মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিল অনুমোদনে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আদালতের কাজ নয়। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) জানিয়েছে, রাজ্যপাল কোনও বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না। হয় সেটাতে সম্মতি দিতে হবে। নয় বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে হবে। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, সংবিধান ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু ক্ষেত্রে নমনীয়তা রেখেছে, আর সেই জায়গায় সময়সীমা চাপিয়ে দেওয়া হলে সেই নমনীয়তায় ব্যাঘাত ঘটবে। তাতে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হবে।
কী বলল শীর্ষ আদালত
রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের কাছে কোনও বিল পাঠানো হলে তাঁদের কী করা উচিত, এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রশ্ন উঠছিল। তামিলনাড়ুর করা মামলার রায়ে সেই বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, লোকসভা বা বিধানসভা থেকে পাশ হওয়া বিলগুলিতে সম্মতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালদের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না ৷ একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যপালরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল আটকে রাখতে পারেন না ৷ এটা আদতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি লঙ্ঘন করার সামিল। প্রধান বিচারপতি বিআর গভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সুর্যকান্ত, বিক্রম নাথ, পিএস নরসিমহা ও এএস চন্দরকর। ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স’ মামলায় বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া, ক্ষমতা পৃথকীকরণকে অসম্মান করার সামিল ৷ শীর্ষ আদালত এও জানিয়েছে, ২০০ এবং ২০১ অনুচ্ছেদ আদতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই ভারসাম্য রক্ষার জন্যই তৈরি করা হয়েছে ৷ ফলে সময়সীমা আরোপ করলে এর বিপরীত অবস্থানে যাওয়া হবে।
কী করবেন রাজ্যপাল
কোনও বিল রাজ্যের আইনসভায় পাশ হওয়ার পর রাজ্যপালের কাছে গেলে, তাঁর কী করণীয়, তা ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত জানায়, রাজ্যপালের সামনে তিনটি সাংবিধানিক বিকল্প রয়েছে। ১) বিলটিতে সই করা, ২) সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো, ৩) সম্মতি না-দিয়ে বিলটি বিধানসভায় ফেরত পাঠানো। একই সঙ্গে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে, এই তিনটি বিকল্পের মধ্য থেকে কোনটি বেছে নেবেন— এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্যপালই। এটি আদালতের বিবেচনার বিষয় নয় বলে জানায় সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি গভাই বলেন, “রাজ্যপালকে কত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেই সময়সীমাও আদালত নির্ধারণ করে দিতে পারে না।” একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি তাঁদের কাজ কী ভাবে করছেন, তা আদালতের বিচারযোগ্য নয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে কোনও পদক্ষেপ না-করা, অনির্দিষ্ট কাল ধরে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা এবং সেটির কোনও ব্যাখ্যা না দেওয়া—এই সমস্ত ক্ষেত্রে আদালত সীমিত নির্দেশ দিতে পারে, যাতে তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন।
কী করতে পারে আদালত
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে শীর্ষ আদালত জানায়, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের কাজের উপর সাধারণ ভাবে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপ করা যায় না। তবে দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ক্রিয়তা থাকলে সাংবিধানিক আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৩ উদ্ধৃত করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কোনও বিল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতিকে প্রতি বার শীর্ষ আদালতের মতামত চাইতেই হবে— এমন বাধ্যবাধকতা নেই। অনুচ্ছেদ ১৪২ অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের ক্ষমতা পূরণ করতে পারে না বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে আদালত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, বিল আইনে পরিণত না হলে, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
কোন প্রক্ষিতে এই অভিমত
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এ বছরের মে মাসে সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি রেফারেন্স পাঠিয়েছিলেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কোনও আদালত কি রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতিকে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিতে পারে? বিশেষত তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতেই রাষ্ট্রপতির এই প্রশ্ন ছিল। সংবিধানের ১৪৩ ধারা প্রদত্ত বিশেষ অধিকার বলে শীর্ষ আদালতের রায় নিয়ে ১৪টি প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। যার ফলে ওই রায় পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স বেঞ্চ তৈরি হয়। বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সম্মতি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট । তার পরেই এই বিষয়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাখ্যা করতে শীর্ষ আাদালতের সামনে ১৪টি প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। এ ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির থেকে মতামত নেওয়ার পর গত জুলাই মাস থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স মামলার শুনানি চলছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল, তারা রাজ্যপালকে বিল সইয়ের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিরোধী।

Leave a Reply