মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জম্মু ও কাশ্মীর। শ্রীনগরে ফুঁসছে ঝিলম নদী। জলস্তর বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। মঙ্গলবারের ধসের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বৈষ্ণোদেবী যাত্রা। প্রবল বৃষ্টি এবং ভূমিধসে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশের জনজীবন। একটানা বৃষ্টি ও ভূমিধসের (Heavy Rains in Himachal-Jammu) জেরে রাজ্যের একাধিক জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। হিমাচল প্রদেশ রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের (SDMA) তথ্য অনুসারে, এখনও পর্যন্ত উত্তর ভারতের ২ রাজ্য ও ১টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুগুলির মধ্যে, বৃষ্টিপাতজনিত ঘটনা যেমন- ভূমিধস, হড়পা বান, মেঘভাঙা বৃষ্টি, ডুবে যাওয়া, বজ্রপাত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া এবং অন্যান্য আবহাওয়াজনিত কারণে হয়েছে। শুধু প্রাণহানিই নয়, বহু টাকার সম্পত্তিও নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টিতে ভাসছে পাঞ্জাবও। দিল্লি-কাটরা বন্দেভারত-সহ ১৮টি ট্রেন স্থগিত করা হয়েছে।
বৈষ্ণোদেবী যাত্রা বন্ধ, ২৪ জনের দেহ শনাক্ত
দুর্যোগে জম্ম-কাশমীরে অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই পুণ্যার্থী। বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার জম্মুর রেইসি জেলায় অর্ধকুঁয়ারীতে ইন্দ্রপ্রস্থ ভোজনালয়ের কাছে ধস নামে। ওই ধসের জেরে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া জম্মুর ডোডা জেলায় বৃষ্টি এবং হড়পা বানের জেরে চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বৈষ্ণোদেবীর পথে ধসে নিহতদের দেহ কাটরা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে জম্মুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ২৪ জনের দেহ শনাক্ত করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঞ্জাব, দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রয়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য বৈষ্ণোদেবী যাত্রা বন্ধ রয়েছে।
নিহতদের পরিবারপিছু ৯ লক্ষ আর্থিক সহায়তা
ধস নেমে পূণ্যার্থীদের মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। বুধবার এক্স হ্যান্ডেলের একটি পোস্টে মোদি লেখেন, ‘বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার পথে ভূমিধসে প্রাণহানির ঘটনা দুঃখজনক। শোকাহত পরিবারগুলির প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে সহায়তা করছে। সকলের নিরাপত্তা ও মঙ্গল কামনা করি।’ কাটরার এক হাসপাতালে ১৩ জন আহত পুণ্যার্থী ভর্তি রয়েছেন। বুধবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিং। আহতদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন তিনি। তাঁদের পরিবারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দেন। এ ছাড়া নিহতদের পরিবারপিছু ৯ লক্ষ আর্থিক সহায়তারও ঘোষণা করেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
জম্মুতে রেকর্ড বৃষ্টি
জম্মুতে গত ১১৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলবার। আধিকারিক সূত্রে খবর, জম্মুতে মঙ্গলবার ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ১৯১০ সালে জম্মুতে বৃষ্টিপাত পরিমাপের ব্যবস্থা শুরু হয়। তার পর থেকে সেখানে ২৪ ঘণ্টায় এত বৃষ্টি দেখা যায়নি। এর আগে ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ২৭০.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল জম্মুতে। জম্মুতে তাওয়ি নদীর উপর এক সেতু হড়পা বানে ভেঙে গিয়েছে। শ্রীনগরে ঝিলম নদী প্রায় কানায় কানায় ভরে গিয়েছে। নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাশ্মীরে ২০১৪ সালের বন্যার কথা মাথায় রেখে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করছে শ্রীনগরের প্রশাসনও।
উদ্ধারে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী
হড়পা বান এবং ভূমিধসের কারণে জম্মু-পাঠানকোট, জম্মু-শ্রীনগর এবং বাতোতে-ডোডা-কিশ্তওয়ার সংযোগকারী জাতীয় সড়কেও কিছু কিছু অংশে যান চলাচলও সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে। গত তিন দিনের ভারী বর্ষণের জেরে জম্মুর বেশ কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা এবং উদ্ধার অভিযানে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দল, পুলিশ এবং সেনা। আটকে পড়া মানুষদের নৌকায় করে উদ্ধার করা হচ্ছে। জম্মুর বিভিন্ন নীচু এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাশ্মীরের সব স্কুল-কলেজও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হিমাচলে হাহাকার
এ বছর দেশের সর্বত্রই বৃষ্টি হয়েছে ভয়ঙ্করভাবে। প্রবল বৃষ্টি এবং ভূমিধসে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশের জনজীবন। একটানা বৃষ্টি ও ভূমিধসের জেরে রাজ্যের একাধিক জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি রাজ্যে রাজ্যে। মানালিতে প্রবল বর্ষণ, বন্যা পরিস্থিতি বিয়াসে। চরম বৃষ্টির জেরে দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। হাইওয়ে সব গিলে খেয়েছে নদী। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক ব্যবস্থা। কোথাও ভেঙে পড়েছে পাহাড়ের একাংশ। কোথাও দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে পাহাড়। হিমাচল প্রদেশ রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী সূত্রে খবর, সে রাজ্যের প্রায় ৩৭৪টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি, ৫২৪টি ট্রান্সফরমার এবং ১৪৫টি জল সরবরাহের পাইপলাইন অকেজো হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও, ভূমিধসের কারণে ৩০৫ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ৫ নম্বর জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
চলবে বৃষ্টি
উত্তর ভারতে বৃষ্টির জেরে নানা ভাবে চলতি বছরে ৩৬৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই দুর্যোগে সরকারি সম্পত্তির মোট আনুমানিক ক্ষতি ২.৪৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ৩২৪টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩৯৬টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হাজার হাজার দোকান, গোয়ালঘর এবং অন্যান্য কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিপোর্টে ১,৮৪৬টিরও বেশি গবাদি পশু এবং ২৫,৭৫৫টি হাঁস-মুরগির ক্ষতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী দুই তিন দিন মানালি ছাড়াও আবহাওয়া দফতর কাংরা উপত্যকা, চাম্বা ও লাহুল-স্পিতি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে। এছাড়াও উনা, হামিরপুর, বিলাসপুর, সোলান, মান্ডি, কুলু ও শিমলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের অন্য প্রান্তে জারি রয়েছে হলুদ সতর্কতা।
Leave a Reply