তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
শরীর সুস্থ রাখতে রোগ প্রতিরোধ শক্তি (Immunity Power) জরুরি। তবে নিজের দেহের শক্তির রাশ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বাড়বে বিপদ! নিজের দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি করবে জটিল সমস্যা। যার জেরে সুস্থ জীবন যাপন ব্যাহত হবে। তাই নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি যাতে বাড়তি বিপদ তৈরি না করে, এই শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে, অসুখের মোকাবিলা করা যায়, এ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে চর্চা দীর্ঘকালের। গত প্রায় দু’দশক ধরে এই নিয়ে লাগাতার চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন তিন বিজ্ঞানী। ম্যারি ই ব্রুঙ্কো, ফ্রেড র্যাম্সডেল এবং শিমন সাকাগুচি, এই তিনজন মানব শরীরের ‘অটোইমিউন’ ডিজিজ নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণার জন্যই ২০২৫ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখায় এই তিনজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (Nobel Prize in Medicine) হয়েছেন।
অটোইমিউন ডিজিজ (Autoimmune Disease) কী?
ক্যান্সার কিংবা রিউমাটোয়েড আর্থারাইটিস, মানুষের শরীরে এমন নানান রোগ রোগ রয়েছে, যা অটোইমিউন ডিজিজ নামে পরিচিত। অর্থাৎ, নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তির জেরেই এই ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। নিজের শক্তির দ্বারাই জীবন শক্তি ক্ষয় হয়। অর্থাৎ নিজের দেহের বিভিন্ন সুস্থ কোষকে শরীর নিজেই আক্রমণ করে। ফলে নানান জটিল অসুখ দেখা দেয়। তাই শরীর সুস্থ রাখতে এই ইমিউনিটি পাওয়ার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। অটোইমিউন ডিজিজ (Autoimmune Disease) থেকে মানব দেহকে বাঁচাতেও এই সম্পর্কে জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ দুই দশক ধরে এই তিন বিজ্ঞানী তাই চর্চা চালিয়েছেন মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি নিয়ে!
কী বলছে গবেষণা?
মানুষের শরীরকে প্রতি মুহূর্তে আক্রমণ করছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক! চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রত্যেকটি জীবাণুর গঠন আলাদা রকম। মানুষের শরীরের ভিতরে থাকা রোগ প্রতিরোধ শক্তি এই আক্রমণ প্রতিহত করছে। তার ফলেই আমরা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারছি। কিন্তু বেশ কিছু জীবাণু এমন রয়েছে, যার গঠন সম্পূর্ণ নয়। কিংবা যার গঠন অনেকটাই আমাদের শরীরের ভিতরে থাকা প্রয়োজনীয় কোষের মতোই! ফলে তখন মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি দ্বিধায় পড়ছে। আর তখন তৈরি হচ্ছে অটোইমিউন ডিজিজ (Autoimmune Disease)। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধকারী শক্তি ভুলবশত নিজের কোষের ক্ষয় করছে। ভাইরাস আর কোষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে না।
তবে এই তিন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর (Nobel Prize in Medicine) গবেষণায় দেখা যায়, মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি প্রক্রিয়ায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে টি-সেল নামে এক ধরনের কোষের! কোনটি ভাইরাস আর কোনটি শরীরের নিজস্ব কোষ, কার ক্ষয় জরুরি, এটি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে এই টি-সেল (T-Cell)। অর্থাৎ, টি-সেল কিংবা রেগুলেটরি টি-সেল জাতীয় কোষ দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে ঠিকমতো কাজে লাগানোর পথ দেখায়। যাতে নিজের শক্তি ভুলভাবে ক্ষয় না করে, প্রয়োজনীয় ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাজে লাগাতে পারে।
এই তিন বিজ্ঞানীর গবেষণার মূল বিষয় ছিল পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স (Peripheral Immune Tolerance)! অর্থাৎ, শরীরের কিছু রোগ প্রতিরোধ শক্তিধারী কোষ বোন ম্যারো থেকে তৈরি হওয়ার সময় বুঝতে পারে, তাদের ইমিউনিটি পাওয়ার কোথায় ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু কিছু রোগ প্রতিরোধ শক্তিধারী কোষ তৈরি হয় শরীরের অন্যান্য অঙ্গে যেমন লিম্ফ গ্ল্যান্ডে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় পেরিফেরাল ইমিউন সিস্টেম। সেখানে বেশ কিছু কোষ থাকে, যা নিজের শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে না। ফলে অটোইমিউন ডিজিজ (Autoimmune Disease) হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই সিস্টেম সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল করেছে এই গবেষণা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য কেন নতুন দিশা?
ক্যান্সার সহ একাধিক জটিল অটোইমিউন ডিজিজের চিকিৎসা কোন পথে হবে, এ নিয়ে নয়া দিশা দেখায় এই গবেষণা। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, শরীরের নিজস্ব শক্তি যখন শরীরের বিপক্ষে চলে যায়, তখন কীভাবে বাইরে থেকে ওষুধ কাজ করবে, এ নিয়ে বহু ধোঁয়াশা ছিলো। কিন্তু এই গবেষণা পথ দেখিয়েছে। কীভাবে কোন কোষগুলোর সক্রিয়তা বাড়ালে এই ধরনের অটোইমিউন রোগের (Autoimmune Disease) মোকাবিলা করা যাবে। তাই এই গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন পথ তৈরি করেছে!
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Leave a Reply