NRI: আমেরিকার প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য সুখবর, রেমিট্যান্স ট্যাক্স কমে হল ১ শতাংশ, কতটা লাভ হল ভারতের?

Nri us reduces remittance tax

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রবাসী ভারতীয়দের (NRI) জন্য সুখবর শোনাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। সে দেশের সেনেট ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। এই সংশোধনের ফলে রেমিট্যান্স (প্রবাসীরা যে অর্থ নিজের দেশে পাঠান)-এর (Remittance Tax) ওপর কর ৩.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। এই সুখবর শোনা গেল এমন একটা সময়, যখন বিশ্বজুড়ে প্রবাসী ভারতীয়রা ব্যাপক উদ্বেগে ছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, আন্তর্জাতিক অর্থ পাঠানোয় ভারী আর্থিক বোঝা চাপবে।

ব্যাপক উদ্বেগ (NRI)

জানা গিয়েছে, প্রথমে বিলটিতে ৫ শতাংশ কর প্রস্তাব করা হয়েছিল। হাউস সংস্করণে এটাই কমিয়ে করা হয়েছিল ৩.৫ শতাংশ। এই হারও ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কারণ প্রবাসী ভারতীয়রা ফি বছর ভারতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠান। রিজার্ভ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ভারতের মোট রেমিট্যান্সের ২৭.৭ শতাংশ এসেছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী, এখন থেকে আমেরিকাভিত্তিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্থানান্তর এবং সে দেশে ইস্যু করা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে করা লেনদেনগুলি রেমিট্যান্স কর থেকে ছাড় পাবে। এই পরিবর্তন প্রবাসী ভারতীয়দের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক পারিবারিক ও ব্যক্তিগত রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সুরক্ষা দেবে।

 যোগ্য রেমিট্যান্সের ওপর প্রযোজ্য

এই কর কেবলমাত্র (NRI) ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর পরে করা যোগ্য রেমিট্যান্সের ওপর প্রযোজ্য হবে। ফলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলির প্রস্তুতির জন্য হাতে যথেষ্ট সময় থাকবে। এই এক্সসাইজ করটি কেবল যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী, ছাত্রছাত্রী এবং গ্রিন কার্ডধারীরাও। ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন সিদ্ধান্তের ফলে বহু ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বাসিন্দার আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়তে পারে (Remittance Tax)।যদিও ১ শতাংশ করের হারটি সাধারণ মনে হতে পারে, তবে এর প্রভাব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এটি এখনও উচ্চমূল্যের লেনদেনগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন এনআরই অ্যাকাউন্টে জমা, সম্পত্তি বিনিয়োগ এবং কর্পোরেট পুনর্বাসন কর্মসূচি ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা-পরবর্তী আয়ও যদি করমুক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানান্তর না করা হয়, তবে এটি এই করের আওতায় পড়তে পারে।

স্বল্পমেয়াদে স্বস্তি

যদিও কমিয়ে দেওয়া করহার স্বল্পমেয়াদে স্বস্তি এনে দেয়, তবে অনেক এনআরআই এখন আরও স্পষ্ট নির্দেশনা ও সম্ভাব্য বৃহত্তর কর-ছাড়ের দাবি জানাচ্ছেন, বিশেষ করে পরিবারের জন্য পাঠানো প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে। আইনটির কার্যকর রূপ চূড়ান্ত হলে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো দেশের মধ্যে ভবিষ্যতের আর্থিক লেনদেনের গতিপথ নির্ধারণ করবে। এদিকে, প্রবাসী ভারতীয়রা গত অর্থবর্ষে দেশে ১৩৫.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। রিজার্ভ ব্যাংকের প্রকাশিত সাম্প্রতিক পেমেন্ট ব্যালেন্স ডেটা অনুযায়ী, প্রবাসী ভারতীয়দের পাঠানো ‘ব্যক্তিগত হস্তান্তর’ এর মাধ্যমে মোট প্রাপ্ত অর্থ আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি (NRI)।

প্রবাসী রেমিটেন্সের সবচেয়ে বড় প্রাপক ভারত

ভারত গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রবাসী রেমিটেন্সের সবচেয়ে বড় প্রাপক দেশ। ২০১৬-১৭ সালে যেখানে এই অঙ্ক ছিল ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে আট বছরের মধ্যে তা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি (Remittance Tax)। রিজার্ভ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ মার্চ শেষ হওয়া অর্থবর্ষে মোট কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ইনফ্লোর ১ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে রেমিটেন্সের অংশ ছিল ১০ শতাংশেরও বেশি। আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ গৌরী সেনগুপ্ত বলেন, “ক্রুড অয়েলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও রেমিটেন্সের জোরালো প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।” তিনি বলেন, “এর কারণ হল দক্ষ শ্রমশক্তির একটি ক্রমবর্ধমান অংশ উন্নত দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং সিঙ্গাপুরে অভিবাসন করছে। আরবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই তিনটি দেশ থেকে মোট রেমিটেন্সের প্রায় ৪৫ শতাংশ আসে,” তিনি বলেন, “তবে জিসিসি (GCC) দেশগুলির অংশ ক্রমেই কমে আসছে (NRI)।”

প্রবাসী আয়ের ওপর প্রভাব

তেলের দাম প্রায়ই গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (GCC) দেশগুলির কাছ থেকে প্রবাসী আয়ের ওপর প্রভাব ফেলে। ভারতের শীর্ষ ব্যাঙ্কের একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা গিয়েছে. ভারত এখনও ২০০ মার্কিন ডলার পাঠানোর জন্য বিশ্বের অন্যতম স্বল্প-ব্যয়বহুল দেশ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্টের অন্যান্য প্রধান উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে সফটওয়্যার পরিষেবা আয় এবং ব্যবসায়িক পরিষেবা আয়। প্রতিটিই গত অর্থবর্ষে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমা অতিক্রম করেছে (Remittance Tax)। এই তিনটি উৎস (প্রবাসী আয়, সফটওয়্যার পরিষেবা ও ব্যবসায়িক পরিষেবা) মিলে মোট কারেন্ট অ্যাকাউন্টের আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি অংশ জোগান দিয়েছে (NRI)।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share