Piyush Goyal On Tariff: ‘কারও কাছে মাথা নত না করেই জয়ী হবে ভারত’, শুল্ক-হুমকির মুখে স্পষ্ট বার্তা বাণিজ্য মন্ত্রীর

piyush goyal on tariff controversy said india will not bow to anybody

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত কারও কাছে মাথা নত করবে না। এরকম অনেক পরিবর্তন দেখেছে ভারতবাসী। তারা সবসময় দুর্যোগকে সুযোগে পরিণত করেছে। বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। বিভিন্ন দেশ ভারতের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অযৌক্তিক শুল্ক চাপানোর প্রেক্ষিতে এমনই অভিমত প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। ‘বিটি ইন্ডিয়া@১০০’ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ট্যারিফ-বাণিজ্য একাধিক বিষয়ে বক্তব্য পেশ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বিশ্ব-বাণিজ্যে ট্রাম্পের চাপানো অতিরিক্ত শুল্কের ফলে ভারতের পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে। সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আজকের ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী। বার্ষিক সাড়ে ৬ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধি হচ্ছে ভারতের এবং আগামিদিনে তা আরও হবে।”

ভারতই ভরসা বিশ্বের

ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। চিন্তা বাড়ছে বাণিজ্য নিয়ে। এরই মাঝে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সাফ জানিয়ে দিলেন, “আমার বিশ্বাস যে ভারত গত বছরের তুলনায় এই বছরে আরও বেশি রফতানি করবে। গোটা বিশ্ব জানে যে বিশ্ব প্রবৃদ্ধিতে ভারতের অবদান ১৬ শতাংশ, আমাদের শেয়ার বাজার, মুদ্রা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বিশ্ব ভারতের ১.৪ বিলিয়ন মানুষের প্রতিভা নিয়ে কাজ করতে চায়। ভারতের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।” ডি-গ্লোবালাইজেশন নয়, বরং দেশগুলি তাদের বাণিজ্যিক পথ ও সঙ্গী বদলাচ্ছে বলেই যুক্তি দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বাণিজ্যিক যে বাধাগুলি আসছে, তা মোকাবিলা করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি

বিটি ইন্ডিয়া@১০০ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন যে এটি ভারতের সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি পরিস্থিতিতে ভারত দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যা সমগ্র দেশবাসীর মনোবল বাড়িয়েছে। পীযূষ গোয়েল বলেন, “আমাদের কৃষক, উদ্যোক্তাদের চিন্তা করার দরকার নেই, নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় ভারত এগিয়ে থাকবে। আজ ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং বিশ্ব তার শক্তি স্বীকার করেছে।” সম্প্রতিই ইংল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। পীযূষ গোয়েল বলেন, “ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি শুধুমাত্র বাণিজ্যে কর ছাড় থেকে অনেকটা এগিয়ে। আমরা ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। বিশ্বের সবথেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া বড় অর্থনীতি আমাদের। বাকিদের জনসংখ্যা যেখানে ক্রমশ বৃদ্ধ হচ্ছে, আমাদের কাছে সেখানে যুব প্রজন্মের শক্তি রয়েছে।”

দুর্যোগকে-সুযোগে পরিণত করবে ভারত

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “তারা তাদের দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য আমাদের বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছে, কিন্তু আমরা এখনও পর্যন্ত কোনও বাণিজ্য চুক্তিতে এমন অনুমতি দিইনি। ভারত সরকার কৃষকদের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে কাজ করবে। ভারত এ জাতীয় অনেক পরিবর্তন দেখেছে এবং ভারতের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। এই সময়ে, কেবল বিশ্বই নয়, ভারতও বাণিজ্যের নতুন পথে এগিয়ে চলেছে।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ১৯৯৯ সালে বিশ্বের আইটি শিল্পে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, তার কথা উল্লেখ করেন, যা ওয়াই টু কে(Y2K) সংকট নামে পরিচিত। তিনি বলেন, “১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টায় সমস্ত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং বিশ্বে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তখন দেশে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার ক্ষমতায় ছিল, তিনি এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন, বিভিন্ন উপায়ে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারি হস্তক্ষেপের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আজ ভারতের আইটি শিল্পের মূল্য ৩০০ বিলিয়ন ডলার এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মসংস্থান দিচ্ছে। আমরা কখনও পিছনে ফিরে তাকাইনি।”

করোনা মহামারীর সময়ও শক্ত ভারত

পীযূষ গোয়েল এদিন করোনার সময়ের কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, “এই অতিমারির সময়ও ভারত তার শক্তি দেখিয়েছে এবং সমস্ত জল্পনা-কল্পনা ভুল প্রমাণ করেছে। করোনা অতিমারির সময় মানুষ ভেবেছিল যে ভারত তা সহ্য করতে পারবে না এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। কিন্তু ভারত তার সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং আমরা কেবল দেশে টিকা নিয়ে গবেষণাই করিনি, বরং এটি তৈরিও করেছি। সেই সময় ভারত বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশকে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ করেছিল। এর মধ্যে দরিদ্র দেশগুলিও ছিল যাদের কেউ সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিল না।”

ভারত জয়ী হবেই

তিনি জানান যে ইএফটিএ (EFTA) সদস্য দেশগুলি ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছে। আগামী অক্টোবর মাসেই এই চুক্তি কার্যকর হবে এবং এতে ভারতে ১০ লাখ সরাসরি চাকরি ও মোট ৫০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। ভারতের অর্থনীতি যে ডুবন্ত বা মৃত নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, দেশে অর্থভান্ডার, বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার, স্টক মার্কেট মজবুত রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতিও বিশ্বের মধ্যে অন্যতম কম ভারতেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ভারতে করোনার সময়কালে একজনও মানুষ অনাহারে মারা যায়নি, বরং সরকার ৮০ কোটি মানুষকে দ্বিগুণ রেশন সরবরাহ করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, “এই অতিমারি থেকে দ্রুত সেরে উঠে আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি এবং আমাদের খাদ্য সরবরাহকারী কৃষকদের শক্তির কারণেই এই সবকিছু সম্ভব হয়েছে। আমরা কোভিডকেও সুযোগে পরিণত করেছি। যত কঠিন পরীক্ষাই আসুক না কেন, ভারতই জয়ী হবে।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share