মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সাধু সেজে ভারতে আত্মগোপন করেছিল বেশ কিছু বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার ইসলাম ধর্মাবলম্বী। হিন্দু সাধুর ভেক ধরে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছিল ইসলামে দীক্ষিতকরণের কাজ। এবার তাদের মুখোশও খুলে দিল উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সরকার। ভণ্ড এই সাধুদের ধরতে শুরু হয় অভিযান। নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন কালনেমি’ (Operation Kalanemi)। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ধামির এই পদক্ষেপ ভারতের ধর্মীয় ছদ্মবেশ, সীমান্ত পারাপারের অনুপ্রবেশ এবং আদর্শিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। মাত্র ৪ দিনের মধ্যেই উত্তরাখণ্ড পুলিশ ৩০০ জনের বেশি ছদ্মবেশীকে গ্রেফতার করেছে।
চলছে অভিযান (Operation Kalanemi)
দেরাদুন ও হরিদ্বারেই মূলত এই অভিযান চালানো হচ্ছে। এটি শুধু একটি আইনি পদক্ষেপ নয়, একে দেখা হচ্ছে সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার যুদ্ধ হিসেবে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন শাহ আলম ওরফে রুকন রকম। সে বাংলাদেশের নাগরিক। উত্তরাখণ্ডে ঢুকে পড়ে সাধুর ভেক ধরেছিল। তার কাছে মিলেছে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র। সে দেরাদুনে কাঁওয়ার যাত্রীদের কাছ থেকে ভিক্ষা নিচ্ছিল ও প্রতারণা করছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ভণ্ড সাধু একটি বড় নেটওয়ার্কের সদস্য, যারা কাঁওয়ার যাত্রার ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে শুধু অর্থ লুঠ নয়, বরং গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ ছড়ানোর কাজও করে যাচ্ছিল। দেরাদুনের এসএসপি অজয় সিং বলনে, “উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির নির্দেশে বৃহস্পতিবার থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে। সাধু সেজে জনগণের বিশ্বাসভঙ্গ করছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে (Operation Kalanemi)।”
অপারেশন কালনেমি
কেন এই অভিযানের নাম দেওয়া হল অপারেশন কালনেমি? এর উত্তর দিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি স্বয়ং। তিনি বলেন, “যেভাবে অসুর কালনেমি সাধু সেজে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল, তেমনই আজকের সমাজে এমন অনেক কালনেমি আছে যারা ধর্মের নামে অপরাধ করছে।” প্রসঙ্গত, কালনেমি একজন পৌরাণিক অসুর। ত্রেতা যুগে হনুমান যখন সঞ্জীবনী আনতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় অসুর কালনেমি সাধু সেজে তাঁকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করেছিলেন (Uttarakhand)। স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী, সমুদ্রমন্থনের সময় ভগবান বিষ্ণু নিধন করেছিলেন কালনেমিকে। দ্বাপর যুগে তিনিই জন্ম নিয়েছিলেন মথুরার রাজা কংস হয়ে। বস্তুত, কালনেমি হল অন্ধকার সময়ের প্রতিনিধি (Operation Kalanemi)।
ভণ্ড সাধুর রমরমা
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিগত কয়েক দিনে সব মিলিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৮২জন ভণ্ড সাধুকে। তার মধ্যে রবিবারই গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৪জনকে। দেরাদুনের এসএসপি জানান, অপারেশন কালনেমি এখন জারি থাকবে। বিশেষ করে চারধাম যাত্রা এবং কাঁওয়ার যাত্রার কথা মাথায় রেখে এই অভিযান চালু রাখা হবে। কারণ এগুলি মূলত সাধু এবং আধ্যাত্মিক গুরুদের সমাগমের জায়গা। এসএসপি বলেন, “যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কোনও ধর্মীয় পটভূমি ছিল না। ছিল না কোনও আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যও। তারা স্থানীয়ও নয়। তাদের যা ছিল, তা হল বিশ্বাসকে কাজে লাগানোর পরিকল্পিত কৌশল, সহজ-সরল মানুষকে প্রতারিত করা এবং হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করার চক্রান্ত।” প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা আবেগ ও আর্থিকভাবে দুর্বল ভক্তদের, বিশেষ করে মহিলা ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের টার্গেট করেছিল। তারা অলৌকিক ঘটনা, রোগমুক্তি ও ঈশ্বরীয় হস্তক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করত (Uttarakhand)। এর আড়ালে মানসিক প্রভাব বিস্তার, অর্থ আদায় এমনকি কিছু ক্ষেত্রে যৌন হয়রানিতেও লিপ্ত ছিল (Operation Kalanemi)।
বিজেপির বক্তব্য
উত্তরাখণ্ড বিজেপির সভাপতি মহেন্দ্র ভাট বলেন, “গেরুয়া বসনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরাধী ও অনুপ্রবেশকারীরা বিশ্বাসের শত্রু। আইন তাদের সেভাবেই বিবেচনা করবে। ভারতবাসী তাদের মন্দির ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনও মতাদর্শিক যুদ্ধ সহ্য করবে না।” তিনি জানান, অপারেশন কালনেমি হবে হরিদ্বার, হৃষিকেশ, কেদারনাথ ও বদ্রীনাথেও। এবং ভবিষ্যতে এটি অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির জন্যও একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
কুমায়ুনে গ্রেফতার ৩০০
এদিকে, উত্তরাখণ্ড পুলিশ অপারেশন কালনেমির অধীনে কুমায়ন বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনে ৩০০-এরও বেশি ভুয়ো সাধুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল, ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্তকারী ভণ্ড ধর্মগুরুদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া (Uttarakhand)। কুমায়ুনের পুলিশের আইজি ঋদ্ধিম আগরওয়াল বলেন, “কুমায়ুন বিভাগের ছ’টি জেলায়ই এই অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ৩০০-এরও বেশি ব্যক্তি, যারা সাধুবাবা বা আধ্যাত্মিক গুরু সেজে প্রতারণা করছিল (Operation Kalanemi), তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে এফআইআর, চালান ও সতর্কতামূলকভাবে আটক করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “এই ব্যক্তিরা অন্ধবিশ্বাস, প্রতারণা এবং ভুয়ো অলৌকিক ক্ষমতার দাবি করে মানুষের বিশ্বাসের অপব্যবহার করছিল। তাদের কারও কাছেই বৈধ পরিচয়পত্র বা প্রমাণপত্র ছিল না।”
Leave a Reply