মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিশ্ব নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় সবার আগে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। আবারও মর্নিং কনসাল্ট গ্লোবাল লিডার অ্যাপ্রুভাল ট্র্যাকারে শীর্ষস্থান দখল করেছেন মোদি। ৭৫% অ্যাপ্রুভাল রেটিং পেয়েছেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর থেকে অনেক পিছিয়ে। মাত্র ৪৪ শতাংশ অ্যাপ্রুভাল রেটিং পেয়েছেন ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই ২৮টি দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান লাভের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তিনিই ভারতের ইতিহাসে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সর্বাধিক সংখ্যক বিদেশি রাষ্ট্রীয় সম্মান লাভ করেছেন।
জনপ্রিয়তার নিরিখে অনেক এগিয়ে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুধুমাত্র ভারতের নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে বড় মুখ। যেখানে একের পর এক দেশ তাদের নেতৃত্বে আস্থা হারাচ্ছে, সেখানে মোদি এখন ভারতবাসীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত নেতা। তাঁর উন্নয়নমূলক কাজ, আন্তর্জাতিক কূটনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সংস্কারমূলক পদক্ষেপ তাঁকে এনে দিয়েছে এই অসাধারণ জনপ্রিয়তা। মর্নিং কনসাল্ট গ্লোবাল লিডার অ্যাপ্রুভাল ট্র্যাকার বিশ্বের বিভিন্ন নেতাদের অনুমোদনের রেটিং ট্র্যাক করে। সেই নিরিখে দেখা গিয়েছে, প্রতিপক্ষদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
কীভাবে পেলেন স্বীকৃতি
চলতি বছরের গ্লোবাল লিডার অ্যাপ্রুভাল রেটিং করা হয়েছিল ৪ থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে। যেসব দেশের রাষ্ট্রনেতাদের নির্বাচন করা হয়েছিল, তাঁদের প্রতি প্রাপ্তবয়স্কদের মতামতের ৭ দিনের গড় অনুসারে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। মর্নিং কনসাল্ট (Morning Consult) একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা। বিজনেস ইন্টেলিজেন্স এবং ডেটা অ্যানালিস্ট কোম্পানি। এই সংস্থার সার্ভেতে দেখা গিয়েছে, প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে তিনজন, গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ এইভাবে ভাবেননি। আর ৭ শতাংশ মানুষ নিশ্চিত ভাবে কোনও মতামত প্রকাশ করেননি। মর্নিং কনসাল্ট গ্লোবাল লিডার অ্যাপ্রুভাল ট্র্যাকারের এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে অর্থাৎ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার লি-জে-মিয়ং। তিনি পেয়েছেন ৫৯ শতাংশ অ্যাপ্রুভাল রেটিং বা অনুমোদন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন আর্জেন্টিনার জেভিয়ার মিলেই।
মোদির অনন্য নজির
২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি মোট ২৮টি আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা (Top Civilian Awards) পেয়েছেন, যা তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও বিশ্বব্যাপী প্রভাব স্বীকার করারই প্রতিফলন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী ও মনমোহন সিং—এই তিন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকে মাত্র দুটি করে আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছিলেন। সেই তুলনায় মোদির আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, “ভারতের ইতিহাসে এমন কোনও প্রধানমন্ত্রী আসেননি যাঁর এত ব্যাপক আন্তর্জাতিক প্রভাব পড়েছে। এই সম্মান শুধুমাত্র মোদির নয়, এটি ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কূটনৈতিক স্পষ্টতা ও আত্মবিশ্বাসী বিদেশনীতির প্রকাশ। আজকের ভারত বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে—আমাদের নীতিতে আমরা আপস করবো না। বিশ্ব সেটিকে সম্মান করছে, স্বীকারও করছে।”
