মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে কিংডাওতে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) চিনের অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এই বৈঠককে ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা কমানো এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করতে এখানে রাজনাথ সিং চার দফা একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন।
রাজনাথ সিং-এর দেওয়া চার দফা প্রস্তাবনাগুলি হল
১. ২০২৪ সালের ‘ডিসএনগেজমেন্ট’ অর্থাৎ সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছিয়ে নেওয়া
২. সীমান্ত নির্ধারণের বিষয়ে অগ্রগতি
৩. সীমান্ত নির্ধারণের জন্য দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা বাড়ানো
৪. দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন
পাকিস্তানের মদতপুষ্ট আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি তুলে ধরেন রাজনাথ (Rajnath Singh)
জানা গিয়েছে, চিনের (China) সঙ্গে এই বৈঠকে রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) পাকিস্তানের মদতপুষ্ট আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নীতিগত অবস্থান ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই বৈঠকের পর রাজনাথ সিং এক্স (প্রাক্তন ট্যুইটার)-এ একটি ছবি শেয়ার করেন এবং জানান, নয়াদিল্লি ও বেজিং কূটনৈতিক সম্পর্ক ইতিবাচক রাখার বিষয়েই আলোচনা করেছে। এর পাশাপাশি, ছয় বছর পর কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়ায় তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে রাজনাথ সিং কী লিখলেন
নিজের এক্স মাধ্যমে রাজনাথ লেখেন, “কিংডাওতে (China) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আমাদের মধ্যে গঠনমূলক মত বিনিময় হয়েছে। প্রায় ছয় বছর পরে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়ায় আমি আনন্দিত। ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত এবং নতুন কোনও জটিলতা এলে তা এড়ানো উভয় পক্ষের কর্তব্য।”
মধুবনীর ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলার একটি বাঁধানো ছবি উপহার দেন রাজনাথ
চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিহারের মধুবনীর ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলার একটি বাঁধানো ছবি উপহার হিসেবে তুলে দেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বৈঠকের পর চিনের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারত পারস্পরিক বোঝাপড়া ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে আগ্রহী এবং সংঘাত এড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও নয়াদিল্লির তরফে এই বৈঠক নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) অতিক্রম করে চিনা সেনা অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। সেই বছরের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, পাল্টা আক্রমণে চিনেরও প্রায় ৪০ সেনাকর্মী নিহত হন। গালওয়ান ঘটনার পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে একাধিক পর্যায়ে বৈঠক হয়, সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের উদ্দেশ্যে। অবশেষে গত বছরের অক্টোবর মাসে ডেপসাং ও ডেমচক-সহ সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকা থেকে সেনা সরানো নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে ঐক্যমত্যে পৌঁছায়। শুরু হয় ‘ডিসএনগেজমেন্ট’ এবং ‘ডিএসক্যালেশন’-এর প্রক্রিয়া। সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ সালের মে মাসের আগের অবস্থানে উভয় দেশের সেনাবাহিনী ফিরে যাবে।
বালুচিস্তানের অস্থিরতার জন্য ভারতকে দায়ী করে পাকিস্তান
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ এবং পহেলগাঁও হামলা নিয়ে এসসিও-তে একটি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। এরপরই চিনের সঙ্গে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এসসিও-র সভাপতিত্ব করছে চিন। চিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাকিস্তান ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চায় এবং সন্ত্রাসবাদের ইস্যু থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করে। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানের বালুচিস্তানে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তা উল্লেখ করে পাকিস্তান এবং ওই প্রদেশে অস্থিরতার জন্য ভারতকেই দায়ী করে তারা।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে কী জানাল চিন?
চিনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দিল্লির সঙ্গে যে কোনও ধরনের জটিলতা এড়াতে চায় বেজিং এবং দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। তবে তারা আরও জানায়, এই বিষয়ে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। ভারত ধারাবাহিকভাবে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখছে, এই বার্তা আরও জোরালো হয় গত বছর, যখন ২০২৪ সালের অক্টোবরে রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
Leave a Reply