মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভবিষ্যতের যে কোনও ধরনের প্রযুক্তি-ভিত্তিক হামলা থেকে দেশের প্রতিটা প্রান্তকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে এখন থেকেই পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবার সেই যুগান্তকারী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এদিন দেশের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস (79th Independence Day) উপলক্ষে দিল্লির লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি (Modi At Red Fort)। সেখানেই তিনি জানান, আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটা কোনাকে সুরক্ষিত করতে জাতীয় সুরক্ষা ঢাল তৈরি করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় এই প্রকল্পের নাম ‘মিশন সুদর্শন চক্র’ (Mission Sudarshan Chakra)। দেশকে সুরক্ষা দেওয়ার, শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত পাশাপাশি শত্রুদের ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকবে এই মিশনের। পুরোপুরিভাবে আত্মনির্ভরভাবে তথা দেশীয় প্রযুক্তিতে এই মিশন কাজ করবে, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর।
কী এই ‘সুদর্শন চক্র মিশন’?
নরেন্দ্র মোদি (Modi Independence Day Speech) বলেছেন, “২০৩৫ সালের মধ্যে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে পুরোপুরি একটি নির্দিষ্ট সুরক্ষা কবচের মধ্যে আনা হবে। এর সেক্টরগুলির মধ্যে সামরিক সেক্টর যেমন রয়েছে তেমনই থাকবে হাসপাতাল, রেলও। নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পুরোপুরি সুরক্ষাকবচ দেওয়া হবে এই সব ক্ষেত্রকে।” প্রধানমন্ত্রী জানান, এটি ভগবান কৃষ্ণের সুদর্শন চক্র দ্বারা অনুপ্রাণিত। এটি হবে একটি অত্যাধুনিক দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর অস্ত্র ব্যবস্থা, যা শুধু শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধই নয়, প্রয়োজনে তাদের উপর নির্ভুল পাল্টা আঘাত হানতেও সক্ষম হবে। মহাভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “সকলেই জানেন, কীভাবে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সূর্যকে ঢেকে দিনকে অন্ধকার করে দিয়েছিলেন, যাতে অর্জুন তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে সক্ষম হন। একইভাবে, ভারতের ‘সুদর্শন চক্র’ও শত্রুদের প্রতিটি আক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করতে এবং তাদের চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তি দিয়ে প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হবে।”
প্রতিরক্ষায় দেশীয় ঢাল ও বর্ম
প্রধানমন্ত্রী আরও স্পষ্ট করেছেন যে, এই উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত গবেষণা, উন্নয়ন এবং উৎপাদন ভারতেই করা হবে এবং এটি দেশের যুবকদের হাতেই প্রস্তুত করা হবে। এই ‘মিশন সুদর্শন চক্র’ বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, যেখানে আকাশপথ, স্থলপথ ও সমুদ্রপথ— তিন ক্ষেত্রেই শত্রুর যেকোনও আক্রমণ মুহূর্তের মধ্যে শনাক্ত ও প্রতিহত করা সম্ভব হবে। শুধু সামরিক সুরক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না এই প্রযুক্তি; বরং দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে— যেমন বড় শহর, কৌশলগত শিল্পাঞ্চল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক স্থাপনা এবং সীমান্তবর্তী এলাকায়— এটি স্থাপন করা হবে, যাতে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়।
দেশীয় ইঞ্জিনের পক্ষে সওয়াল মোদির
তিনি আরও বলেন, “এই সুরক্ষা নিয়মিত বাড়ানো হবে। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাকে মজবুত, আধুনিক করার জন্য এই সিদ্ধান্ত।” ‘মিশন সুদর্শন চক্র’ যে প্রযুক্তিগত হামলা ঠেকানোর ঢাল হবে, তা একপ্রকার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মোদি। এই মিশনের জন্য রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং সবটাই ভারতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে, যুদ্ধবিমানের জন্য মেড ইন ইন্ডিয়া ইঞ্জিনের জন্য জোরালো সওয়াল করেন তিনি। জানান, এটাই সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “সম্মান পাওয়ার জন্য আত্মনির্ভর থাকা দরকার। অপারেশন সিঁদুরে দেখেছি আত্মনির্ভরতার ক্ষমতা। আত্মনির্ভর না হলে এত বড় সাফল্য আসত না।” প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ, আমেরিকা থেকে ইঞ্জিন আসতে দেরি হওয়ায় তেজসের উৎপাদন বিলম্বিত হচ্ছে। প্রসঙ্গত, তেজস মার্ক-১এ যুদ্ধবিমানের জন্য ইঞ্জিন সরবরাহ করছে মার্কিন সংস্থা জিই।
Leave a Reply