আন্তর্জাতিক সম্মানের তালিকা
২০১৬- সৌদি আরব মোদিকে তাদের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান ‘কিং আবদুল-আজিজ শাহ’ সম্মানে ভূষিত করে। ওই বছরই আফগানিস্তানও মোদিকে ‘আমির আমানুল্লাহ খান পুরস্কার’-এ ভূষিত করে যা সেই দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
২০১৮ – প্যালেস্তাইনে গ্র্যান্ড কলার অফ দ্য স্টেট অফ প্যালেস্তাইন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন মোদি।
২০১৯ – মলদ্বীপ সরকারও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘রুল অফ নিসান ইজাউদ্দিন’ সম্মানে ভূষিত করেছে। ওই বছরই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গিয়ে মোদি সেই দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘অর্ডার অফ জায়েদ’-এ ভূষিত হন। বাহরিন সরকার মোদিকে ‘কিং হামাদ অর্ডার অফ দ্য রেনেসাঁ’ ও তাঁকে এই সম্মান জানিয়েছে।
২০২০ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই বছর মোদি পান ‘লিজিয়ন অফ মেরিট’ সম্মান।
২০২৩ – পাপুয়া নিউ গিনির সরকারের তরফেও তিনি পেয়েছেন গ্র্যান্ড কমপ্যানিয়ন অফ দ্য অর্ডার অফ লোগোহু সম্মান। এই সম্মাননা থেকে বাদ পড়েনি ইজিপ্টও। ২০২৩ সালে এই দেশ মোদিকে জানায় অর্ডার অফ দ্য নাইল সম্মান। এই বছর ফ্রান্সের তরফে মোদি পান ‘গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার’ সম্মান এবং গ্রিসের থেকে পান ‘গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ অনার’ সম্মান।
২০২৪ – ভুটান সরকার নরেন্দ্র মোদিকে ভূষিত করে ‘অর্ডার অফ দ্য দ্রুক গ্যালপো’ সম্মানে। এই বছর আরও সম্মান পেয়েছেন মোদি। রাশিয়া জানিয়েছে ‘অর্ডার অফ সেন্ট অ্যান্ড্রু দ্য অ্যাপোসেল’ সম্মান, নাইজেরিয়া জানিয়েছে ‘গ্র্যান্ড কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য নাইজার’ সম্মান, ডোমিনিকা প্রজাতন্ত্র জানিয়েছে ‘ডোমিনিকা অ্যাওয়ার্ড অফ অনার’ এবং গুয়ানা সরকারের থেকে মোদি পেয়েছেন ‘অর্ডার অফ এক্সিলেন্স’ সম্মান। সবশেষে বার্বাডোজে গিয়ে মোদি পান ‘অনারারি অর্ডার অফ দ্য ফ্রিডম অফ বার্বাডোজ’ সম্মান।
২০২৫ – এই বছর ঘানা বাদে আরও ৪ দেশ সম্মানিত করেছে মোদিকে। কুয়েতের ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য মুবারক আল কুবীর’ সম্মান, মরিশাসের ‘দ্য গ্র্যান্ড কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অ্যান্ড কি অফ দ্য ইন্ডিয়ান ওশেন’ সম্মান এবং শ্রীলঙ্কা জানিয়েছে ‘দ্য মিত্র বিভূষণা’ সম্মান। ঘানার আগে সাইপ্রাসে গিয়েছিলেন মোদি। সেই দেশের সরকার তাঁকে ‘গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ ম্যাকারিকস থ্রি’ সম্মানে ভূষিত করেছে। এছাড়াও ত্রিনিদাদ-টোবাগো, ব্রাজিল, নামিবিয়া মোদিকে তাঁদের দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানে ভূষিত করেছেন।
দেশবাসীকে উৎসর্গ
প্রতিবারই নিজের সম্মান দেশবাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। আন্তর্জাতিক মঞ্চেই জানিয়েছেন ১৪০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে এই সম্মান-স্বীকৃতি ভারতের তরুণদের আকাঙ্ক্ষা, তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের প্রতি উৎসর্গ করেছেন মোদি।
Leave a Reply