তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
দরজায় কড়া নাড়ছে শীত (Winter Season)! ভোরের ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। দুপুরে রোদের তীব্রতায় ঠান্ডার আমেজ আর থাকছে না। তাই বাড়ছে অস্বস্তিও। এমন পরিস্থিতিতে বিপদ বাড়ছে। হৃদরোগের ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। প্রৌঢ়দের পাশাপাশি কম বয়সিদের মধ্যেও হৃদরোগের (Heart Disease) প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। বিশেষত শীতের আগে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। তাই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগাম সতর্কতা না নিলে বড় বিপদ এড়ানো যাবে না।
কেন শীতের (Winter Season) শুরুতে হৃদরোগের প্রকোপ বাড়ছে?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শীতের শুরুতে হৃদরোগের (Heart Disease) প্রকোপ বাড়ে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভারতে হৃদরোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও এই রোগের দাপট বাড়ছে। তাই বছরভর সাবধানতা জরুরি। তবে শীতের সময়ে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। তাঁরা জানাচ্ছেন, বছরের এই সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। বিশেষত তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য বদল ঘটে। তাপমাত্রা বারবার ওঠানামার জেরে রক্তচাপের উপরেও প্রভাব পড়ে। দিনের একটা সময়ে হঠাৎ গরম, আবার কিছুটা সময়ে বেশ ঠান্ডা, এমন তাপমাত্রার বদলের জেরে রক্তচাপ হঠাৎ করেই ওঠানামা করে, এর জন্য হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
কাদের বিপদ বেশি?
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে হৃদরোগের (Heart Disease) ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই শীতের (Winter Season) শুরুতে তাঁদের বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্যও বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হয়। কারণ, এই সমস্যা থাকলে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হয়। তাই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
কীভাবে সুস্থ থাকবেন?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীর সুস্থ রাখতে এই আবহাওয়ায় বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। বিশেষত হৃদরোগের (Heart Disease) ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়মিত খাওয়া জরুরি। সহজপাচ্য খাবার নিয়মিত খাওয়া দরকার। কম তেল মশলা দিয়ে নিয়মিত সবুজ সব্জি, মাছ, মাংস কিংবা ডিম খাওয়া প্রয়োজন। যাতে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং প্রোটিন পায়। আবার যাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা না বাড়ে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার একেবারেই খাওয়া চলবে না। যাতে শরীরে অতিরিক্ত ওজন না বাড়ে। তাতে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। প্রাণীজ প্রোটিনের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে সবুজ সব্জি, ফাইবার সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে। শরীরে প্রোটিনের পাশপাশি ভিটমিন, খনিজ পদার্থের জোগান হলে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। শরীর সুস্থ থাকবে।
খাবারের পাশপাশি নিয়মিত শারীরিক কসরত করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত আধ ঘণ্টা হাঁটা জরুরি। তাতে শরীরে ক্যালোরি ক্ষয় হয়। নিয়মিত আধ ঘণ্টা হাঁটলে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আবার প্রত্যেক দিন সকালে যোগাভ্যাস করলে স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শরীরের অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে। শীতে ঘাম কম হয়। তাই অনেক সময়েই ক্যালোরি ক্ষয় কম হয়। তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। এই সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম করলে একাধিক রোগের ঝুঁকি কমবে। হৃদরোগের আশঙ্কাও কমবে।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশের পরামর্শ, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আক্রান্তদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা দরকার। যাতে তাদের রক্তচাপ অনিয়মিত হচ্ছে কিনা, সেটা নজরে রাখা যায়। তাছাড়া, ডায়াবেটিস কিংবা কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে হাতে-পায়ের পেশিতে খিঁচুনি, মাথার পিছনে যন্ত্রণা কিংবা বুকে চিনচিনে ব্যথা, বমি ভাবের মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। প্রথমেই চিকিৎসা শুরু হলে হৃদরোগের (Heart Disease) বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply