মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। বাংলাতে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী শীঘ্রই চালু হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই বর্তমান ভোটার তালিকায় শতায়ু ভোটারদের ক্ষেত্রে বড় গরমিল ধরা পড়ল। রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম থাকা শতায়ু ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই মৃত! রাজ্যজুড়ে শতায়ু ভোটারদের নিয়ে একটি বিশেষ সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় প্রায় ১৩ হাজার নাম পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা শতায়ু পার করেছেন। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, ঝাড়গ্রাম–সহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছেন এই শতায়ু ভোটাররা। ভোটার তালিকায় কারও বয়স ১০০, কারও আবার ১০৬। কোচবিহারের শীতলকুচি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে ১১৪ বছর বয়সি ভোটারও রয়েছেন।
ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা ঘিরে প্রশ্ন
সূত্রের খবর, ২০২৪ লোকসভার ভোটার তালিকা অনুযায়ী রাজ্যে মোট ১২ হাজার ৪৯৪ শতায়ু ভোটার রয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা বা যাচাইকরণের পর দেখা গিয়েছে তাঁদের মধ্যে ৬ হাজার ২১২ জন শতায়ু মৃত অথচ তাদের নাম এখনও ভোটার তালিকায় রয়ে গিয়েছে। বছরে চার বার ভোটার তালিকার রিভিশন বা যাচাইয়ের কাজ করা হলেও রাজ্যের ভোটার তালিকা যাচাইকরণের ক্ষেত্রে ইআরও, এইআরও, বিএলও এমনকি ডিইও-দের ভুমিকা নিয়েও ফের একবার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শতায়ু ভোটারদের এই পরিসংখ্যান। বিষয়টি একেবারেই সুনজরে দেখছে না রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর।
৮৫ বছর থেকে ১০০ বছর ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ
বঙ্গে এসআইআর বিজ্ঞপ্তি জারি করার আগেই এবার ৮৫ উর্ধ্ব বয়সি ভোটারদের নিয়ে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ করতে চায় রাজ্য সিইও দফতর। যেহেতু ৮৫ বছর ঊর্ধ্ব ভোটাররা বাড়ি থেকেই ভোট দান করেন, কমিশনের পরিভাষায় যাকে হোম ভোটিং বলা হয়। সে কারণে ৮৫ বছর থেকে ১০০ বছর এই বয়সি ভোটারদের কতজন বর্তমান ভোটার তালিকার সাপেক্ষে জীবিত আছেন তা নিয়ে ফের একবার পরীক্ষা করতে চায় রাজ্য সিইও দফতর। রাজ্যে এসআইআর নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই এই সমীক্ষা বা যাচাইয়ের নির্দেশ দিতে পারেন রাজ্যের সিইও দফতর। বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেশজুড়ে শতায়ু ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে একটি বিশেষ সমীক্ষা বা যাচাই করণের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। দিল্লিতে গোটা দেশের সিইও-দের নিয়ে বৈঠকে এই যাচাইকরনের আভাস আগেই দিয়েছিলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। তদনুযায়ী রাজ্যে রাজ্যে বর্তমান ভোটার তালিকার সাপেক্ষে শতায়ু ভোটারদের নিয়ে সমীক্ষার কাজ করা হয়। বঙ্গের বাস্তব চিত্র হল, বর্তমান ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত শতায়ু ভোটারদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মৃত হলেও তাদের নাম এখনো ভোটার তালিকায় রয়ে গিয়েছে।
নির্বাচন কর্মীদের আরও সতর্ক ও সজাগ করা প্রয়োজন
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের বক্তব্য রাজ্যে ভোটার তালিকা তৈরীর ক্ষেত্রে ইআরও, এইআরও বা বিএলও-দের দায়িত্ব পালনে যে খামতি থেকে যাচ্ছে এই ধরনের তথ্য তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এই ব্যাপারে নির্বাচন কর্মীদের আরও সতর্ক ও সজাগ করা প্রয়োজন। ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের শতায়ু ভোটারদের প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা জীবিত না মৃত তার লিখিত রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়লে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই প্রত্যেক ইআরও–কে শতায়ু ভোটারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের স্বাক্ষর–সহ লিখিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এই রিপোর্টই সিইও দফতর সরাসরি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেবে।
Leave a Reply