Diabetes: বয়ঃসন্ধিকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের তালিকায় প্রথম সারিতে ভারত! বলছে আইসিএমআর রিপোর্ট

world diabetes day 2025 india among top in adolescent suffering diabetes say icmr report

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

প্রৌঢ়দের মধ্যে রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। বয়সের বেড়াজাল পেরিয়ে ডায়াবেটিস এখন বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা হয়ে উঠছে। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাই প্রথম থেকেই রোগ নিয়ন্ত্রণে সতর্কতা জরুরি। না হলে সুস্থ জীবন যাপন কঠিন হয়ে উঠবে।

কোন পরিসংখ্যান উদ্বেগ বাড়াচ্ছে?

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-র তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বয়ঃসন্ধিকালে থাকা প্রায় ৯৬ হাজার ছেলেমেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ভারতে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের দাপটও বাড়ছে। মূলত অস্বাস্থ্যকর জীবন‌ যাপনের জেরেই এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে‌। ওই পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালে থাকা ছেলেমেয়েদের ডায়াবেটিস আক্রান্তের নিরিখে ভারত প্রথম সারিতেই রয়েছে। স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বিপুল ভাবে বেড়ে যাওয়া যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল।

কেন স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে ডায়াবেটিসের দাপট বাড়ছে?

ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভারতে মূলত দুই ধরনের ডায়াবেটিসের দাপট দেখা যায়। টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস। শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি ব্যবস্থার জেরেই এই সমস্যা হয়। তাঁরা জানাচ্ছেন, অগ্নাশয়ে ইনসুলিন হরমোন তৈরির ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। তার জেরেই টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের সমস্যা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বংশানুক্রমিক ডায়াবেটিস আক্রান্তের সমস্যা থাকলে, পরিবারের শিশুরা এই রোগের শিকার হয়।

তবে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে টাইপ-টু ডায়াবেটিস। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছরে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে টাইট-টু ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, খাদ্যাভাস ও অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, শিশুদের মধ্যে ব্যাপক হারে ওবেসিটি দেখা দিচ্ছে। অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা টাইপ-টু ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়াচ্ছে।

বয়ঃসন্ধিকালে ডায়াবেটিসের প্রকোপ কেন বাড়তি উদ্বেগজনক?

ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস নানান রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এই রোগ দীর্ঘ সুস্থ জীবন যাপনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই এই রোগের প্রকোপ থাকলে পরবর্তী সময়ে নানান শারীরিক জটিলতা বাড়তে পারে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস হৃদরোগ, কিডনির সমস্যার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়ার সমস্যাও তৈরি করে। শরীরের একাধিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। বন্ধ্যাত্বের সমস্যা তৈরি করতে পারে। আবার ডায়াবেটিস শরীরকে বাড়তি ক্লান্ত করে দেয়। তাই পড়াশোনা এবং খেলার ক্ষেত্রেও শিশুর স্বাভাবিক ছন্দপতন হতে পারে। তাই কম বয়সে ডায়াবেটিসের প্রকোপ উদ্বেগজনক। শিশুকাল থেকে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দেখা দিলে তরুণ বয়সে কর্মক্ষমতা বাধার মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, তিরিশ পেরনোর আগেই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের সমস্যার মতো জটিল স্বাস্থ্য সঙ্কট তৈরি হতে পারে।

সন্তানের সুস্থ থাকার চাবিকাঠি কী?

দেশজুড়ে কৈশোর কালের উপরে ডায়াবেটিসের প্রকোপ রুখতে পারে সচেতনতা। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসক রচনা মজুমদার জানান, কৈশোর কালে ডায়াবেটিস মোকাবিলার মূল অস্ত্র খাদ্যাভাস।‌ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলেও রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। কলকাতার আরেক এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ জানান, কৈশোরে পা দেওয়ার আগেই বহু ছেলেমেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। যার ফলে শরীরে নানান হরমোনঘটিত ভারসাম্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ছে। বাড়ির তৈরি ঘরোয়া ফ্রেশ খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেই এই রোগের প্রকোপ মোকাবিলা সহজ হয়। ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন-র তরফেও জানানো‌ হচ্ছে, সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রথম থেকেই কোন পদক্ষেপ নিতে হবে, সে নিয়ে সচেতনতা জরুরি। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে এই সচেতনতার অভাব রয়েছে। শিশুরা যার ফল‌ ভোগ করছে।

চিকিৎসকদের একাংশের পরামর্শ, নিয়মিত ফল ও সব্জি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন। শিশুদের সকালের জলখাবার কিংবা সন্ধ্যার খাবার মানেই প্যাকেটজাত চটজলদি খাবার নয়। বরং বাড়িতে তৈরি রুটি, সব্জি, ডাল নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। অধিকাংশ শিশু প্রয়োজনীয় সব্জি, ফল খায় না। তার পরিবর্তে প্যাকেটজাত এমন কিছু খাবার খায়, যার কোনো পুষ্টিগুণ নেই। তাতে নানান রাসায়নিক দেওয়া থাকে। ফলে শরীরের একাধিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার পায় না। এর ফলে শরীরে একাধিক রোগের প্রকোপ বাড়ে। ওজন বাড়ে। যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘরোয়া খাবার খাওয়ার পাশপাশি শারীরিক কসরত জরুরি। ছোটো থেকেই যোগাভ্যাস কিংবা অন্যান্য শারীরিক কসরতে অভ্যস্থ হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমবে।

 

 

DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share