মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিজেপি বিরোধিতায় ব্যর্থ কংগ্রেস, আরও একবার প্রমাণিত গেরুয়া ঝড়ে মুখ থুবড়ে পড়ল ‘হাত’। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে (Bihar Election Results) আবারও কোনও ছাপ ফেলতে ব্যর্থ হল কংগ্রেস। প্রাথমিক গণনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে, তারা লড়াই করা ৬০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টিতে এগিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ রূপান্তর হার ১০ শতাংশেরও নিচে—২০২০ সালের তুলনায় আরও বড় ধাক্কা। ২০২০ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ৭০টি আসনে লড়াই করে ১৯টি আসনে জয় পেয়েছিল।
‘ভোট চুরি’ স্লোগানে কাজ হল না
লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর আক্রমণাত্মক প্রচার—যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তথাকথিত “ভোট চুরি”—এবারও ভোটে পরিণত হয়নি। একাধিক জনসভা, ভোটার অধিকার যাত্রা, ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে কেন্দ্র ও ইসি-কে নিশানা করেও তিনি ভোটারদের মন জিততে পারেননি। পর্যবেক্ষকদের মতে, জাতীয় ইস্যুর তুলনায় বিহারের ভোটাররা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন স্থানীয় সমস্যা, জাতপাত সমীকরণ ও শাসনকার্যের মূল্যায়নকে। বিহারে ভোটের মুখে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেস প্রচারের মূল ইস্যু হিসাবে তুলে এনেছিলেন এসআইআর-কে, ভোটচুরিকে। যা কোনওভাবেই বিহারের স্থানীয় ইস্যু নয়। তাছাড়া এসআইআর শেষ হয়ে যাওয়ার পর বেশি বৈধ ভোটারের নাম বাদ না যাওয়ায়, সেই ইস্যুও ধোপে টেকেনি। মাঝখান থেকে মূল যে ইস্যু সেই বেকারত্ব, দলিত নির্যাতন, দুর্নীতি, সেসব পিছনে পড়ে গিয়েছে। তাছাড়া শেষবেলায় এসে তেজস্বী যে সব পরিবারকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন, সেটাও বিশেষ বিশ্বাসযোগ্য হয়নি আমজনতার।
প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে কংগ্রেস
একসময় জাতীয় ও প্রাদেশিক রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান থাকা কংগ্রেস এখন বিহারে কার্যত প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একাধিক আসনে দল তৃতীয় বা চতুর্থ অবস্থানে নেমে যাচ্ছে। রাজ্যে তাদের শেষ উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা গিয়েছিল ১৯৯০ সালে জগন্নাথ মিশ্রের নেতৃত্বে। তারপর থেকে বিহারে সংগঠন পুনর্গঠনে কংগ্রেস বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেসের খারাপ পারফরম্যান্স মহাগঠবন্ধনের প্রধান দল আরজেডি-র উপরও প্রভাব ফেলেছে। যদিও আরজেডি এখনও ৩০টির মতো আসনে এগিয়ে রয়েছে এবং তাদের মূল ভোটব্যাঙ্ক বেশি। অপরদিকে, এনডিএ এগিয়ে চলেছে মসৃণ জয়ের দিকে। প্রাথমিক গণনায় এনডিএর আসন প্রায় ১৯০ ছুঁয়েছে—যা ২০১০ সালের ২০৬ আসনের রেকর্ডের কাছাকাছি। এনডিএর এই শক্তিশালী পারফরম্যান্স প্রমাণ করেছে জোটের নেতৃত্ব, সংগঠন ক্ষমতা এবং ভোটার আস্থার প্রভাব।
জঙ্গল-রাজের আতঙ্ক
‘যব তক রহেগা সমোসে মে আলু, বিহার মে রহেগা লালু।’ অরণ্যের প্রাচীন এই প্রবাদ হয়তো এবার ‘জঙ্গলে’ ফেলার সময় এসে গিয়েছে। কারণ বিহারবাসী এখনও লালুর জঙ্গলরাজের আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। অন্তত ২০২৫ সালের বিহার ভোটের ফলাফলের (Bihar Election Result) ট্রেন্ড সে কথাই বলছে। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখনও পর্যন্ত বিহারের ফলাফল বলছে, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ দু’শোর কাছাকাছি আসন পেতে পারে। আর তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন ৫০ আসন পাওয়া নিয়েও সংশয়ে।
কংগ্রেসের দুর্বলতায় চাপ বাড়ল মহাগঠবন্ধনের ওপর
মহাগঠনন্ধনের শুরুটা ভালো হয়েছিল। রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রায় একসঙ্গে প্রচার শুরু করেছিলেন রাহুল-তেজস্বীরা। কিন্তু যাত্রা শেষ হতেই ছন্দপতন। আসন সমঝোতা নিয়ে রীতিমতো খেয়োখেয়ি করল বিরোধী শিবির। এমন পরিস্থিতি দাঁড়াল যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন পেরিয়ে গেলেও আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হল না। তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে ঘোষণা করা হল একেবারে শেষবেলায়। যে চক্করে মাসখানেক প্রচারে সেভাবে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা, এমনকী আরজেডির শীর্ষ নেতাদেরও প্রচারে দেখা গেল না। ততদিনে ঘর গুছিয়ে ফেলেছে এনডিএ। যার সুফল মিলল ভোটের ফলে।
কংগ্রেসের সামনে কঠিন পথ
আরও একবার হতাশাজনক ফলাফলের পর বিহারে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ঘনিয়েছে। প্রচারকে ভোটে রূপান্তর করতে ব্যর্থতা, গ্রাসরুটে পৌঁছতে না পারা এবং দুর্বল স্থানীয় নেতৃত্ব—এই সব মিলিয়ে দল ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এনডিএ শক্তিশালী হচ্ছে, আঞ্চলিক দলগুলো নিজেদের ভিত্তি ধরে রাখছে—এ অবস্থায় বিহারে পুনর্জাগরণের জন্য কংগ্রেসকে জরুরি ভিত্তিতে সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে নামতে হবে।

Leave a Reply