Child Anger Issues: একরত্তির বয়সের সঙ্গে বাড়ছে রাগ! নেপথ্যে কি হরমোন নাকি অন্য কোনও সমস্যা?

child anger issues management what are reasons how to control expert tips

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

দোকানে থাকা পছন্দের খেলনা কেনার বায়না হোক কিংবা অতিরিক্ত সময় স্ক্রিন টাইম পাওয়ার ইচ্ছেপূরণ, প্রতিদিনের যেকোনও সামান্য বিষয়েই ‘না’ শোনার অভ্যাস নেই বাড়ির খুদে সদস্যের। আর তাই বাড়ছে বিপদ! একরত্তির বয়সের সঙ্গে বাড়ছে রাগ। অপছন্দের যে কোনও বিষয়েই তীব্র প্রতিক্রিয়া। যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবক। তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সন্তানের এই রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কিছু নির্দিষ্ট উপায় রয়েছে। তবে তার আগে রাগের কারণ সম্পর্কে অভিভাবকদের ওয়াকিবহাল হওয়া জরুরি। তিন থেকে চার বছর বয়স থেকেই এই বিষয়ে অবগত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। তবে অনেকক্ষেত্রেই ছোটোবেলায় পরিবারের অসতর্কতার জেরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে রাগ নিয়ন্ত্রণ হয় না। বয়ঃসন্ধিকালে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বিষয়ত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই রাগ মারাত্মক ভাবে প্রকাশিত হয়। যা খুব সংবেদনশীল ভাবেই মোকাবিলা করা জরুরি।

সন্তানের অতিরিক্ত রাগের নেপথ্যে কী?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সন্তানের অতিরিক্ত রাগের নেপথ্যে মূলত রয়েছে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার। তাঁরা জানাচ্ছেন, বহু শিশুই এই সমস্যায় ভোগেন। এটি একটি আচরণগত সমস্যা। যেকোনও কিছুর বায়না করলে অভিভাবকদের থেকে আদায় করার জন্য তারা অতিরিক্ত রাগ দেখায়। অনেক সময়েই রাগ সামলানোর জন্য পরিবার তাদের দাবি মেনে নেয়। সেক্ষেত্রে শিশুর মনে হয় তার পছন্দের জিনিস পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রাগের বহিঃপ্রকাশ।

তবে এছাড়াও শিশুর অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার অন্যতম কারণ উদ্বেগ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, শিশুরাও মানসিক উদ্বেগে ভোগে। অনেক সময়েই পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্কদের সমস্যা কিংবা জটিলতা শিশুর সামনেই আলোচনা হয়। শিশুর পক্ষে সবকিছু বোঝা সম্ভব হয় না। কিন্তু তারা কিছুটা নিজেদের মতো করে বোঝার চেষ্টা করে। আর মানসিক উদ্বেগ তৈরি হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে শিশুর এই উদ্বেগ বাড়ে। অনেক সময়েই রাগের মাধ্যমেই সেই উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

শৈশব থেকেই এই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বয়ঃসন্ধিকাল তার জটিলতা বাড়ে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের শরীরে একাধিক হরমোন পরিবর্তন ঘটে। যার জেরে কমবেশি সব ছেলেমেয়েদের মধ্যেই নানান ধরনের মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ তৈরি হয়। তার জেরে রাগ, মন খারাপ কিংবা খিটখিটে মেজাজ দেখা যায়। তবে শৈশবে রাগের সমস্যা থাকলে তাদের মানসিক জটিলতা আরও বাড়ে। বিশেষত শৈশবে কোনো কারণে ট্রমা বা কোনো ঘটনায় অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকলে, ভয় পেলে বয়ঃসন্ধিকালে তা অতিরিক্ত রাগের কারণ হয়ে ওঠে। তখন পরিস্থিতি সামলানো আরও কঠিন হয়।

সন্তানের অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, কয়েকটি বিষয়ে প্রথম থেকেই নজরদারি করলে এবং সতর্ক থাকলে সন্তানের অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ হবে। তাঁদের পরামর্শ, শিশুর অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। শুধুই বকাবকি করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বরং এই ধরনের আচরণগত সমস্যা থাকলে প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টের পরামর্শ জরুরি। কিছু থেরাপির মাধ্যমে এই আচরণগত সমস্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ প্রথম থেকেই জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সাধারণত মোবাইলের পর্দায় যেসব জিনিস শিশুরা দেখে, সেগুলো অতিরিক্ত দ্রুত ঘটে। এমন একাধিক ভিডিও রয়েছে, যেখান কয়েক মিনিটের মধ্যে নানান অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে। লাগাতার এই ধরনের ভিডিও দেখার ফলে শিশুর মস্তিষ্কে একধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়। মস্তিষ্কের স্নায়ু উত্তেজিত হওয়ার জেরে মানসিক অস্থিরতা হয়। যার ফলে সামান্য কারণেও শিশু তীব্র প্রতিক্রিয়া করে।

বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের রাগের অন্যতম কারণ হরমোন ঘটিত পরিবর্তন। তাই এই বয়সের ছেলেমেয়েদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে আরও বেশি সংবেদনশীলতা জরুরি বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই বয়সের ছেলেমেয়েরা অতিরিক্ত রেগে গেলে জানা জরুরি, তারা কোনও হেনস্থার শিকার হচ্ছে কিনা। স্কুল বা পরিবারের কেউ তাদের শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে হেনস্থা করছে কিনা। আবার সোশাল নেটওয়ার্ক সাইটেও এখন বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েরা খুব সক্রিয়। সেখানে তারা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সে সম্পর্কেও অভিভাবকদের ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। তবে এই সব কিছুই করতে হবে কথা বলে, সংবেদনশীল ভাবেই। তবেই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব।

প্রথম থেকেই শিশুর যোগাভ্যাস থাকা জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। আবার মস্তিষ্কের স্নায়ু ঠিকমতো কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারে। এর ফলে অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। সন্তানের পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কিনা সে দিকেও নজরদারি জরুরি। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ঘুম ঠিকমতো হলে তবেই মস্তিষ্ক ঠিকমতো সক্রিয় থাকবে। স্নায়ু সচল থাকবে। হরমোন ঘটিত সমস্যা কমবে। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মস্তিষ্কের পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই সন্তান যাতে প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমোতে পারে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হোক কিংবা তেরো বছর! অতিরিক্ত রাগের সমস্যা থাকলে, তা মোকাবিলা করার জন্য কখনোই অভিভাবক রেগে গেলে চলবে না। রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলে সন্তানের রাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বরং এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

 

 

DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share