মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পর এবার ভারত সফরে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি (Zelenskyy’s India Visit)। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার বার্তা দিতেই এই মাষ্টারস্ট্রোক নয়াদিল্লির। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতেই দিল্লি সফরে আসতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। যদিও দিল্লির তরফে দিন তারিখ এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ভারত দুই দেশের মধ্যেই ভারসাম্য বজায় রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি যুদ্ধের মাঝখানেই ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয় দেশ সফর করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট উভয়ই বলেছেন, এই যুদ্ধ বন্ধে ভারত ভূমিকা রাখতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে
এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, নয়াদিল্লির তরফে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নয়াদিল্লি সফরের আগে থেকেই এই চেষ্টা চলছে বলে সূত্রের দাবি। ভারতীয় ও ইউক্রেনীয় আধিকারিকদের মধ্যে সফরের বিষয় নিয়ে বেশ কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পরে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এখন পর্যন্ত মাত্র তিনবার ভারত সফর করেছেন। তাও কমপক্ষে ১৩ বছর আগে। ১৯৯২, ২০০২ এবং সবশেষে ২০১২ সালে কোনও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভারত সফর করেছিলেন। সেই দিক থেকে এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ভারসাম্যবজায় রাখছে ভারত
জেলেনস্কির এই সফর রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আবহে উভয় পক্ষের সঙ্গেই ভারতের ভারসাম্যকে আরও জোরদার করবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কূটনৈতিক রাস্তায় বেশ কয়েক মাস ধরে এই নীতি অনুসরণ করছে নয়াদিল্লি। যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৪-এর জুলাই মাসে মস্কো সফর করে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু এরপরেই মাত্র এক মাস পরে আগস্টে ইউক্রেন সফর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রস্তাবিত সফরের সময় নির্ভর করবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা কীভাবে এগিয়ে যায় এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে কী ঘটে তার উপর। এছাড়াও, ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, বিশেষ করে জেলেনস্কির সরকার বর্তমানে একটি বড় দুর্নীতি কেলেঙ্কারির কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। এগুলিও প্রস্তাবিত সফরের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
জেলেনস্কির ভারত সফর তাৎপর্যপূর্ণ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে প্রায় ৪ বছর ধরে। এই আবহে ভারত ধারাবাহিকভাবে শান্তির বার্তা দিয়ে গিয়েছে। সংলাপ ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর অঙ্গীকার করেছে ভারত। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামনে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন যে ভারত এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ নয়, বরং শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর মোদি বলেন, ‘মস্কো আমাদের সবকিছু সম্পর্কে অবহিত করেছে এবং আমাদের উপর আস্থা দেখিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিশ্বকে ফের শান্তির পথে ফিরিয়ে আনবে।’ পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বহু দেশের সঙ্গেই আলোচনা চলছে। শান্তি প্রস্তাব তৈরির প্রচেষ্টাও অব্যাহত। প্রধানমন্ত্রী মোদি যেভাবে পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়।’ এই আবহে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলনস্কির ভারত সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখেছে। মোদি কমপক্ষে ৮ বার জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং দুই রাষ্ট্রনেতা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কমপক্ষে চারবার দেখাও করেছেন। ফলে জেলেনস্কির ভারত সফর মোটেই অসম্ভবও নয়।

Leave a Reply