India China Relation: ভারতের উপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার! সার, দুর্লভ খনিজ রফতানির আশ্বাস চিনের

india china relation bezing lifts export curbs ready to supply fertilizer rare earths

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতের কথা শুনতে চলেছে চিন (India China Relation)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনে ভয় ধরিয়ে হিন্দি-চিনি সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে এক বিরাট পদক্ষেপ করতে চলেছে ভারত। সোমবার দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে তিনটি জিনিসের রফতানি ফের শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। ভারতকে চিন জানিয়ে দিয়েছে, তারা এদেশের উপর থেকে সার, রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট ও খনিজ দুষ্প্রাপ্য ধাতু এবং সুড়ঙ্গ খোঁড়ার মেশিন রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।

ভারতের পক্ষে সুবিধা

ভারতের কৃষিক্ষেত্রে ইউরিয়া কিংবা ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি)-এর মতো সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চিন রফতানি বন্ধ করায় এগুলির জোগানে টান পড়ছিল। বাড়ছিল সারের দাম। অন্য দিকে, টানেল বোরিং মেশিনের পর্যাপ্ত জোগান না-থাকায় থমকে যাচ্ছিল নির্মাণকাজ। ইলেকট্রনিক গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই খনিজের জন্য চিনের উপর নির্ভরশীল। চিন নিরাপত্তাগত কারণ দেখিয়ে ভারতে এই দুষ্প্রাপ্য খনিজ রফতানির বিষয়েও বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল। ফলে অসুবিধায় পড়েছিলেন গাড়িনির্মাতারা। এবার তা উঠে গেলে সুবিধা হবে দেশের কৃষক তথা শিল্প-উদ্যোক্তাদের।

কেন চিনের এই সিদ্ধান্ত 

কেন্দ্রের একটি সূত্রের খর, গত মাসে চিন (India China Relation)সফরে গিয়ে বহুবিধ এই অসুবিধার কথা সে দেশের বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। ওই সূত্রের দাবি, দুই বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শুল্কের প্রসঙ্গ ওঠে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য ইতিমধ্যেই ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। চিনও রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি করে থাকে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রেখে দিলে চিনের উপরও ট্রাম্প শুল্ক চাপাতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এই বিষয়ে আগে থেকেই সজাগ থাকতে চাইছে চিন। সে কারণেই তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েন মুছে ফেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের আর্জি মানল চিন

চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই বর্তমানে দুদিনের সফরে নয়াদিল্লিতে রয়েছেন। সোমবার তাঁদের মধ্যে আলোচনায় ই আশ্বস্ত করেছেন জয়শঙ্করকে। তিনি জানান, ভারতের আর্জি অনুযায়ী বেজিং কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পদক্ষেপ শুরু করেছে। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী জাহাজে উঠতে শুরু করছে। এর আগে ভারত এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল। বিশেষত সার রফতানিতে নিষেধাজ্ঞায় রবি শস্যের মরশুমে ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেটের সরবরাহে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এমনকী সুড়ঙ্গ খোঁড়ার মেশিন আসা বন্ধ করে দেওয়াতেও দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে যেসব বিদেশি কোম্পানি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার মেশিন তৈরি করতে চিনা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে।

ভারত-চিন স্থায়ী সম্পর্ক

এশিয়ার দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে মজবুত করা উচিত, সে কথা জানিয়েছেন জয়শঙ্করও। সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী চিন প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের (ভারত এবং চিন) সম্পর্ক অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই সব পিছনে ফেলে আমরা সামনে এগোতে চাই।” নয়াদিল্লিতে চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জয়শঙ্করের সংযোজন, আমাদের বৈঠকের পর ভারত এবং চিনের মধ্যে একটি স্থায়ী, সমঝোতামূলক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।”

ভারত-চিন সীমান্ত নিয়ে আলোচনা

দু’দিনের সফরে মঙ্গলবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভালের সঙ্গেও বৈঠকে বসেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। ওই বৈঠকে মূলত ভারত-চিন সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। তার আগে সোমবার সন্ধ্যার বৈঠকে চিনা বিদেশমন্ত্রীকে জয়শঙ্কর বলেন, “এটি (সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের সম্পর্কের যে কোনও ইতিবাচক অগ্রগতির ভিত্তিই হল সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা। তাই সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

ডোভালের সঙ্গে বৈঠক

মঙ্গলবার চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে সীমান্ত ইস্যুতে আলোচনা করলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সেই সময় ডোভাল বললেন, গত অক্টোবরে সামরিক অচলাবস্থা শেষ হওয়ার পর থেকে ভারত ও চিনের সীমান্তে যে শান্তি ও স্থিতাবস্থা দেখা গিয়েছে, তা থেকে উপকৃত হয়েছে উভয় দেশই। এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। উল্লেখ্য, গতবছর শেষের দিকে লাদাখের ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে টহল দিতে শুরু কর। প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর ফের এই টহলদারি শুরু হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালের সংঘাতের আগে যে অবস্থান পর্যন্ত ভারতীয় সেনা টহল দিত, এখনও সেখান পর্যন্তই টহল দিতে শুরু করেছে তারা। লাদাখের ডেপস্যাং এবং ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা প্রত্যাহার হয় ২০২৪ সালের দিওয়ালির আগেই। এবার নতুন করে সম্পর্কের সমীকরণ তৈরির পালা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share