মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বছর পেরোলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ঠিক তার আগেই ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে ১৪ বছরের উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, নতুন বছরের শুরুতে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিধায়কদের বিরুদ্ধে মানুষের আদালতে চার্জশিট পেশ করবে বিজেপি৷ মঙ্গলবার এদিন ৩৫ ফুট হনুমান মূর্তির উদ্বোধনে মালদায় আসেন শুভেন্দু ৷ মূর্তি উদ্বোধন কর্মসূচি সেরে সন্ধ্যায় তিনি পুরাতন মালদার একটি বিলাসবহুল হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ৷ সেখানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একের পর আক্রমণ শানান বিরোধী দলনেতা৷
আয়ুষ্মান ভারত চালু করুন
এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘‘প্রয়াত রতন টাটা যেটা বলে গেছেন, সেটাই সঠিক। যে ট্রিগার মাথায় রেখে আমাকে রাজ্য থেকে তাঁড়ানো হল। আমি খারাপ এম-এর কাছ থেকে ভাল এম-এর কাছে গেলাম। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। আর এই রাজ্য থেকে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন আপনি। ..আপনার সার্টিফিকেট প্রয়াত রতন টাটা দিয়ে গিয়েছেন। আপনাকে শিল্প নিয়ে আর কিছু করতে হবে না।..আবার আজকে বলেছেন দেউচা পাঁচামিতে ১ লক্ষ মানুষের কর্ম সংস্থান হবে! আপনি নির্বাচনে চালিয়ে যাচ্ছেন। ৪২ লক্ষ ছেলে মেয়েকে স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। এরও তালিকা আমরা দেখতে চাই। আপনার আমলে, স্বাস্থ্য বাজেটে ছয় গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। আপনি অবিলম্বে আয়ুষ্মান ভারত চালু করুন।’’
স্বেচ্ছাচারিতার পাঁচালি
শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতার পাঁচালি মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন। এবং আমরা বলি এটা জলাঞ্জলির পাঁচালি। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলার গৌরব, সংষ্কৃতি, মায়ের সম্মান, কন্যার সুরক্ষা, আপনার হাতেই, জলাঞ্জলি হয়েছে। এর উত্তর অভয়ার বাবা-মা সঠিকভাবে দিতে পারবেন। তাই এই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভারতীয় জনতা পার্টি, যথা সময়ে রাজ্যস্তরে ব্যর্থতার শ্বেতপত্র প্রকাশ করা শুধু নয়, ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রে, আপনি ১১, ১৬, ২১ এর বাজেটে, ডিপার্টমেন্টাল বাজেটে, কী কমিট করেছেন, আর কী করেছেন, আমরা জানুয়ারি মাসে প্রতিটা বিধানসভাতে, উপস্থিত হয়ে আপনার বিরুদ্ধে, আপনার নির্বাচিত এমএলএ-দের বিরুদ্ধে, চার্জশিট দাখিল করব।’’
উন্নয়নের পাঁচালি-কে কটাক্ষ
২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই, মঙ্গলবার নবান্নে তৃণমূল সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দফতর ভিত্তিক কাজের খতিয়ানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’। একে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আজ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আইপ্যাকের তৈরি করা চিত্রনাট্য, উন্নয়নের পাঁচালি প্রকাশ করেছেন ৷ আজ তৃণমূলের একটি প্রচার অভিযানের সূচনা হয়েছে ৷ এটা উন্নয়ন নয়, ঢপের পাঁচালি, হতশ্রী পাঁচালি, জলাঞ্জলির পাঁচালি ৷ এতে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ১৫ জনের দল গঠন করা হয়েছে ৷ মিথ্যা প্রচার করার জন্য প্রতিটি দলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷ এরা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে মন্দির দর্শন করবে ৷ তারপর জনসভা, কমিউনিটি লাঞ্চ করে একজন দলীয় কর্মীর বাড়ি পরিদর্শন করবে ৷ সন্ধ্যায় স্ট্রিট কর্ণার করে এলইডি ভ্যানের মাধ্যমে পিসি’র প্রচার হবে ৷ সেই প্রচারের সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই ৷’’
তৃণমূলের চাকরি চুরি
নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বিজেপি নেতার অভিযোগ, ‘‘তিনি বলেছেন, রাজ্যের জিএসডিপি হয়েছে ২০ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা ৷ পুরোপুরি মিথ্যা ৷ দারিদ্র সীমার বাইরে আনা হয়েছে ১ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে ৷ প্রধানমন্ত্রীর অন্ন সুরক্ষা যোজনার চাল আর গম যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলেই বোঝা যাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অবস্থা কী ৷ তিনি বলছেন, বেকারত্বের হার কমিয়েছেন ৪০ শতাংশ ৷ আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, তিনি কাদের চাকরি দিয়েছেন, তাদের নাম, বাবার নাম আর ঠিকানা দিয়ে সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করুন ৷’’ শুভেন্দুর দাবি, ‘‘এই মুখ্যমন্ত্রী বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া এক কোটি বেকারকে ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকারে পরিণত করেছেন ৷ এই মুখ্যমন্ত্রীর আমলে ২০১৫ সালে শেষ এসএসসি পরীক্ষা হয়েছিল ৷ ২০১৭ সালে শেষবার পিএসসি পরীক্ষা হয়েছিল ৷ দীর্ঘ ৮-৯ বছর ধরে কোনও পরীক্ষা হয়নি ৷ চাকরিও হয়নি ৷ বরং, চাকরি চুরি হয়েছে ৷’’
বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন
মুখ্যমন্ত্রীকে বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যের ৫১ টি কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র বন্ধ কেন? যুবশ্রীর কী হল? আপনি বলেছেন কৃষিক্ষেত্রে ৯.১৬ গুণ উন্নয়ন হয়েছে ৷ আপনাকে বলতে হবে সারের কালোবাজারি হয় কেন? রাজ্যে যত সরকারি জমি রয়েছে, আপনার লোকজন তার রেকর্ড পাল্টে দিয়েছে ৷ ভূমি দফতর আপনারই হাতে ৷ আমি বলছি, রাজ্যে একটাও কর্মসংস্থান হবে না ৷ তাজপুর বন্দর আর দেউচা পাঁচামি নিয়ে আপনি তিনটি নির্বাচনে ভাঙা টেপ রেকর্ড চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ আসলে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের পাঁচালি-কে দুর্নীতি, তোষণ আর সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতার পাঁচালি বলে অভিমত শুভেন্দুর।’’

Leave a Reply