মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো মেটার পর এবার বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের পরবর্তী উৎসব হল কার্তিক পুজো। ১৬ নভেম্বর শনিবার পালিত হতে চলেছে কার্তিক পুজো (Kartik Puja 2025)। প্রতি বছর কার্তিক সংক্রান্তি, অর্থাৎ কার্তিক মাসের শেষ দিনে পালিত হয় কার্তিক পুজো। আমাদের রাজ্যে হেমন্তকালের দেখা মেলে অত্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য। এই হেমন্তকালে যে কয়েকটি উৎসব হয়, তার মধ্যে অন্যতম কার্তিক পুজো।
কেন বাড়িতে কার্তিক ফেলা হয়?
নবদম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক (Kartik Puja 2025) রেখে এসেছে, এমন বন্ধু আমাদের পরিচিত মহলে নিশ্চয়ই রয়েছে। স্বয়ং মহাদেব-পুত্র তাঁদের বাড়িতে এসেছেন বলে কথা! গৃহকর্তা বা কর্ত্রীকে তাই প্রচলিত নিয়ম মেনে পরপর চার বছর এই পুজো করতে হয়। কিন্তু বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুর কেন রাখা হয়? নিছক মজার উদ্দেশ্যেই নবদম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুর রাখা হয় না। এর মধ্যে লোকাচার রয়েছে। কী সেই লোকাচার? তা হল, নবদম্পতির কোলে যেন কার্তিকের মতো পুত্র আসে। কিন্তু হঠাৎ কার্তিকের মতো পুত্রের আকাঙ্খাই কেন? পৌরাণিক মতে, মা দুর্গা এবং মহাদেবের পুত্র হলেন দেব সেনাপতি কার্তিক। এই পৌরাণিক দেবতা অত্যন্ত বীর ও সাহসী। তিনি সুদর্শন ও বলিষ্ঠ চেহারার অধিকারী।
সাহসী, সুদর্শন পুত্রসন্তান লাভের আশা
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, দেব সেনাপতি কার্তিকের পুজো (Kartik Puja 2025) করলে পুত্রসন্তান লাভ হয়। তাঁর মতো সাহসী ও সুদর্শন সন্তান লাভ করতেই অনেক নববিবাহিত দম্পতি কার্তিক পুজো করে থাকেন। এই কারণে আমাদের রাজ্যে নববিবাহিত দম্পতির ঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে কার্তিক ফেলে আসার প্রথা রয়েছে। পাড়ার বন্ধুবান্ধবরাই সাধারণত এই কাজ করে থাকেন। সেই কার্তিক তুলে এনে বাড়িতে পুজো করার রীতি রয়েছে। কার্তিকের আরাধনা করলে সাংসারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায় এবং আয় বৃদ্ধি হয়। কার্তিকের সঙ্গে বীরত্বের সম্পর্ক থাকার কারণে দেব সেনাপতির আরাধনায় যশ ও বল লাভ হয় বলে মনে করা হয়। দেব সেনাপতি কার্তিকের উপাসনা করলে মঙ্গল গ্রহের অশুভ প্রভাব কেটে যায় বলেও অনেকে মনে করেন। পশ্চিমবঙ্গে কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার। দক্ষিণ ভারতে মুরুগান নামে কার্তিকের যে রূপের উপাসনা করা হয়, সেখানে তাঁর দুই স্ত্রী।
বাংলায় কার্তিক পুজো বেশ জনপ্রিয়
বাংলায় কার্তিক পুজো (Kartik Puja 2025) প্রায় সর্বত্রই হয়। এর মধ্যে হুগলির বাঁশবেড়িয়া এবং পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কার্তিক পুজো ব্যাপক জনপ্রিয়। এই দুই জায়গায় কার্তিক পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবে মাতেন লাখ লাখ মানুষ। সুসজ্জিত আলোর মালা, মণ্ডপসজ্জার কারুকার্য, বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবীদের বিশালাকার প্রতিমার সঙ্গে থাকে নানা রকমের বাজনা।
১৭৫০ নাগাদ ধুমধাম করে কাটোয়াতে কার্তিক পুজো শুরু
চলতি বছরে কাটোয়ার একাধিক পুজোমণ্ডপে আগের দিন থেকেই প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিউ আপনজন, জনকল্যাণের মতো ক্লাবগুলিতে এবারও থিমের পুজো লক্ষ্য করা যাবে। কাটোয়ার কার্তিক পুজো রাজ্যজুড়ে জনপ্রিয় কার্তিক লড়াই নামে। ১৭৫০ নাগাদ ধুমধাম করে কাটোয়াতে কার্তিক পুজোর (Kartik Puja 2025) সূত্রপাত হয় বলে জানা যায়। অন্যদিকে বাঁশবেড়িয়াতেও কার্তিক পুজোর বেশ ধুমধাম চোখে পড়ছে। যেমন, চলতি বছরে ৪৮ বর্ষে পদার্পণ করছে বাঁশবেড়িয়ায় অনির্বাণের জামাই কার্তিক পুজো। বিগত বছরগুলিতে একের পর এক দারুণ থিম নিয়ে এসেছে এই অনির্বাণ। আর এবার তাদের থিম নয়া সংসদ ভবন।

Leave a Reply