মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শুক্রবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস (Md Yunus) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ওই ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন যে, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন (Bangladesh Election) অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখযোগ্য যে, এর আগে বাংলাদেশের বিএনপি সহ প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দল ২০২৫ সালের ডিসেম্বরেই নির্বাচনের দাবি করেছিল। তবে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের দাবিকে উপেক্ষা করলেন ইউনূস। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক চাপের কারণে আসলে এভাবেই সময় কিনতে চাইছেন ইউনূস। একারণেই ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের পরিবর্তে, ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
শর্ত সাপেক্ষে ছাত্রদের জাতীয় নাগরিক দলের সমর্থন ইউনূসের সিদ্ধান্তকে
বাংলাদেশের অন্যতম সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ছাত্রদের জাতীয় নাগরিক দল (এনসিপি) ইউনূসের ২০২৬ এপ্রিলের নির্বাচনের ঘোষণাকে সমর্থন করেছে। তারা জানিয়েছে, জুলাই মাসের ঘোষণা ও অন্যান্য সংস্কারমূলক কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে এপ্রিলেই নির্বাচন হলে অসুবিধা নেই।
ইউনূসের সিদ্ধান্ত নিয়ে কী বলছেন ঢাকার শিক্ষাবিদ (Bangladesh Election)
তবে ইউনূস (Md Yunus) যখন এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেন, তিনি কোনও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করেননি। এনিয়েই ঢাকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রেজাউল রহমান লেনিন এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অচলাবস্থা এবং ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী আইন রয়েছে। এ কারণে মনে হয় না ইউনূস সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন (Bangladesh Election) পরিচালনা করতে পারবে।”
বিশৃঙ্খল ও অনিশ্চয়তার পরিবেশেই ৮ মাস দেশ শাসন ইউনূসের
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়। জামাতদের ষড়যন্ত্রে দখল করা হয় গণভবন। দেশ ছাড়েন হাসিনা। আশ্রয় নেন ভারতে। এর পর মহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন (Bangladesh Election)। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর সরকারকে ঘিরে নানা বিতর্ক দেখা গেছে। দেশে বেড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব এবং ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ। সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর লাগামছাড়া অত্যাচারের কারণে মুখ পুড়েছে ইউনূস সরকারের। প্রায় ৮ মাস এই বিশৃঙ্খল ও অনিশ্চয়তার পরিবেশের মধ্যেই ইউনূস সরকার দেশ শাসন করছে।
সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ছাত্ররা
ইউনূসের ঘোষণার আগে তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা জানিয়েছিলেন যে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের দল এনসিপি দাবি তুলেছে, নির্বাচন কমিশনকে যেন বিএনপির প্রভাব মুক্ত হয়। তারা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছে। এরপরে নির্বাচন করাতে চায় ছাত্ররা। অন্যদিকে, বিএনপি সমেত প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চায়।
বিএনপির তাড়াহুড়োর কারণ (Bangladesh Election)
বিএনপির এত তাড়া কিসের? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ এখন দুর্বল অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশে। একটা সময়ে আওয়ামি লিগের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল বিএনপি। এই সুযোগ নিয়ে বিএনপি মসনদ দখল করতে চাইছে বাংলাদেশে। বিএনপির আশঙ্কা, সময় যত পেরিয়ে যাবে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে।
সেনাপ্রধান কী বলেছিলেন?
এদিকে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী গত ৫ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিলম্ব করার অভিযোগ আনেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু বিএনপি নয়, দেশের প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাইছে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানও ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, একটি নির্বাচিত সরকারই নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম।
শীতকালে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
সম্প্রতি মহম্মদ ইউনূস তাঁর উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছিলেন যে তিনি পদত্যাগের পরিকল্পনা করছেন। এতে দেশজুড়ে রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়। তবে পরে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই একটি নির্বাচিত সরকার গঠন হওয়া প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশে শীতকালই নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এপ্রিল মাসে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরীক্ষা চলে, ফলে শিক্ষকরাও ব্যস্ত থাকেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলিতেও লাগাম টানা হয়। তা সত্ত্বেও ইউনূস সরকার সরাসরি ঘোষণা করেছে যে নির্বাচন এপ্রিল মাসেই অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply