মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত চায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। সোমবার ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’-এর তরফে সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina Verdict) বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর এই ইস্যুতে মুখ খুলল ভারত। বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ (Bharat Bangladesh Relation) আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা ভারতের নজরে রয়েছে। পাশাপাশি নয়াদিল্লি আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সেখানকার সব রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সুষ্ঠু যোগাযোগ রাখবে দিল্লি।
কী বলল ভারতের বিদেশমন্ত্রক
জুলাই অভ্যুত্থানে দেশছাড়া হওয়ার পর থেকে মহম্মদ ইউনুসের বাংলাদেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে। গুরুতর মামলাগুলির মধ্যে রয়েছে জুলাই বিপ্লবী ছাত্রদের উপর গুলি চালানো তথা মানবতাবিরোধী অপরাধ, আয়নাঘর সংক্রান্ত অভিযোগ ইত্যাদি। সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপরই সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় হাসিনাকে। বাংলাদেশ আদালতে রায় ঘোষণার পর বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা ভারতের নজরে রয়েছে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। নয়াদিল্লি চায় বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। সেই লক্ষ্যে নয়াদিল্লি সব পক্ষের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ রাখবে।’
ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি
বর্তমানে ভারতে (Bharat Bangladesh Relation) রয়েছেন আওয়ামি লিগ নেত্রী হাসিনা। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, হাসিনাকে ফেরাতে চেয়ে ভারতের কাছে আবারও চিঠি দেবেন তাঁরা। তবে বিচারের সম্মুখীন হতে ভারত তাঁকে আদৌ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী আদালতের রায়ে প্রত্যর্পণ করানোর মতো অপরাধ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এক দেশ অপর দেশের হাতে তুলে দেবে। ২০১৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন কেন্দ্রে মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। অন্য দিকে, ঢাকার মসনদে হাসিনাই।
কখন প্রত্যর্পণ হবে না
চুক্তিতে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, অপরাধটির যদি রাজনৈতিক চরিত্র থাকে, তা হলে প্রত্যর্পণ করা হবে না। খুন, গুম করা এবং অত্যাচার (যেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি হাসিনা অভিযুক্ত) রাজনৈতিক অপরাধের তালিকায় রাখা হবে না বলেও চুক্তিতে বলা হয়েছে। চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, সেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, বিচারের নেপথ্যে যদি সৎ কোনও উদ্দেশ্য না-থাকে, তা হলে ভারত বা বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করবে না। হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না-করার জন্য এই যুক্তিগুলি খাড়া করতে পারে ভারত। হাসিনা নিজেও বারবারই তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। বিচারের নামে প্রহসনের অভিযোগও তুলেছেন।
ভারত হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাধ্য নয়
বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি শর্তের জন্যই ভারত (Bharat Bangladesh Relation) হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সোমবারের রায়ের পর বাংলাদেশে হাসিনার প্রাণসংশয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, যদি কোনও দেশে কারও জীবনের ঝুঁকি থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া দেশ তাঁকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য নয়। হাসিনার ক্ষেত্রেও এই আইনের কথা তুলে ধরতে পারে ভারত। তাই নানা নিয়ম অনুসারেই ভারত হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য নয়। এই প্রসঙ্গে আইনগত দিকও রয়েছে। হাসিনা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। কিন্তু দেশে না-থাকার জন্য হাসিনাকে যদি তা করতে বাধা দেওয়া হয়, তবে তা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
ভারতের বিবৃতি স্পষ্টবার্তা
গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina Verdict) পাশাপাশি এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে মামুন রাজসাক্ষী। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। দুজনই এখন ভারতে (Bharat Bangladesh Relation) অবস্থান করছেন। মৃত্যুদণ্ডের পরই শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের প্রত্যর্পণের আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের কাছে ২ জনকে হস্তান্তরের আর্জি জানায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান জানায় দিল্লি। ইউনুসের শাসনে গোটা বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার হাওয়া তোলা হয়েছে। অন্যদিকে, হাসিনা সরকার ছিল ভারতের বন্ধু। তবে, ভারতের বিবৃতি স্পষ্টবার্তা যে কোনও পক্ষপাত নয়, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আওয়ামি লিগের পাশাপাশি কূটনৈতিক স্বার্থে সে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সমানভাবে যোগাযোগ রাখবে ভারত। অর্থাৎ, ইউনুসের বাংলাদেশ আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করলেও ভারত সেই দলকে যেমন গুরুত্ব দেবে একইভাবে বিএনপি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও সমান গুরুত্ব দেবে ভারত। পাশাপাশি এটাও ইউনুস প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে ভারত সমর্থন করে না। গণতান্ত্রিক পথে আওয়ামি লিগকে বাকি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

Leave a Reply