North Bengal Disaster: ‘দিদি দিদি বলতে বলতে তেড়ে এল’! ধস বিধ্বস্ত নাগরাকাটায় আক্রান্ত বিজেপির সাংসদ ও বিধায়ক

north Bengal disaster attack on bjp mla shankar ghosh mp khagen murmur in nagrakata

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উত্তরবঙ্গে (North Bengal Disaster) দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেতে হল বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কদের। ধস বিধ্বস্ত নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন শঙ্কর ঘোষ, খগেন মুর্মু সহ বিজেপির সাংসদ ও বিধায়করা। সেখানে গিয়ে মারধরের মুখে পড়েন তাঁরা। এলাকার কিছু মানুষের গুন্ডামির মুখে নাকাল হন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ও মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু। প্রবল আঘাত ও মারে মাথা ফেটে যায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর। রক্তে সারা মুখ ভিজে যায় তাঁর। পিছন থেকে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে ধাক্কা মারা হয়। গাড়ি করে জখম মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে ‘ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার’ কথা বর্ণনা করলেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ।

গাড়ির সিটের তলায় শুয়ে প্রাণে বাঁচলেন

শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করলেন, কিছু মানুষ ‘দিদি দিদি’ বলে তাঁদের দিকে তেড়ে যান। প্রথমে গালাগালি এবং তার পর মারধর। বিধায়কের দাবি, গাড়ির সিটের তলায় প্রায় শুয়ে না পড়লে তাঁর মাথা ফেটে যেত। দুপুর ২টো নাগাদ ফেসবুক লাইভে আসেন শঙ্কর। তখন গাড়িতে তিনি বসে। আতঙ্কের ছাপ চোখেমুখে। পাশের আসনে শুয়ে রয়েছেন মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন। তাঁর পাঞ্জাবিতে রক্তের দাগ। শঙ্কর জানান, প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করিয়ে শিলিগুড়ি নিয়ে যাচ্ছেন সাংসদকে। ফেসবুক লাইভে বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির দিকে রওনা দিয়েছি আমরা। খগেনদা (মুর্মু) রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আমাদের আগের গাড়ির একটাও কাচ নেই। আমার সারা শরীর কাচে ভর্তি। প্রাথমিক চিকিৎসা করে এসেছি। খগেনদার অবস্থা দেখুন… ত্রাণ দেওয়ার জন্য খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম আমরা। একটি বোটে জয়ন্তদা, দীপকদা ছিলেন। একটি বোটে সমীরদারা নদীর অপরপ্রান্তের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে যান। আমি খগেনদা এই প্রান্তের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। সেই সময় কিছু লোক ‘দিদি দিদি’ করে আমার কাছে আসেন। কেন আমরা এসেছি, কী করব এখানে— এই সব জিজ্ঞাসা করে প্রথমে গালাগালি তার পর তারা পিছন থেকে মারধর শুরু করেন। এখন শিলিগুড়ির দিকে রওনা দিয়েছি। ‘রিলিফ’ দিতে এসে দেখুন আমাদের সাংসদের কী অবস্থা করেছে। আমার মাথায় বাটাম চালাতে গিয়েছিল। সিটে বসে পড়েছিলাম।’’

রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

নাগরাকাটার বামনডাঙা যাওয়ার মুখে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গাড়িতে পাথর, জুতো, লাঠি ছোড়া হয়। বিক্ষোভের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন বিজেপি বিধায়ক-সাংসদরা। পিছনে তৃণমূল আছে, অভিযোগ করেন বিজেপি নেতারা। শঙ্কর ঘোষ ও খগেন মুর্মু, কোনওক্রমে পালান পরিস্থিতি থেকে। সঙ্গে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও আটকানো যায়নি আক্রমণ। ছবিতে দেখা যায়, খগেন মুর্মুর জামাকাপড় রক্তে ভেসে গিয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়ির মধ্যে বসে ছালেন তিনি। তাঁর কপাল, চোখ রক্তে ভরা। ঝর ঝর করে পড়ছে তা পাঞ্জাবি ও উত্তরীয়তে। কোনওভাবেই রক্ত আটকানো যাচ্ছে না। ভিডিওতে দেখা যায়, এক দল লোকজন নিরাপত্তারক্ষীদেরও তোয়াক্কা না করে তাদের ঠেলে ফেলার চেষ্টা করছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বিজেপির নেতারা। এই ঘটনায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিক বলেন, “দলমত নির্বিশেষে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পাশে দাঁড়ানোর সময় এটা। অথচ এরকম একটা সময়ে রাজনীতি করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। সাংসদকে প্রাণে মেরে ফেলার মতো করে আক্রমণ করা হল, এটা মেনে নেওয়া যায় না।” দলের সাংসদ এবং বিধায়কের উপর হামলার নিন্দা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুন্ডারা পরিকল্পিত ভাবে বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলা চালিয়েছে।’’

এলাকায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী

বৃষ্টি এবং ধসে পাহাড় থেকে তরাই এবং সমতল, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত। এই অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলি আলাদা আলাদা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে পৌঁছোচ্ছে। পূর্ব ঘোষণা মাফিক সোমবার সকালে শিলিগুড়ি যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে বাগডোগরা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা, জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ, ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ প্রমুখ। ছিলেন খগেন, শঙ্করেরাও। এর পর তাঁরা বিপর্যস্ত বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি দেখতে বেরিয়ে পড়েন। বামনডাঙায় ঢোকার আগে বিক্ষোভের মুখে পড়েন দু’জনে। লাঠি, জুতো নিয়ে তাঁদের উপর চড়াও হন কয়েকশো মানুষ। নদী থেকে পাথর তুলে তাঁদের গাড়ি লক্ষ করে ছোড়া হয়। তাতেই মাথা ফেটে যায় খগেনের। গলগল করে রক্ত ঝরতে থাকে। ধাক্কা দেওয়া হয় শঙ্করকেও। আপাতত দুই নেতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এখনও এলাকায় জড়ো হয়ে রয়েছেন কয়েকশো মানুষ। কেন্দ্রীয় বাহিনীও এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। তাতেও উত্তেজনা কমছে না বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share