মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পদক্ষেপ করুক ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে এমনই অনুরোধ জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। একই সঙ্গে আলাস্কায় ইউক্রেনের অুনপস্থিতিতে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সমালোচনাও করলেন তিনি। অন্যদিকে, টানা তিন ঘণ্টা পর আলাস্কায় শেষ হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Trump-Putin Meet) বৈঠক। তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেল না। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বৈঠককে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেছেন। ফের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠকে একমত হওয়ার চেষ্টা
আলাস্কায় বৈঠকের পরে ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, ‘ভাল অগ্রগতি’ হয়েছে। শান্তিচুক্তি প্রসঙ্গে কথা বলতে হবে ইউক্রেন ও ন্যাটো সদস্যদের সঙ্গে। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “বহু বিষয়েই আমরা একমত হয়েছি। তবে সবচেয়ে বেশি যে দুই বিষয়ে আমরা নজর রেখেছিলাম, তার সমাধান মেলেনি। কিন্তু কিছুটা এগনো গিয়েছে। বলা যায়, ততক্ষণ চুক্তি হবে না, যতক্ষণ আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছাই। তবে কয়েকটা বিষয় বাকি আছে। তার মধ্যে কিছু অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটাই। আর তার সমাধান হওয়ার খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেটা এখনও করতে পারিনি। আমরা আশাবাদী সেই সমাধানেও আমরা খুব দ্রুত পৌঁছোতে পারব।”
সংঘাত শুরুর বিষয়গুলিকেই আগে দূরে সরাতে হবে
আর বৈঠকের পর পুতিনের বক্তব্য, “যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সংঘাত শুরুর বিষয়গুলিকেই আগে দূরে সরাতে হবে।” সেই সঙ্গে তাঁর বার্তা, “আমেরিকা ও রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করবে।” যুদ্ধবিরতির জন্য ‘উদ্যোগী’ ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান পুতিন। ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ‘শর্ত’ হিসাবে ‘ভূমি বিনিময়’ (ল্যান্ড সোয়াপিং)-এর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল মস্কো। পুতিনের বক্তব্য, শান্তিপ্রক্রিয়ায় ইউক্রেনবাসী বা রাশিয়াবাসী কেউই বাধা সৃষ্টি করবে না। শুক্রবারের বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে দাবি করেছেন তিনি। আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা হয়েছে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রসঙ্গেও।
সমাধানে পৌঁছোতে অন্তত আরও একটি বৈঠক
শুক্রবারের বৈঠকের পরে শান্তি নিয়ে স্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে পৌঁছোতে অন্তত আরও একটি বৈঠক করবেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন দু’জনে। এই বৈঠকের আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, একটি বৈঠকে স্থায়ী বা চূড়ান্ত সমাধান হবে না। দ্বিতীয় বৈঠক হবে। এবং সেটিই হবে ‘আসল গুরুত্বপূর্ণ’। ট্রাম্পের উদ্দেশে পুতিনের বার্তা, দ্বিতীয় সেই সাক্ষাৎ হতে পারে মস্কোয়। ট্রাম্প হাসিমুখে উত্তর দেন, “মজার প্রস্তাব,” যদিও স্বীকার করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন। তবে তিনি দরজা খোলা রেখেছেন, বলেছেন,“যদি সেটা সম্ভব হয়।”
বৈঠকে না থাকতে পারায় হতাশ ইউক্রেন
তবে, আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা, পুতিনকে দেখে ট্রাম্পের হাততালি দেওয়া বা দুই রাষ্ট্রপ্রধানের এক গাড়িতে যাওয়া, রেড কার্পেটে স্বাগত জানানো দেখে ইউক্রেনবাসীদের মধ্যে খানিক হতাশা দেখা গিয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে আলাস্কার এই বৈঠকে আমন্ত্রিতই ছিলেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যথেষ্ট আপত্তি তুলেছে। বিবদমান দু’দেশের মধ্যে যখন যুদ্ধবিরতি নিয়েই আলোচনা, তখন একপক্ষকে অন্ধকারে রেখে কীসের সিদ্ধান্ত হবে? এই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে ভারতকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্ভব সব ধরনের অবদান রাখতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের উচিত আমাদের শান্তি প্রচেষ্টায় সমর্থন দেওয়া এবং আমাদের অবস্থান ভাগ করে নেওয়া… ইউক্রেনকে ঘিরে যে কোনও সিদ্ধান্ত আমাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই নেওয়া উচিত। আলাস্কার ওই বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা যেন ইউক্রেনের উপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়।”
ভারতকে অনুরোধ জেলনস্কির
ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। ভারতকে শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। জেলেনস্কি বলেন, “আমরা আশা করি, ভারত এই যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করবে, যাতে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সত্যিকার অর্থেই সুরক্ষিত হয়।” তিনি এটিকে “স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য লড়াই” বলে অভিহিত করেন। চলমান প্রায় চার বছরব্যাপী যুদ্ধে ভারত মস্কো ও কিয়েভ—উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। যার ফলে ভারত একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে, বলে মনে করে কূটনৈতিক মহল। বিশ্বমঞ্চে ভারতের বাড়তে থাকা অবস্থান ও রাশিয়া এবং পশ্চিম বিশ্বের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভারতকে একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরেছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি জেলেনস্কির আহ্বান একইসঙ্গে প্রতীকী ও কৌশলগত। একটি সার্বভৌম এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য ভারতকে “নৈতিক অংশীদার” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি।
Leave a Reply