Swarm Drone: অধিক-উচ্চতা থেকে হামলা! যৌথ উদ্যোগে সোয়ার্ম ড্রোন বানাচ্ছে পাক-চিন, রুখতে কী ভাবছে ভারত?

swarm drone by champion raises new challenge to india

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মৌমাছির মতো ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ। কোনওটার গায়ে বাঁধা বিস্ফোরক। কোনওটার কাজ আবার শুধুই গুপ্তচরবৃত্তি। এ রকম শয়ে শয়ে ড্রোন বানাচ্ছে চিন ও পাকিস্তান (China-Pakistan)। সূত্রের খবর, দুই দেশ যৌথভাবে অধিক-উচ্চতায় কার্যক্ষম আধুনিক সোয়ার্ম ড্রোন (Swarm Drone) বানাচ্ছে। যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, এই ড্রোনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এগুলো বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রের নাগালের বাইরে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এল-৭০ বন্দুকের কার্যকর সীমা যেখানে প্রায় ৩,৫০০ মিটার, সেখানে এই ড্রোনগুলো ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ মিটার বা তারও উপরে উড়তে সক্ষম। এর ফলে ভারতকে স্বল্পমেয়াদী ও ব্যয়বহুল মিসাইল নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে বাধ্য করা হবে, যেমন আকাশ, এমআরস্যাম, এবং এস-৪০০ সিস্টেম।

কৌশলগত পরিকল্পনা

অপারেশন সিঁদুরের পর গত ৮ এবং ৯ মে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাটের একাধিক জায়গায় ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন পাঠিয়ে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় পাক সেনা। সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হয়ে ওঠে ভারতীয় সেনার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে ড্রোনগুলিকে (Swarm Drone) চিহ্নিত করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। তাই এবার উচ্চ উচ্চতার ড্রোন বানানোর চেষ্টা চলছে। চিন-পাকিস্তান এই কৌশলগত উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো বিপুল সংখ্যক সস্তা, সমন্বিত ড্রোন দিয়ে ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ক্লান্ত করে ফেলা। একবার যদি ভারতের মিসাইল মজুদ শেষ হয়ে যায় তাহলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়বে। এরপর ক্রুজ মিসাইল এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে বড় আকারের হামলা চালানো হবে। এই পদ্ধতি ইতিহাসের সেই পুরনো যুদ্ধকৌশলকে মনে করিয়ে দেয়, যেখানে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে প্রথমে কম দামের বা সহজলভ্য অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালানো হতো।

চিনের ভূমিকা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর

চিন শুধু পাকিস্তানকে (China-Pakistan)  প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না, বরং অত্যাধুনিক ‘ড্রোন মাদারশিপ’ প্রযুক্তিও সরবরাহ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা একাধিক ড্রোন একসঙ্গে নিক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই গভীর সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলছে, বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীর ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর অঞ্চলে।

ভারতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব

অপারেশনাল চাপ: ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তিন স্তরের – বন্দুক, স্বল্প-পাল্লার মিসাইল এবং দীর্ঘ-পাল্লার মিসাইল। উচ্চ-উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ড্রোনগুলো বন্দুক স্তরকে অকার্যকর করে ফেলবে, ফলে অধিক ব্যয়বহুল মিসাইল ব্যবহারের প্রয়োজন হবে।

সম্পদের অপচয়: প্রথম পর্বে সস্তা ড্রোন ব্যবহারে ভারত তার মূল্যবান মিসাইল মজুদ খরচ করতে বাধ্য হবে। এর ফলে পরবর্তী বড় ধরনের হামলার সময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও অসামরিক স্থাপনাগুলোকে প্রতিরক্ষাহীন করে তুলতে পারে ।

কৌশলগত অস্থিরতা: দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক প্রেক্ষাপটে ড্রোন এবং মিসাইল প্রতিযোগিতা নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতা বাড়াতে পারে । যেকোনো সময় পরিস্থিতির ভুল ব্যাখ্যা বা সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

সোয়ার্ম ড্রোন কী

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, মূলত ঝাঁক বেঁধে হামলা চালানোয় সিদ্ধহস্ত সোয়ার্ম ড্রোন (Swarm Drone) পরিচালিত হয় কৃত্রিম মেধার (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) দ্বারা। একসঙ্গে উড়লেও তাদের একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধার কোনও আশঙ্কা নেই। যে কোনও পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে এই সোয়ার্ম ড্রোন। এগুলিতে থাকে অ্যাক্সিলোমিটার, জাইরোস্কোপ, ম্যাগনেটোমিটার, ক্যামেরা এবং অত্যাধুনিক সেন্সর, যা আশপাশের এলাকা চিহ্নিতকরণ (পড়ুন নেভিগেট) এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই ঝাঁকে ছোট-বড় মিলিয়ে বিভিন্ন আকারের মানববিহীন উড়ুক্কু যান থাকতে পারে। সর্বাধিক ১০ হাজারের বেশি ড্রোনের ঝাঁক পাঠিয়ে হামলা চালানোর নজিরও পৃথিবীতে রয়েছে। সোয়ার্ম ড্রোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, ঝাঁকের মধ্যে পর পর এগুলির বেশ কয়েকটিকে ধ্বংস করলেও বাকিগুলি ঠিক কাজ করতে থাকে। ঐতিহ্যবাহী সামরিক সরঞ্জামের তুলনায় এগুলি বেশ সস্তা।

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পথে ভারত

গত ৮ ও ৯ মে রাতে পাকিস্তানের (China-Pakistan) ড্রোন হামলা আটকাতে বেশ কয়েকটি হাতিয়ার ব্যবহার করেছে ভারতীয় ফৌজ। সূত্রের খবর, সেই তালিকায় রয়েছে রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ ছাড়াও এল-৭০ বন্দুক, জু-২৩এমএম অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট বন্দুক এবং শিল্কা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ড্রোন আটকাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্বল্প উচ্চতায় প্রতিপক্ষের ড্রোন, যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে নামানোর ক্ষেত্রে এল-৭০র জুড়ি মেলা ভার। এর নির্মাণকারী সংস্থা হল সুইডেনের বফোর্স। এটি প্রকৃতপক্ষে ৪০ এমএম ‘অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট’ বন্দুক। নিখুঁত ভাবে হামলা করার জন্য এই বন্দুকটিকে অত্যাধুনিক করেছে ভারতীয় সেনা। জু-২৩ এমএম হল সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে রাশিয়া) তৈরি ‘অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট’ বন্দুক। এর মারণক্ষমতা অনেক বেশি। খুব অল্প উচ্চতায় প্রতিপক্ষের কোনও ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এলেই সঙ্গে সঙ্গে তা চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারে এই হাতিয়ার। শিল্কার অপর নাম জেডএসইউ-২৩-৪। এটি একটি রেডার পরিচালিত ‘অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্‌ট’ বন্দুক। ড্রোন ধ্বংস করতে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। এ ছাড়াও পাক ড্রোন ওড়াতে ব্যবহার হয়েছে ‘আনম্যান্‌ড এরিয়াল সিস্টেম’। কিন্তু এবার তো চিনের সঙ্গে মিলে অধিক উচ্চতায় উড়তে পারে এমন সোয়ার্ম ড্রোন বানাচ্ছে পাকিস্তান। এই ড্রোন প্রতিরোধ করতে ভারতকে এখনই তার বিমান প্রতিরক্ষা কৌশল নতুনভাবে সাজাতে হবে, উন্নত ‘অ্যান্টি-ড্রোন’ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, এবং নিজস্ব ড্রোন যুদ্ধশক্তি জোরদার করতে হবে – যাতে আঞ্চলিক কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share