মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত-মার্কিন শুল্ক দ্বন্দ্বের (India-US Relations) আবহেই আমেরিকা সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi in UNGA)। সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা যাচ্ছেন তিনি। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশনে বক্তা হিসেবে নাম রয়েছে তাঁর। এই বৈঠকে থাকবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদির এই সফর প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রক এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি।
মার্কিন সফরে যাবেন মোদি!
সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে নিউ ইয়র্কে রয়েছে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। সেই বৈঠকেই যোগ দিতেই আমেরিকায় যাওয়ার কথা মোদির। তবে এ ব্যাপারে ভারত সরকারের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করা হয়নি। প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরে মোদির মার্কিন সফর নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই নানা মহলে আলোচনা চলছিল। এমনকি, গত গত ১১ অগাস্ট রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা হয় মোদির। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর যে কথা হয়েছে সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন জেলেনস্কি। সূত্রের খবর, রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকের ফাঁকে নিউ ইয়র্কে দুই রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে আলাদা করে দেখা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
ট্রাম্পকে কি এড়াবেন মোদি?
প্রধানমন্ত্রী মোদি আমেরিকায় (India-US Relations) গেলে তাঁর সঙ্গে কথা হতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। মোদি এবং ট্রাম্প সেখানে মুখোমুখি বসলে, গত সাত মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বৈঠকে বসবেন তাঁরা। এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তাঁরা। জি৭ বৈঠকে যোগ দিতে মোদি যখন কানাডায়, সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই সময় আমেরিকায় ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, যাঁকে হোয়াইট হাউসে আপ্যায়ন করেন ট্রাম্প। সেই কারণেই সেবার ট্রাম্পের সঙ্গে মোদি দেখা করেননি বলে জানা যায়।
আপস করবে না ভারত
দ্বিতীয় বার আমেরিকার মসনদে ফেরার পর থেকেই শুল্ক নিয়ে কড়া মনোভাব দেখাচ্ছেন ট্রাম্প। ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক বার ক্ষোভ উগরে দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতকে প্রকাশ্য়ে ভর্ৎসনা করেন তিনি। আর তার পরই দু’দফায় ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেন তিনি। এরপরই মোদি ও ট্রাম্পের ব্যাক্তিগত সম্পর্কেও ছেদ পড়ে। প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান, দেশের স্বার্থে ব্যক্তিগত ভাবে মাশুল দিতেও প্রস্তুত তিনি। তাই মুখোমুখি সাক্ষাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকে।
কবে ভাষণ দিতে পারেন মোদি
উল্লেখ্য, ইউএনজিএ-র (United Nations General Assembly) ৮০তম অধিবেশন শুরু হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। উচ্চপর্যায়ের সাধারণ আলোচনা চলবে ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, অধিবেশনের প্রথম বক্তা থাকবে ব্রাজিল, এরপর আমেরিকা। ২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US President Donald Trump) তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। বক্তাদের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, ভারতের ‘সরকারের প্রধান’ (Head of Government) ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। একইদিনে ইজরায়েল, চিন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ‘সরকারের প্রধান’রাও সাধারণ আলোচনা অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। তবে এখনও স্পষ্ট নয়, নরেন্দ্র মোদি এই সভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন কি না।
ভারত নিজের জায়গায় স্পষ্ট, মিলবে কি রফাসূত্র?
এ বছরের অধিবেশন শুরু হচ্ছে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, দ্বিতীয় মেয়াদের ছয় মাসে তিনি একাধিক যুদ্ধ মিটিয়ে দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড, ইজরায়েল-ইরান, রুয়ান্ডা-কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মিশর-ইথিওপিয়া এবং সার্বিয়া-কসোভোর মধ্যে শান্তিচুক্তি। এছাড়াও, মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামানোর কৃতিত্বও বারবার নিজের বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও ট্রাম্পের সেই দাবিও অস্বীকার করছে ভারত। দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন মধ্যে মোদি যদি আমেরিকায় যান এবং ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত অনেকের। ওই বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসতে পারে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, শুল্ক, বাণিজ্যচুক্তির প্রসঙ্গ। মিলতে পারে কোনও এক রফাসূত্রও! শুধু তা-ই নয়, ১৫ অগাস্ট (শুক্রবার) আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকও নজরে রয়েছে ভারতের।
Leave a Reply