মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিরোধীরা চান জেল থেকে সরকার চালানোর বিকল্প ব্যবস্থা। কোনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রী জেলে বসে সরকার চালালে তা গণতন্ত্রের গরিমাকে আহত করে। সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী ও তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। ইস্তফার পর থেকে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না দাবি করে বিরোধীরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জানালেন, ‘অযথা লেবু কচলানোর কোনও প্রয়োজন নেই।’
জেল থেকে সরকার চলুক
৩০ দিন জেলে থাকলেই ৩১ দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীকে পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া বিল নিয়ে উত্তাল সংসদ। বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের আবহে বিল নিয়ে অনড় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার এক সাক্ষাৎকারে বিরোধীদের কটাক্ষ করে শাহ বলেন, “আসলে আজও এরা চেষ্টা করছেন, কখনও জেলে গেলেও জেলে বসেই সহজে সরকার চালিয়ে নেবেন। জেলকেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর বা প্রধানমন্ত্রীর দফতর বানিয়ে নেবেন। তারপর জেল থেকে ডিজিপি, মুখ্যসচিব, ক্যাবিনেট সচিব বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেবেন।” শাহের (Amit Shah) কথায়, “যদি জামিন পেয়ে যান তিনি শপথ নিয়ে পুনরায় পদ সামলাতেই পারেন। কিন্তু জেল থেকে সরকার চালানো কি উচিত?”
অন্তর্ভুক্ত প্রধানমন্ত্রীর পদও
অমিত শাহ জানালেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে চেয়েছিলেন এই বিলে প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) পদকেও অন্তর্ভুক্ত করতে। তিনি স্মরণ করালেন, ইন্দিরা গান্ধী ৩৯তম সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারের পদকে বিচারিক পর্যালোচনার বাইরে রেখেছিলেন। কিন্তু মোদি সরকার তার উল্টো পথে হেঁটেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল (130th Constitutional Amendment Bill) দেশের গণতন্ত্রের গরিমা রক্ষার জন্য আবশ্যিক।
জগদীপ ধনখড় প্রসঙ্গ
হঠাৎ সকলকে অবাক করে গত ২১ জুলাই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। সেই নিয়ে তুমুল চর্চা, বিতর্কও হয়। কেন্দ্রের সঙ্গে ধনখড়ের বিবাদের জল্পনাও উঠে আসে। সরকারের তরফে সে সময়ে কোনও বিবৃতি মেলেনি। এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন। বললেন, “এই বিষয়টি দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়।” সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জগদীপ ধনখড়ের কাজের প্রশংসা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “ধনখড়জি যখন সাংবিধানিক পদে ছিলেন, তাঁর সময়কালে তিনি সংবিধান অনুযায়ী ভালো কাজ করেছেন। ধনখড় সাহেবের ইস্তফাপত্রে স্পষ্ট যে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও সরকারের বাকি সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই বিষয়টি আর দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়।”
রাহুলের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন শাহের
সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী (130th Constitutional Amendment Bill) ও তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাতেই শাহের নিশানায় রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। ২০১৩ সালে মনমোহন সিংয়ের আমলের ঘটনা প্রসঙ্গে শাহ বলেন,“লালুপ্রসাদ যাদবকে বাঁচাতে মনমোহন সিং সরকারের আনা অধ্যাদেশ কেন রাহুল গান্ধী ছিঁড়ে ফেলেছিলেন? সেই দিন যদি তাঁর নীতিবোধ থেকে তিনি তা করে থাকেন, তাহলে এখন কী হলো? পরপর তিনটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় কি আপনার নীতিবোধ বদলেছে? নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের সঙ্গে নৈতিক মূল্যবোধের কোনও সম্পর্ক নেই, বরং নৈতিক মূল্যবোধ চাঁদ-সূর্যের মতো দৃঢ় হওয়া উচিত।’এখানেই শেষ নয়, সংসদের বিরোধী দলনেতা রাহুলের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর আরও চড়িয়ে শাহ বলেন, ‘নিজের দলের সরকারের পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেছিলেন যে রাহুল, তিনি এখন বিহার নির্বাচনে জেতার জন্য দোষী লালুপ্রসাদকে জড়িয়ে ধরছেন। তা হলে সেই দিন প্রতিবাদ করেছিলেন কেন। মনমোহন সিং (Manmohan Singh) ইতিহাসের কাছে দোষী হয়ে গেলেন চিরজীবনের মতো।”
জনগনকে জবাব দিতে হবে
বিরোধীরা সংসদে বিল পেশ হতে না দেওয়ার চেষ্টা করছে, এ প্রসঙ্গে শাহ (Amit Shah) বললেন,“সংসদ কি শুধু শোরগোল করার জায়গা, না কি বিতর্কের জন্য? আমরাও অতীতে প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কোনও বিলকেই উপস্থাপন করতে না দেওয়া আসলে অগণতান্ত্রিক মানসিকতা। এর জবাব বিরোধীদের জনগণকে দিতেই হবে।” বিরোধীরা যখন ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলকে (130th Constitutional Amendment Bill) ‘কালা আইন’ বলছে, তখন শাহ জবাব দিলেন, “দেশ কোনও একজন মানুষ ছাড়া চলবে না, এই ধারণা আমরা একেবারেই মানি না। একজন সরে গেলে দলের অন্য সদস্য সরকার চালাবেন। আর যখন জামিন পাবেন, তখন ফের পদে ফিরতে পারবেন। তাতে আপত্তি কোথায়?” এই বিল সংসদে পাশ হবে এবং কংগ্রেস সহ বিরোধী শিবিরেরও অনেকে নৈতিকতার দোহাই দিয়ে বিলকে সমর্থন করবেন বলে আশা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।
Leave a Reply