অন্যান্য সাহায্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে না পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপিকে এভাবে ভয় দেখিয়ে থামানো যাবে না। আপনার ভয় ও তোষণের রাজনীতি বাংলার জনগণের ঐক্য ও সাহসের কাছে পরাস্ত হবে।”
“বাংলায় তৃণমূলের জঙ্গলরাজ’’, অমিত মালব্যর প্রতিক্রিয়া
এক্স হ্যান্ডেলে বিজেপি (BJP) নেতা অমিত মালব্য লিখেছেন, “বাংলায় তৃণমূলের জঙ্গলরাজ! উত্তর মালদার দুবারের সাংসদ ও সম্মানিত আদিবাসী নেতা বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে সাহায্য করতে যাওয়ার পথে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা করেছে।” প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির (Nagrakata) নেতা নিশীথ প্রামাণিক বলেন, “বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পাশে দাঁড়ানোর সময় এটা। দলমত নির্বিশেষে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। এই সময়ও রাজনীতি করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। সাংসদকে প্রাণে মেরে ফেলার মতো করে আক্রমণ করা হল, এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
‘‘বাংলার মানুষ এই কাপুরুষতা ভুলবে না’’, তোপ সুকান্তর
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি গতকাল উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ এবং বহু মানুষের মর্মান্তিক প্রাণহানির খবর পাওয়ার পরেও রেড রোডের কার্নিভাল মঞ্চে উদযাপনে মেতেছিলেন, তিনি স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন — বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের কর্মী ও নেতাদের প্রতি তিনি কতটা ভীত হয়ে পড়েছেন, যাঁরা গতকাল থেকেই নিরলসভাবে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষ এই কাপুরুষতা ও নির্লজ্জতা কখনও ভুলবে না (Nagrakata)।”
‘‘ক্ষমার অযোগ্য’’: সম্বিত পাত্র
বিজেপি (BJP) নেতা সম্বিত পাত্র বলেন, “আজ বাংলায় যখন মানুষ মরছিল এবং গ্রামগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল, তখন বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করতে নাগরাকাটার পথে যাচ্ছিলেন সম্মানিত আদিবাসী নেতা ও দুবারের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু সেই সময় তাঁর ওপর নির্মম হামলা চালানো হয়। তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করতে যাওয়া একজন সাংসদের ওপর এই ধরনের হামলা ক্ষমার অযোগ্য।”
Leave a Reply