তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
গত দুই সপ্তাহ ধরে একটানা বৃষ্টি। রাজ্যের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ একাধিক জেলায় স্কুল থেকে বসত বাড়ি জলের তলায়! বঙ্গবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে। আর তার মধ্যেই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি। গত কয়েক বছরে বর্ষাকালে রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ (Bengal Dengue) বাড়ে। একটানা বৃষ্টি আর জমা জলের জেরেই এই সময়ে ডেঙ্গির দাপট বাড়ে। চলতি বছরেও ভোগান্তি বাড়ছে। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের একাধিক জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি (Dengue Alert) যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যদিও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী এবং কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে শহরে ডেঙ্গি সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। তবে চিকিৎসক মহলের একাংশের আশঙ্কা, কলকাতার কয়েকটি ওয়ার্ড যথেষ্ট বিপজ্জনক। তাই বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কলকাতার পাশপাশি হাওড়া, হুগলি এবং মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় মতো জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়েও যথেষ্ট আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট কী বলছে?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার ডেঙ্গি পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওড়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের (Bengal Dengue) সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়েছে। কলকাতায় প্রায় ১২০ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর চব্বিশ পরগনায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দু’শো ছাড়িয়েছে। হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৯০ জন। গত এক মাসে মুর্শিদাবাদে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমবেশি ১৫০ জন।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বছর প্রথম থেকেই উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি এবং নদিয়া জেলার উপরে বাড়তি নজরদারি ছিল। এই জেলায় গত কয়েক বছরে ডেঙ্গি পরিস্থিতি (Bengal Dengue) যথেষ্ট উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছিল। চলতি বছরেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পাশপাশি দুই সপ্তাহ ধরে চলা টানা বর্ষার জেরে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য প্রশাসনের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, একটানা বৃষ্টির পরে রাজ্যের একাধিক জেলায় জল জমে। আর তখন মশার উপদ্রব বাড়ে। ফলে, ডেঙ্গির দাপটও বাড়ে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাই আগামী কয়েক দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ।
হাই অ্যালার্ট জারির পরিকল্পনা স্থানীয় প্রশাসনের
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭, ৬৭, ৬৮, ১০১ নম্বর ওয়ার্ড সহ ২০টি ওয়ার্ডে বাড়তি সতর্কতা জারি হয়েছে। এই জায়গাগুলোতে জমা জল সরতে সময় লাগে। তাই মশার উপদ্রব বাড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ডেঙ্গির প্রকোপ ও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। কলকাতার পাশপাশি বিধাননগর এবং রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার একাধিক জায়গাতেও হাই অ্যালার্ট জারি (Dengue Alert) করার পরিকল্পনা করছে সংশ্লিষ্ট পুরসভা। ডেঙ্গি রুখতে (Bengal Dengue) বৃষ্টি থামার পরেই বাড়তি তৎপরতা প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, জল জমতে না দেওয়ার উপরে নজরদারি জরুরি। প্রশাসনের তৎপরতা থাকলে তবেই এলাকায় জমা জল থাকবে না। জল জমলে ডেঙ্গি মোকাবিলা কঠিন হয়ে যাবে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজ্যের চিকিৎসক মহল।
Leave a Reply