Malaria in Winter: একমাসে আক্রান্ত ১৫০! শীতেও রাজ্যে দাপট ম্যালেরিয়ার, প্রশাসনের গাফিলতিই দায়ী, দাবি বিশেষজ্ঞদের

malaria in winter season west bengal 150 cases one month rising reasons experts blame administrative lapses

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

দরজায় শীত কড়া নাড়লেও মশার দাপট চলছেই। তাই ডিসেম্বরেও রাজ্যবাসীর মশাবাহিত রোগ থেকে রেহাই নেই। এমনটাই খবর রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসনের অন্দরে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের একাধিক জেলায় বছরভর ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো উদ্বেগজনক। শীতের মরশুমে মশা বাহিত রোগের ঝুঁকি কিছুটা কমবে বলেই আশা করেছিলেন চিকিৎসক মহল। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও রাজ্যের একাধিক জায়গায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল।

কী বলছে স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য?

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে নতুন করে প্রায় দেড়শো জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে‌। উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং নদিয়ার মতো একাধিক জেলায় ম্যালেরিয়ার দাপট রয়েছে। তবে কলকাতার শোভাবাজার, গিরিশ পার্ক, যাদবপুর, টালিগঞ্জের মতো এলাকায় নভেম্বর মাস জুড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক ছিল। এই এলাকা থেকেই গত এক মাসে প্রায় ৬০ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন।

কেন ডিসেম্বরেও মশাবাহিত রোগের দাপট অব্যহত?

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, মশাবাহিত রোগ মূলত বর্ষাকালেই হয়। সেই হিসাব মতো সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর এই দুই মাস মশাবাহিত রোগের দাপট রাজ্যে বেশি থাকে। বর্ষায় জমা জল মশার আতুর ঘর। তাই এই সময়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। কিন্তু চলতি বছরে শীতের মরসুমেও মশাবাহিত রোগের দাপট চলছে। বিশেষজ্ঞ মহল অপরিচ্ছন্ন পরিবেশকেই এর জন্য দায়ী করছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় অপরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয় না। পার্ক, পুকুর সংলগ্ন এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। আগাছা পরিষ্কার হয় না। এর ফলে মশার বংশবিস্তার সহজ হচ্ছে। তাই শীত পড়লেও মশাবাহিত রোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাচ্ছে না।

কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন?

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া রুখতে প্রশাসনের সক্রিয়তার পাশপাশি জনসচেতনতা জরুরি। তাঁরা জানাচ্ছেন, এলাকার পরিচ্ছন্নতার পাশপাশি বাড়ি ও আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে। ছাদে বা বাগানে জল জমতে দেওয়া যাবে না। অনেকেই ছাদে টবে গাছ রাখেন।‌ বাগান করেন। বিশেষত কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় ছাদে বাগান‌ তৈরির রেওয়াজ বাড়ছে। কিন্তু সেই বাগানে জল জমছে কিনা সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। পাশপাশি প্রশাসনের সক্রিয়তা প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের পরামর্শ, এলাকায় পুকুর কিংবা পার্ক থাকলে প্রতি সপ্তাহে নিয়ম মাফিক, তার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজরদারি জরুরি। আগাছা পরিষ্কার করা, পুকুরের জল যাতে পরিষ্কার থাকে, সেদিকে নজর রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। ম্যালেরিয়া রোগ সম্পর্কেও সচেতনতা প্রসার জরুরি। তাঁরা জানাচ্ছেন, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায় আক্রান্তকে দ্রুত চিহ্নিত করা। বারবার জ্বর আসা, মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো শারীরিক পরীক্ষা করানো দরকার। যাতে রোগ চিহ্নিত সহজ হয়। পরিবারের কেউ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হলে বাকিদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়া দরকার। রোগীকে মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে। অন্যদের ও কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে রোগ সংক্রমণ বেশি না ছড়ায়।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share