Akhil Bharatiya Samanvay Baithak: দক্ষিণবঙ্গের থেকে উত্তরে জোর, অখিল ভারতীয় সমন্বয় বৈঠকেও উঠল পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রেবেশের কথা

akhil bharatiya samanvay baithak of the rashtriya swayamsevak sangh, concludes in jodhpur on sunday

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (Rashtriya Swayamsevak Sangh)-এর অখিল ভারতীয় সমন্বয় বৈঠকেও (Akhil Bharatiya Samanvay Baithak) উঠল পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রেবেশের কথা। রবিবার সমন্বয় বৈঠকের শেষ দিনে সাংবাদিক সম্মলনে সংঘের অখিল ভারতীয় প্রচার প্রধান সুনীল আম্বেকর জানান পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ও নাগরিক নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় আরএসএস-এর সভায়। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিংসা হ্রাস ও উন্নয়নের ধারাকে ইতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মণিপুরে সম্প্রতি সংঘটিত ঘটনাগুলিতে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা, সমাজ ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় এই সভায়।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা

শুক্রবার রাজস্থানের যোধপুরে আরএসএস-এর তিন দিনের সমন্বয় বৈঠক শুরু হয়, চলে রবিবার পর্যন্ত। এখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়৷ দেশজুড়ে সঙ্ঘ পরিবারের যে ৩২টি শাখা রয়েছে, সেখানকার শীর্ষ পদাধিকারীরাও এই বৈঠকে এসেছিলেন। বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন সরসংঘচালক মোহন ভাগবত৷ বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা–সহ এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং প্রথম সারির বিজেপি নেতারা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই মোদি সরকারের কার্যকাল এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে জনজাতি অঞ্চল উন্নয়নের বিষয়ও উঠে আসে আরএসএসের সভায়।

দশমীর দিন শতবর্ষে পা আরএসএস-এর

এই বছর দশমীর দিন শতবর্ষে পা দিচ্ছে আরএসএস৷ কী কী ভাবে তা দেশজুড়ে পালন করা হবে, তার রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয় এই বৈঠকে। দশমীর সকালে নাগপুরে সংঘের সদর দফতরে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের৷ শতবর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে বিশেষ প্রচারাভিযান চালানো হবে। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের সংগঠন আরও মজবুত করার লক্ষ্যে অল আউট ঝাঁপানোর সিদ্ধান্ত নিল আরএসএস৷ রাজস্থানের যোধপুরে চলতে থাকা আরএসএস-র সমন্বয় বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংঘ পরিবার সূত্রে খবর৷ রাজ্যে আরএসএস-এর সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উত্তরবঙ্গকে৷ দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে আরও দক্ষ ও মজবুত সংগঠন প্রয়োজন বলেই মনে করছে সংঘ। পাশাপাশি রাজ্যের যে সব জেলায় সংঘের শাখা সব থেকে কম আছে, সেখানে অবিলম্বে শাখার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরএসএস৷

বাংলায় আরএসএস-এর প্রচার

গত ১০০ বছরে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে সঙ্ঘ পরিবার কী ভাবে দেশ গড়ার কাজ করে গিয়েছে লাগাতার, তার বিবরণ তুলে ধরে সারা দেশে চালানো হবে বিশেষ প্রচার৷ দিল্লিতে দিন কয়েক আগেই সঙ্ঘের তরফে আয়োজিত ব্যাখ্যানমালার মাধ্যমে আরএসএস-র মত ও পথ তুলে ধরেছেন সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত৷ আগামী দিনে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘের মতাদর্শ তুলে ধরার লক্ষ্যে নির্ধারিত প্রচারাভিযানে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গ৷ সূত্রের দাবি, সরসংঘচালক ভাগবত নিজেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে সংঘের মতাদর্শ নিয়ে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন৷ তার আগে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পথে নামবেন আরএসএস-এর প্রচারকরা৷ সূত্রের দাবি, মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের শুরুতেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হবে প্রচারাভিযান৷ এর সঙ্গেই চালানো হবে নাগরিক সম্মেলন এবং গৃহ সম্পর্ক অভিযান৷ এই দু’টি প্রকল্পের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংঘ পরিবারের মতাদর্শ তুলে ধরবেন আরএসএস প্রচারকরা৷ প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বছরের জানুয়ারিতে উত্তর এবং দক্ষিণ— দুই বঙ্গে আলাদা ভাবে আয়োজিত হবে হিন্দু সম্মেলন, যেখানে অংশগ্রহণ করবেন সংঘের সর্বভারতীয় পদাধিকারীরা৷

শিক্ষাক্ষেত্রকে গুরুত্ব

৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিন দিনের এই বৈঠকে বিশেষভাবে শিক্ষাক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘ, বিদ্যা ভারতী, শিক্ষা সংস্কৃতি উন্নয়ন ন্যাস, ভারতীয় শিক্ষা মণ্ডল ও অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদসহ একাধিক সংগঠন জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। সুনীল আম্বেকর জানান, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে উৎসাহিত করতে ভারতীয় ভাষাগুলোর প্রসারে ইতিবাচক প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক পুনর্লিখন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভারতীয় জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষার ভারতীয়করণের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চলছে। ইংরেজির বিরোধিতা নয়, তবে ভারতীয় ভাষাগুলিকে শিক্ষা ও প্রশাসনে সম্মানজনক স্থান দিতে চায় আরএসএস। প্রাথমিক শিক্ষা মাতৃভাষায় হওয়া উচিত, এবং সমস্ত ভারতীয় ভাষার প্রতি সমান সম্মান থাকা উচিত, বলে মনে কর সংঘ।

দেশের সামাজিক পরিস্থিতি

সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের সামাজিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। পাঞ্জাবে যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি ও ধর্মান্তর প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেবা ভারতী ও বিদ্যার্থী পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত সচেতনতা ও পুনর্বাসন অভিযান সম্পর্কে তথ্য জানানো হয়। নারীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সুনীল আম্বেকর বলেন, ক্রীড়া ভারতী নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে যোগবিদ্যা ও অধ্যয়নের প্রসার ঘটাচ্ছে। তিনি জানান, অপারেশন সিন্দুর কর্মসূচির অধীনে ৮৮৭টি নারী-কেন্দ্রিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা সংঘের কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ার ইঙ্গিত দেয়। ধর্মান্তর, অনুপ্রবেশ ও কাশী-মথুরা ইস্যুতেও আলোচনা হয়। জানানো হয়, এ বিষয়গুলির সমাধান সংঘাত বা আন্দোলনের মাধ্যমে নয়, বরং আইনি প্রক্রিয়া ও পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে খোঁজা হবে। উপজাতি অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। বলা হয়, নকশাল ও মাওবাদী হিংসা অনেকটাই কমেছে, কিন্তু সমাজকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা এখনো চলমান। বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের হোস্টেল নির্মাণ ও উপজাতি অধিকার নিয়ে কাজ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়। ভারতীয় সংস্কৃতি ও জাতীয় ভাবনাকে উপজাতি সমাজে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়। সংঘের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ, পারিবারিক সচেতনতা, ও নাগরিক কর্তব্য নিয়ে বিশেষ কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

 

 

 

 

 

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share