মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চলতি সপ্তাহেই জাপান ও চিন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি মঙ্গলবার জানিয়েছন, ২৮ অগাস্ট সন্ধ্যায় জাপানের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ এই সফরে তাঁর সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার দেখা হবে ৷ জাপান সফর শেষে চিনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী ৷ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেরে প্রায় ২০ জন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা হবে প্রধানমন্ত্রীর ৷ চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে ৩১ অগাস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর তিয়ানজিনে সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন (Shanghai Cooperation Organization) শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মোদির অষ্টম জাপান সফর
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এর আগে সাতবার জাপানে গিয়েছেন মোদি৷ এটি তাঁর অষ্টম সফর৷ তবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বদলের পর এই প্রথমবার সূর্যোদয়ের দেশে যাবেন মোদি৷ দীর্ঘদিন দেশের বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে আসার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ইশিবা৷ তাঁর অনুরোধে ১৫তম ভারত-জাপান দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতেই এবার জাপান সফরে যাচ্ছেন মোদি ৷ ২৯ ও ৩০ অগাস্ট হবে এই বার্ষিক সম্মেলন৷ বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সাথে এটি প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রথম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। প্রায় ৭ বছরের মধ্যে এটিই তার প্রথম জাপান সফর। তিনি শেষবার ২০১৮ সালে বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।” তারপর থেকে, তিনি জাপান সফর করেছেন, তবে তা বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের জন্য। এই সফরটি সম্পূর্ণরূপে ভারত ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয়সূচির প্রতি নিবেদিত। ভারত-জাপান বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ।”
জাপানের সঙ্গে আলোচনা
ভারত ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার ব্যাপারে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে৷ প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা, ব্যবসা, অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দুটি দেশ একে অপরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে তা নিয়ে কথা বলবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ এর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন কয়েকটি বিষয় নিয়েও কথা বলবেন দুই নেতা৷
চিনের পথে মোদি
সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে চিনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ প্রধানমন্ত্রীর চিন সফর সমস্ত দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ৷ বাড়তি শুল্ক চাপিয়ে ভারতের উপর চাপ বাড়িয়েছে আমেরিকা৷ এই পরিস্থিতিতেই চিনে যাবেন মোদি ৷ সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-র শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চিনের শহর তিয়ানজেন শহরে যাচ্ছেন মোদি৷ কমপক্ষে ২০টি দেশের প্রধানরা এই সম্মেলনের অংশ নেবেন৷ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বেশ কয়েকটি দেশের প্রশাসনিক প্রধানরা এই বৈঠকের অংশ হবেন ৷
মোদির চিন সফরের গুরুত্ব
আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধের আবহে তো বটেই গালোয়ান সীমান্তে হওয়া ভারত ও চিন সংঘাতের পর এই প্রথম সে দেশের মাটিতে পা রাখবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷ তাছাড়া ঠিক যেদিন মোদির চিন সফরের কথা সরকাররে তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হল ঠিক সেদিনই বেজিংকে ‘হুমকি’ দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তিনি চাইলে চিনকে ধ্বংস করে ফেলতে পারেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প৷ এই ঘো৷ষণা আবশ্যিকভাবে মোদি-সফরের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে ৩১ অগাস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর চিনের তিয়ানজিনে এসসিও এর রাষ্ট্রপ্রধানদের ২৫তম বৈঠকে যোগদান করবেন মোদি। তিয়ানজিনে ৩১ অগাস্ট সন্ধ্যায় একটি স্বাগত ভোজের আয়োজন করা হয়েছে এবং ১ সেপ্টেম্বর প্রধান শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পুতিন-মোদি-জিনপিং এক মঞ্চে!
ভারত ২০১৭ সাল থেকে এসসিও-এর সদস্য দেশ হিসেবে অংশগ্রহণ করছে এবং ২০২২-২৩ সালে এসসিও রাষ্ট্রপ্রধান কাউন্সিলের সভাপতিত্বও পালন করেছে। এই সফর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কর্তৃক আয়োজিত হচ্ছে এসসিও শীর্ষ সম্মেলন। এই শীর্ষ সম্মেলনের সময়, সমস্ত এসসিও দেশ একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে পারে। এর পাশাপাশি, সমস্ত সদস্য দেশ এসসিও উন্নয়ন কৌশল অনুমোদন করবে এবং নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার পদক্ষেপগুলি নিয়েও আলোচনা করবে। এই ঘোষণাপত্রে আমেরিকার শুল্ক নীতির উপযুক্ত জবাব দেওয়া হতে পারে। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও।
Leave a Reply