মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সুকান্ত মজুমদারের উত্তরসূরি হিসেবে বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেডের দায়িত্ব পেতে চলেছেন শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya)। সর্বসম্মতিক্রমে দলের রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে বুধবার, মনোনয়ন দাখিল করেন শমীক। রাজ্য সভাপতি হিসেবে ঘোষণা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির (BJP) পুরনো মুখ হিসেবেই তাঁর পরিচয়।
শমীকের নেতৃত্বেই বিধানসভা ভোটে বিজেপি (BJP)
সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর-এর সাফল্য এবং পাকিস্তানের কর্তৃক ভারতের পহেলগাঁও-এ যে ভয়ংকর জঙ্গি হামলা সংগঠিত হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদদের একটি দল পৃথিবীর নানা দেশে গিয়ে ভারতের অপারেশন সিঁদুর, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ, এই বিষয়গুলিকে তুলে ধরেন। সেই দলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাংসদ হিসেবে জায়গা পান শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya)। বিদেশে গিয়ে তিনি তুলে ধরেন অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের কথা। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদ হিসেবে তাঁর নাম যাওয়ায় অনেকেই সে সময় মনে করেছিলেন, এবার হয়তো গুরু দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে শমীক ভট্টাচার্যকে। অবশেষে মিলেও গেল সেই অনুমান। শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছে বিজেপি।
বাগ্মী নেতা হিসেবে পরিচিত শমীক ভট্টাচার্য, প্রথম বিধায়ক হন ২০১৪ সালে
রাজ্য বিজেপিতে অন্যতম বাগ্মী নেতা হিসেবে পরিচিত শমীক ভট্টাচার্য। তিনি নানারকম দায়িত্ব সামলেছেন। বঙ্গ বিজেপির কঠিন সময়ে তিনি দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। পরবর্তীকালে, ২০১৪ সালে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪-র এই উপনির্বাচনে তৃণমূলের নারায়ণ মুখোপাধ্যায়কে পরাস্ত করেন শমীক ভট্টাচার্য। একক ক্ষমতায় বিজেপি প্রথমবারের জন্য বিধানসভায় জয়লাভ করে। বিধায়ক হন শমীক (BJP)।
জন্ম ১৯৬৩ সালে, সংগঠনের হাতেখড়ি এবিভিপি-তে, বিজেপিতে যোগদান ১৯৮২ সালে
শমীক ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৬৩ সালের ৫ নভেম্বর। বর্তমানে তাঁর বয়স ৬২ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি বিএ পাশ, পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল তিনি রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। শমীক ভট্টাচার্য নিজেই জানিয়েছেন যে ১৯৮২ সাল থেকে তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, অর্থাৎ আজ থেকে ৪৩ বছর আগে। প্রসঙ্গত, বিজেপি (BJP) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে। বিজেপিতে যুক্ত হওয়ার আগে তাঁর সংগঠনের হাতেখড়ি হয় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ-এর মাধ্যমে। ছাত্র সংগঠনের মধ্য দিয়েই তিনি রাজনীতির পাঠ প্রথম শেখেন। দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ তিনি সামলেছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর বক্তব্য মুগ্ধ করেছে মানুষকে। এ হেন শমীক ভট্টাচার্যের হাতেই এবার ব্যাটন তুলে দিল বিজেপি। তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গ বিজেপি লড়বে ‘২৬-এর মহারণ।
সোমবারই বৈঠক হয় নাড্ডার সঙ্গে
সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, শমীক ভট্টাচার্য ও রবিশঙ্কর প্রসাদকে সঙ্গে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। এই বৈঠকের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি পদে শমীকের নাম ঘিরে জল্পনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দিলীপ ঘোষের উত্তরসূরি হিসেবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। ইতিমধ্যে তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পদেও রয়েছেন। তবে বিজেপির ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির ফলে রাজ্য সভাপতি পদের পরিবর্তন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
বুধবারই মনোনয়ন জমা দেন শমীক
এর মধ্যেই, বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশও চলে আসে কলকাতায়। রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকেই রাজ্য সভাপতি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বললেন দিল্লির নেতৃত্ব। এর পরেই, দুপুর ২টা নাগাদ সল্টলেকের রাজ্য বিজেপি দফতরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। আর কোনও প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেননি। এরফলে তিনি সুকান্ত মজুমদারের উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত হলেন। উল্লেখ্য, গত সোমবার সকালেই তিনি দিল্লি রওনা দেন। সেখানে গিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে অংশ নেন।
ব্যক্তিগত জীবনে পড়াশোনা করতে ভালোবাসেন
বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত জীবনটা কীরকম? তা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলেন, পড়াশোনা করতে তিনি খুব ভালোবাসেন। শমীক ভট্টাচার্য প্রচুর পড়াশোনা করেন। লেখেন কবিতাও। একের পর এক কবিতার বই তিনি নিমেষে শেষ করে ফেলেন। যে কোনও বিষয় নিয়েই তিনি অধ্যবসায় করতে ভালোবাসেন। শমীক ভট্টাচার্য আজও পর্যন্ত যে কোনও বড় রাজনৈতিক বিতর্কসভায় বিজেপির তরফ থেকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীও এই মন্তব্য করেন যে, দেশের পাঁচ জন সাংসদের মধ্যে শমীক ভট্টাচার্য একজন। রাজ্যসভায় তাঁর বাগ্মিতা মুগ্ধ করেছে সকলকে। নারী নির্যাতন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস প্রভৃতি ইস্য়ুতে বেশ ব্যাকফুটে তৃণমূল। এই রাজনৈতিক আবহে বিজেপি তেড়েফুঁড়ে মাঠে নেমেছে। গেরুয়া শিবির ঝাঁপিয়ে পড়েছে ২০২৬-এর মহারণে, রাজ্যের মসনদ দখলের লক্ষ্যে। রাজ্য জুড়ে গেরুয়া শিবিরের ঝাঁজ বাড়াচ্ছে শাসকবিরোধী আন্দোলনে। তারই মধ্যে বিজেপির নতুন সভাপতির দায়িত্ব পাচ্ছেন শমীক ভট্টাচার্য।
Leave a Reply